Coronavirus in India

প্রাণী-দেহে প্রতিষেধক পরীক্ষা দেশেও

প্রতিষেধক নিয়ে গবেষণার পাশাপাশি করোনা সংক্রমিতদের মৃত্যুহার কমাতে সেপসিভ্যাক নামে একটি ওষুধকে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক।

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২০ ০৪:২৩
Share:

কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য চলছে নমুনা সংগ্রহ। বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: প্রেম সিংহ

আজ থেকে ইংল্যান্ডে শুরু হল মানবদেহে নোভেল করোনাভাইরাসের প্রতিষেধকের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ। এর আগে এমন প্রয়োগ হয়েছে তিনটি দেশে: আমেরিকা, চিন এবং জার্মানি।

Advertisement

সব মিলিয়ে গোটা পৃথিবীতে এই মুহূর্তে করোনা প্রতিষেধক তৈরির অন্তত ১৫০টি প্রকল্প চালু রয়েছে। যার মধ্যে পাঁচটি মানব দেহে প্রয়োগের পর্যায়ে রয়েছে। এদের মধ্যে ইংল্যান্ডে প্রতিষেধক তৈরির প্রশ্নে সবচেয়ে এগিয়ে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। আজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ১৮ থেকে ৫৫ বছরের ৫১০ জন স্বেচ্ছাসেবকের উপরে ওই প্রতিষেধকের প্রথম ডোজ় প্রয়োগ করা হয়। প্রকল্পটির রিসার্চ ডিরেক্টর সারা গিলবার্ট দাবি করেছেন, তাঁদের প্রয়োগ যে সফল হতে চলেছে সে বিষয়ে তাঁরা অন্তত ৮০ শতাংশ নিশ্চিত। গত ১৬ মার্চ চিনের অ্যাকাডেমি অব মিলিটারি মেডিক্যাল সায়েন্স হংকং-এর একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়ে সে দেশে প্রথম মানব শরীরে ওই করোনা প্রতিষেধক প্রয়োগ করেছিল। একই দিনে আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স সংস্থাও মানব শরীরে প্রথম করোনা প্রতিষেধকের প্রয়োগ করে। ৬ এপ্রিল আমেরিকার সান ডিয়েগোর একটি বেসরকারি গবেষণা সংস্থাও মানবদেহে ওই প্রতিষেধকের প্রয়োগ করেছে।

ভারতে কী অবস্থায় রয়েছে ওই প্রতিষেধকের গবেষণা? কেন্দ্র জানিয়েছে, করোনার ভ্যাকসিন তৈরির উদ্দেশ্যে জৈবপ্রযুক্তি দফতরের কাছে ৫০০ প্রস্তাব জমা পড়েছিল। যার মধ্যে ১৬টি সংস্থাকে এ জন্য অর্থ সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রতিষেধক তৈরি করার প্রশ্নে সব চেয়ে বড় সমস্যা হল ভাইরাসের মিউটেশন বা চরিত্রগত পরিবর্তন। কারণ, সেই পরিবর্তনের ফলে প্রতিষেধক কার্যকর থাকে না। আশার ব্যাপার, ভারতে পাওয়া তিন ধরনের নোভেল করোনাভাইরাসের মিউটেশন বা পরিবর্তনের হার খুবই কম বলে দাবি করেছেন ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চের বিজ্ঞানী রমন গঙ্গাখেদকর। তিনি জানান, তিন ধরনের মধ্যে যে ভাইরাসের স্ট্রেনটি ভারতে বেশি পাওয়া যাবে তার ভিত্তিতে প্রতিষেধক তৈরি হবে। কেন্দ্র জানিয়েছে, ভারতে একাধিক সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা বিদেশি সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়ে প্রতিষেধক তৈরির কাজ শুরু করে দিয়েছে। তার মধ্যে বেশ কিছু সংস্থা প্রথম ধাপে অর্থাৎ প্রাণী দেহে প্রয়োগের পর্যায়ে রয়েছে। জৈবপ্রযুক্তি মন্ত্রকের সচিব রেণু স্বরূপ জানিয়েছেন, পরবর্তী ধাপে যাওয়ার প্রশ্নে ছাড়পত্র পেতে কয়েক মাস সময় লাগবে। তাঁর মতে, সব মিলিয়ে ভারতকে নিজস্ব করোনা প্রতিষেধক পেতে প্রায় এক থেকে দেড় বছর অপেক্ষা করতে হবে।

Advertisement

আরও পড়ুন: সেপ্টেম্বরে কি মিলবে ভ্যাকসিন, ফাইনালে অক্সফোর্ড

প্রতিষেধক নিয়ে গবেষণার পাশাপাশি করোনা সংক্রমিতদের মৃত্যুহার কমাতে সেপসিভ্যাক নামে একটি ওষুধকে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। করোনা আক্রান্ত বয়স্কদের মৃত্যুহার কমাতে ওই ওষুধ প্রয়োগ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, গ্রাম নেগেটিভ সেপসিস ও কোভিড-১৯ আক্রান্তদের মধ্যে অনেকটাই একই ধাঁচের উপসর্গ লক্ষ্য করা গিয়েছে। সেপসিসের ক্ষেত্রে কোষে থাকা সাইটোকাইন প্রোটিনের অতি সক্রিয়তার ফলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ভারসাম্য বিগড়ে যায়। যার ফলে একাধিক অঙ্গ বিকল হয়ে পড়ে। সাইটোকাইনের ওই সক্রিয়তা কমাতে সেপসিভ্যাক ব্যবহার হয় থাকে। আইসিএমআরের গঙ্গাখেদকর জানান, বয়স্ক করোনা আক্রান্তদের মধ্যে সাইটোকাইনের অতি সক্রিয়তায় একাধিক অঙ্গ বিকল হয়ে পড়তে দেখা গিয়েছে। উভয় ক্ষেত্রে উপসর্গ অনেকটাই এক ধাঁচের হওয়ায় করোনা রোগীদের জন্য সেপসিভ্যাক ওষুধটি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আইসিএমআরের আশা, এতে করোনা আক্রান্তদের সাইটোকাইনের অতিসক্রিয়তা কমবে, মানব শরীরে বিশেষ ধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হবে। ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়া (ডিসিজিআই) ওই ওষুধটিকে ছাড়পত্র দেওয়ার পরে হাসপাতালে ভর্তি করোনা রোগীদের বেছে বেছে ওষুধ প্রয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওষুধটি নিরাপদ ও সম্পূর্ণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের যুগ্মসচিব লব আগরওয়াল বলেন, ‘‘আমরা আশা করছি এর ফলে রোগীদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে, মৃত্যুহার কমবে।’’

আরও পড়ুন: তাড়াহুড়োর প্রতিষেধকে চিন্তা বিস্তর

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement