ছবি: রয়টার্স।
চটজলদি বাজি মারতে গিয়ে স্পুটনিক প্রতিষেধক নিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে রাশিয়াকে। তাই মস্কোর প্রায় চল্লিশ হাজার মানুষের উপরে আগামী ছ’মাস ধরে ওই টিকার তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভ্লাদিমির পুতিনের প্রশাসন। একই সঙ্গে ওই প্রতিষেধকের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হবে আরও পাঁচটি দেশে। এখনও সেই দেশগুলির নাম জানায়নি রাশিয়া।
প্রশ্ন অবশ্য উঠেছে, এই দেশগুলির তালিকায় কি ভারতও রয়েছে? বিরোধীদের একাংশের অভিযোগ, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কোভিশিল্ড’-এর আগেই রাশিয়ার প্রতিষেধক ‘স্পুটনিক’ (‘স্পুটনিক-ভি’, মতভেদে ‘স্পুটনিক-৫’) যাতে ভারতে চালু হয়ে যায়, তার জন্য চাপ দিচ্ছে পুতিনের সরকার। এ দেশে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত নিকোলাই কুদাশেভ নিজে চলতি সপ্তাহে ভারত সরকারের মুখ্য বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা কে বিজয়রাঘবনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেই কারণেই অনেকের চিন্তা, জরুরি পরিস্থিতির কথা ভেবে রেমডেসিভিয়ার ওষুধকে যে ভাবে পরীক্ষা ছাড়াই করোনার চিকিৎসায় ব্যবহার করা শুরু হয়ে গিয়েছে, সে ভাবেই কি রাশিয়ার টিকাকে এ দেশে দ্রুত ছাড়পত্র দেওয়া হতে পারে? অর্থাৎ সব ধাপ মেনে অক্সফোর্ডের টিকার পরীক্ষা চললেও শেষমেশ কি তাকে টেক্কা দেবে স্পুটনিক?
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক এ নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ। সূত্রের মতে, এই মুহূর্তে অক্সফোর্ডের টিকাই বাজারে আসার লড়াইয়ে এগিয়ে রয়েছে। তাদের টপকে বাজার ধরতে চাইছে রাশিয়া। সেই কারণেই গত ১১ অগস্ট স্পুটনিক মহাকাশযানের নামে ওই প্রতিষেধক আবিষ্কারের ঘোষণা করে দেন পুতিন। কিন্তু মানবদেহে রুশ টিকার তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা যথাযথ ভাবে না-হওয়ায় ভারত-সহ বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা এখনও স্পুটনিকের কার্যকারিতা নিয়ে সন্দিহান।
আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায় ৭৫ হাজার নতুন সংক্রমণ, মোট মৃত্যু ৬০ হাজার ছাড়াল
আরও পড়ুন: মহরমের মিছিলে সায় দিল না সুপ্রিম কোর্ট
বিশেষজ্ঞদের মতে, গোড়া থেকেই ভারতের ১৩০ কোটি জনসংখ্যার বিরাট বাজার ধরতে চাইছে রাশিয়া। তাই টিকা আবিষ্কারের পরেই রাশিয়ার পক্ষ থেকে সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তির আগ্রহ প্রকাশ করা হয়। প্রতিষেধক সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ কমিটির এক সদস্যের মতে, টিকা উৎপাদনের ক্ষেত্রে দেশীয় যে কোনও সংস্থার সঙ্গে বিদেশি সংস্থা হাত মেলাতেই পারে। কিন্তু বিদেশি টিকার যথাযথ পরীক্ষা না-করে কোনও ভাবেই সেটি ব্যবহারের ছাড়পত্র দেওয়া যায় না। কারণ, কোনও প্রতিষেধক একটি দেশের জনগোষ্ঠীতে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়তে পারলে তা যে অন্য দেশেও সফল হবে, এমন কোনও নিশ্চয়তা নেই।
নীতি আয়োগের সদস্য (স্বাস্থ্য) বিনোদকুমার পলের মতে, এই কারণেই সংশ্লিষ্ট দেশের মানুষের উপরে বিদেশি প্রতিষেধকের দ্বিতীয়-তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা করা প্রয়োজন। এমসের ডিরেক্টর রণদীপ গুলেরিয়ার বক্তব্য, রাশিয়ার টিকা নিয়ে একাধিক প্রশ্নচিহ্ন রয়েছে। গবেষণার বিভিন্ন ধাপের তথ্যেও অসঙ্গতি রয়েছে। সর্বোপরি ওই টিকা নিরাপদ কি না, তা-ও দেখার দরকার রয়েছে। এরই জের টেনে বিরোধীদের অনেকের আশঙ্কা, এখন রাশিয়া নিজের দেশে ছ’মাস ধরে তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা চালানোর কথা বলছে। কিন্তু পরবর্তী কালে ‘জরুরি প্রয়োজনের’ কথা বলে ভারত-সহ বিভিন্ন দেশে সেই পরীক্ষাই তড়িঘড়ি চালিয়ে টিকা চালু করে দেওয়া হবে না তো?
গোড়া থেকেই সরকারের প্রতিষেধক-নীতি নিয়ে সরব কংগ্রেস। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এ বছরের শেষে বা নতুন বছরের শুরুতে প্রতিষেধক চলে আসার মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে। ফলে বছর শেষ হতে যেখানে চার মাসও নেই, সেখানে প্রতিষেধকের ব্যবহার, উৎপাদন ও সুষ্ঠু বণ্টন নিয়ে সরকারের প্রকাশ্যে কোনও পদক্ষেপ না-করা নিয়ে আজ ফের প্রশ্ন তুলেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী। তাঁর কথায়, ‘‘এত দিনে একটি স্বচ্ছ ও সার্বিক নীতি আসা উচিত ছিল। কিন্তু তার লক্ষণ নেই। কেন্দ্রের প্রস্তুতির এই অভাব চিন্তাজনক।’’