দেশের সমস্ত রাজ্যেই অক্সিজেনে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। —ফাইল চিত্র।
প্রাথমিক বিপর্যয় কেটে সবে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছিল পরিস্থিতি। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের পড়া তখনও শুধুমাত্র সম্ভাবনায় আটকে ছিল। সেই সময়ই গত বছর নভেম্বর মাসে আগাম সতর্কতামূলক ভাবে পর্যাপ্ত অক্সিজেনের বন্দোবস্ত করে রাখতে কেন্দ্রকে পরামর্শ দিয়েছিল স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি। হাসপাতালগুলিতে শয্যার সংখ্যা বাড়াতে বলা হয়েছিল। তার পরেও সময় থাকতে কেন্দ্রীয় সরকার কোনও পদক্ষেপ করেনি বলে অভিযোগ সামনে এল। করোনোর দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় দেশে সংক্রমণ ও মৃত্যু যখন লাগামছাড়া ভাবে বেড়ে চলেছে, সেই সময় ৫ মাস আগে জমা পড়া সংসদীয় কমিটির ওই রিপোর্টে অস্বস্তি বাড়ল কেন্দ্রীয় সরকারের।
করোনার প্রথম ধাক্কা সামাল দেওয়ার পর গত বছর নভেম্বরে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠক ডাকা হয়। তাতে নেতৃত্ব দেন সমাজবাদী পার্টির নেতা রামগোপাল যাদব। সেখানে অক্সিজেন সিলিন্ডারের মূল্য হ্রাসের পক্ষে সওয়াল করেন তিনি। যুক্তি দেন, এতে অক্সিজেনের জোগান যেমন বাড়বে, তেমনই কোভিডের চিকিৎসা বাবদ খরচ মানুষের আয়ত্তের মধ্যে চলে আসবে। এ ব্যাপারে ওষুধপত্রের দাম বেঁধে দেওয়ার জন্য নিযুক্ত জাতীয় কমিটিকে (এনপিপিএ) প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতে কেন্দ্রকে আর্জি জানান তিনি।
শুধু তাই নয়, রামগোপালের নেতৃত্বাধীন কমিটির রিপোর্টে আরও বলা হয় যে, হাসপাতালগুলির চাহিদা অনুসারে যাতে পর্যাপ্ত জোগান দেওয়া যায়, তার জন্য অক্সিজেনের উৎপাদন বাড়াতে হবে। যে ভাবে সংক্রমণের গতি ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে, সরকারি হাসপাতালগুলির শয্যাসংখ্যা সেখানে অনুকূল নয়। ভেন্টিলেটরের সংখ্যা এবং পরিষেবাও তথৈবচ। তাতে আগামী দিনে অতিমারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সরকারকে বেগ পেতে হতে পারে। তাই আগে ভাগে সতর্ক হওয়া উচিত। তার জন্য স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বাড়ানোর জন্যও সুপারিশ করে ওই কমিটি। প্রয়োজনে স্বাস্থ্য পরিষেবার বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে বলে জানায় ওই কমিটি।
কিন্তু কমিটির রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরেও, এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকার কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ বিরোধীদের। যদিও তার এক মাস আগে, ১৬ অক্টোবর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতরের সচিব নিজেই জানিয়েছিলেন যে, কেন্দ্রের তরফে অক্সিজেনের দাম নির্ধারণের আনুরোধ জানানো হয়েছে এনপিপিএ-কে। কিন্তু সেই অনুরোধ বাস্তবায়িত না হওয়াতেই সারা দেশে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিয়েছে বলে মত বিরোধীদের।
সরকারি হিসেব অনুযায়ী, দেশে প্রতি দিন মোট ৬ হাজার ৯০০ মেট্রিক টন অক্সিজেন উৎপন্ন করা হয়। এর মধ্যে চিকিৎসা ক্ষেত্রে গত বছর সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময় দৈনিক সর্বোচ্চ ৩ হাজার মেট্রিক টন অক্সিজেন খরচ হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে দেশে দৈনিক সংক্রমণ প্রায় সাড়ে ৩ হাজারের আশেপাশে। তাতেই অক্সিজেনের চাহিদা আগের চেয়ে বেড়ে গিয়েছে, ঠিক যেমনটা আশঙ্কা করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। তাই আগাম সতর্কতা পেয়েও কেন ঢিলেমি দেওয়া হল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।