ফাইল চিত্র।
রাজধানীর অন্তত ছ’টি হাসপাতালে অক্সিজেন শেষ হয়ে গিয়েছে বলে আজ দিল্লি হাই কোর্টকে জানাল অরবিন্দ কেজরীবালের সরকার। আর গত দু’দিনের মতোই অসন্তোষ প্রকাশ করে হাই কোর্টের বিচারপতি বিপিন সাঙ্ঘি এবং বিচারপতি রেখা পাল্লির বেঞ্চ বলল, ‘‘আমরা সবাই জানি, এই দেশ চালাচ্ছেন ভগবান।’’
এর আগেই দিল্লির রাজীব গাঁধী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, তাঁদের হাতে মাত্র তিন ঘণ্টার অক্সিজেন আছে। বিকেল পৌনে পাঁচটায় গুরুগ্রামের ফর্টিস হাসপাতালের টুইট, ‘‘আমাদের কাছে আর ৪৫ মিনিটের অক্সিজেন আছে। রাজনাথ সিংহ, অমিত শাহ, মনোহরলাল খট্টর, অশোক গহলৌত— আপনারা কিছু করুন।’’ দিল্লির প্রীত বিহার এলাকার মেট্রো হাসপাতালে বিকেলের পরে আইসিইউ বন্ধ হয়ে যায় অক্সিজেনের অভাবে। অক্সিজেন শেষ হওয়ায় দুপুরের পর থেকে নয়ডার প্রকাশ হাসপাতাল তাদের আইসিইউ-তে থাকা রোগীদের অন্য হাসপাতালে সরানো শুরু করে।
মরণাপন্ন রোগীর আত্মীয়েরা অক্সিজেনের খোঁজে দিল্লি চষে বেড়াচ্ছেন। বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ-তে শুয়ে থাকা ছেলের জন্য অক্সিজেনের খোঁজে বৃদ্ধা মা হাতে-পায়ে ধরছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। দিল্লি ও সংলগ্ন এলাকায় অক্সিজেনের অভাব আজ কার্যত চরমে পৌঁছয়। অথচ দিল্লি হাই কোর্টে দিল্লি সরকারের উদ্দেশে কেন্দ্রের বক্তব্য, ‘‘অযথা চাঞ্চল্য ছড়াবেন না।’’ অক্সিজেনের অভাব নিয়ে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল সরোজ সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল ও শান্তি মুকুন্দ হাসপাতালও। বিচারপতি সাঙ্ঘি বলেন, ‘‘রাস্তার সাধারণ মানুষের কথা বাদ দিন। আমিও চাইলে সহজে বেড পাব না।’’ হাই কোর্টের নির্দেশে যদিও দিল্লির জন্য বরাদ্দ বাড়িয়ে আজ ৭০০ টন অক্সিজেন দিয়েছে কেন্দ্র।
অক্সিজেনের সঙ্কট নিয়ে রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলি বিপদ সঙ্কেত দেওয়া শুরু করেছিল সকাল থেকেই। অবশেষে অক্সিজেনের ঘাটতি মেটানো নিয়ে বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বঙ্গ সফর বাতিল করে কালও বৈঠক করবেন তিনি। আজ মোদী গোটা দেশে অক্সিজেনের উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়ানোয় জোর দেওয়ার পাশাপাশি কালোবাজারি রুখতে রাজ্যগুলিকে আর্জি জানান। আমলারা প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, দ্রুত ১৬২টি অক্সিজেন প্লান্ট তৈরি নিয়ে রাজ্যগুলির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। যদিও বিরোধীদের বক্তব্য, এখন যখন শিরে সংক্রান্তি, তখন এ সব দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্ত কার্যত অর্থহীন। গত দেড় মাসে করোনা দ্রুতগতিতে বেড়ে চললেও কেন এত দেরিতে সক্রিয় হলেন প্রধানমন্ত্রী?
ভোট নিয়ে ব্যস্ত থাকায় নিয়মিত কটাক্ষের মুখে পড়ছে মোদী-বাহিনী। অমিত শাহের সাহায্য চেয়ে গুরুগ্রামের ফর্টিস হাসপাতালের টুইটের জবাবে জ্যোতি গুপ্ত নামে এক নেট-নাগরিক লেখেন, ‘‘অমিত শাহ পশ্চিমবঙ্গে আজ তিনটি জনসভায় ব্যস্ত রয়েছেন। তা শেষ হলেই জবাব পাবেন।’’ কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালার অভিযোগ, প্রথম ধাক্কা থেকে শিক্ষাই নেয়নি সরকার।
অক্সিজেন নিয়ে রাজ্যগুলির মধ্যে টানাপড়েনও অব্যাহত। আজ সকালে দিল্লির অ্যাপোলো হাসপাতালের জন্য যাওয়া অক্সিজেনের ট্যাঙ্কার আটকে দেয় হরিয়ানা পুলিশ। কেন্দ্র ও হরিয়ানা সরকারের হস্তক্ষেপে তখনকার মতো সমস্যা মেটে। কোনও রাজ্যেই যাতে মেডিক্যাল অক্সিজেনের সরবরাহ না-আটকায়, সেই মর্মে দুপুরে একটি নির্দেশিকা জারি করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। কিন্তু তার পরেও আজ বিকেলে ফের হরিয়ানার ফরিদাবাদে দিল্লির আকাশ হাসপাতালের জন্য পাঠানো অক্সিজেনের ট্যাঙ্কার আটকে দেয় পুলিশ। অক্সিজেন জোগাড় করতে আইনি পদক্ষেপের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশা থেকে দিল্লিতে অক্সিজেন সিলিন্ডার উড়িয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কেজরীবাল। দিল্লিতে এত দিনেও অক্সিজেন প্লান্ট তৈরি না-হওয়ায় বিজেপি কটাক্ষ করেছে তাঁকে। কেন্দ্রের বিলম্বে বোধোদয় নিয়ে পাল্টা কটাক্ষ ফিরিয়ে দিয়েছে বিরোধী শিবির। তবে সঙ্কটের প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা ফের পরামর্শ দিয়েছেন যে, রোগীর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা একটি নির্দিষ্ট সীমার নিচে নামলেই তবেই যেন অক্সিজেন ব্যবহার করা হয়।