গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
ন্যূনতম সময়ে সকলের কাছে করোনার টিকা পৌঁছে দেওয়ার রূপরেখা তৈরি হয়ে গিয়েছে। গবেষকরা সবুজ সঙ্কেত দিলেই করোনা টিকার গণ উৎপাদন শুরু করে দেওয়া হবে। শনিবার লালকেল্লা থেকে স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে এমনটাই ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাতে দেশবাসী সাময়িক ভাবে স্বস্তি পেলেও, দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। রবিবার সকালে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ফের ৬০ হাজারের বেশি মানুষের শরীরে নোভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে কোভিডে সংক্রমিত হয়েছেন ৬৩ হাজার ৪৯০ জন। তাতে এখনও পর্যন্ত দেশে মোট করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৫ লক্ষ ৮৯ হাজার ৬৮২। গতকাল দেশে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হন ৬৫ হাজার ২ জন। দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যাবৃদ্ধির নিরিখে এখনও পর্যন্ত সেটাই সর্বোচ্চ।
তবে সামান্য হলেও কমেছে ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুর সংখ্যা। গতকাল যেখানে মৃতের সংখ্যা হাজার ছুঁইছুঁই ছিল (৯৯৬), এ দিন তা সাড়ে ন’শোর নীচে রয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানিয়েছে, করোনার প্রকোপে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৯৪৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। সবমিলিয়ে এখনও পর্যন্ত দেশে ৪৯ হাজার ৯৮০ জন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
আরও পড়ুন: রাজ্যে এক দিনে রেকর্ড আক্রান্ত, আইসিইউ শয্যা বাড়ল
প্রতি দিন যে সংখ্যক মানুষের পরীক্ষা হচ্ছে, তার মধ্যে যত শতাংশের কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ আসছে তাকে বলা হচ্ছে ‘পজিটিভিটি রেট’ বা সংক্রমণের হার। মঙ্গলবার থেকেই এই হার ন’শতাংশের নীচে। শুক্রবার তা কমে হয় ৭.৬১ শতাংশ। শনিবার আরও কমে গিয়ে ৭.৪৮ শতাংশ দাঁড়ায়। এ দিন তা ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সংক্রমণের হার ৮.৫০ শতাংশে এসে ঠেকেছে।
গত এক সপ্তাহ ধরে নিয়মিত ভাবে করোনা পরীক্ষা বাড়ছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় ৭ লক্ষ ৪৬ হাজার ৬০৮ জনের করোনা পরীক্ষা হয়েছে। তাতে সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অনেকে। দেশে এই মুহূর্তে দেশে মোট অ্যাক্টিভ কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা ৬ লক্ষ ৭৭ হাজার ৪৪৪ জন।
তবে সুস্থতার হার বৃদ্ধি পাওয়ায় খানিকটা হলেও স্বস্তি মিলেছে। দেশে করোনা আক্রান্ত ২৫ লক্ষ ৮৯ হাজার ৬৮২ জনের মধ্যে এখনও পর্যন্ত ১৮ লক্ষ ৬২ হাজার ২৫৮ জন রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। অর্থাৎ মোট আক্রান্তের ৭১.৯১ শতাংশই সেরে উঠেছেন। এ মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টাতেই ৫৩ হাজার ৩২২ জন করোনা রোগী ছাড়া পেয়েছেন। যদিও গতকাল এই সংখ্যাটা খানিকটা বেশি ছিল (৫৭,৩৮১)।
সংক্রমণ ও মৃত্যু, দুইয়ের নিরিখেই শুরু থেকে দেশের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে মহারাষ্ট্র। এখনও পর্যন্ত সেখানে মোট ৫ লক্ষ ৮৪ হাজার ৭৫৪ জন করোনা রোগীর হদিশ মিলেছে। যার মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১২ হাজার ২০ জন। মহারাষ্ট্রে এখনও পর্যন্ত ১৯ হাজার ৭৪৯ জন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩২২ জন করোনা রোগী প্রাণ হারিয়েছেন।
সংক্রমণের নিরিখে মহারাষ্ট্রের পরেই রয়েছে তামিলনাড়ু। সেখানে এখনও পর্যন্ত ৩ লক্ষ ৩২ হাজার ১০৫ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, যার মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৮৬০ জন। এখনও পর্যন্ত ৫ হাজার ৪৪১ জন করোনা রোগী প্রাণ হারিয়েছেন সেখানে। গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাণ হারিয়েছেন ১২৭ জন।
সংক্রমণের নিরিখে এর পর তৃতীয় চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্নাটক এবং রাজধানী দিল্লি। সেখানে এখনও পর্যন্ত যথাক্রমে ২ লক্ষ ৮১ হাজার ৮১৭, ২ লক্ষ ১৯ হাজার ৯২৬ এবং ১ লক্ষ ৫১ হাজার ৯২৮ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তবে মৃত্যুর নিরিখে এগিয়ে রয়েছে দিল্লি। সেখানে এখনও পর্যন্ত ৪ হাজার ১৮৮ জন করোনা রোগী প্রাণ হারিয়েছেন। কর্নাটকে প্রাণ হারিয়েছেন ৩ হাজার ৮৩১ জন। ২ হাজার ৫৬২ জন প্রাণ হারিয়েছেন অন্ধ্রপ্রদেশে।
সংক্রমণের নিরিখে এই মুহূর্তে দেশের মধ্যে সপ্তম স্থানে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। শনিবার সন্ধ্যায় রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর প্রকাশিত বুলেটিন অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত রাজ্যে নোভেল করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ লক্ষ ১৩ হাজার ৪৩২ জন, যার মধ্যে ৮৩ হাজার ৮৩৬ জন রোগীই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। অর্থাৎ মোট আক্রান্তের ৭৩.৯১ শতাংশ মানুষই সেরে উঠেছেন বাংলায়। করোনার প্রকোপে রাজ্যে এখনও পর্যন্ত ২ হাজার ৩৭৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
কোভিড সংক্রমণের বিশ্ব তালিকায় এই মুহূর্তে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ভারত। তালিকার শীর্ষে রয়েছে আমেরিকা। সেখানে এখনও পর্যন্ত ৫৩ লক্ষ ৬১ হাজার ১৬৫ জন নোভেল করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা ব্রাজিলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩৩ লক্ষ ১৭ হাজার ৯৬। মৃত্যু তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছে ভারত। এই তালিকায় শীর্ষে রয়েছে আমেরিকা (১ লক্ষ ৬৯ হাজার ৪৮১)। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ব্রাজিল (১ লক্ষ ৭ হাজার ২৩২)। মেক্সিকো (৫৬ হাজার ৫৪৩) রয়েছে তৃতীয় স্থানে।
আরও পড়ুন: রেড রোড থেকেই সোজা রাজভবনে মুখ্যমন্ত্রী
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)