গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
উৎসবের মরসুমে দেশ জুড়ে করোনা সংক্রমণ থেকে সেরে উঠার হার এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বাড়ল। গত কয়েক দিন ধরেই আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ কমছিল। বুধবারও সেই প্রবণতা বজায় রইল। তবে দেশ জুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৮০ লক্ষের কাছাকাছি পৌঁছেছে। সেই সঙ্গে গত ২৪ ঘণ্টায় কোভিড রোগীর মৃতের সংখ্যাও আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে।
এ দিন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক প্রকাশিত বুলেটিন অনুযায়ী, দেশে এখনও পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৭৯ লক্ষ ৯০ হাজার ৩২২। তবে এর মধ্যে ৭২ লক্ষ ৫৯ হাজার ৫০৯ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। ফলে এই মুহূর্তে গোটা দেশে সক্রিয় রোগীর ৬ লক্ষ ১০ হাজার ৮০৩।
স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৪৩ হাজার ৮৯৩ জন সংক্রমিত হয়েছেন। তবে করোনার সংক্রমণ ঘটলেও ওই সময়ের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৫৮ হাজার ৪৩৯ জন। পাশাপাশি, বেড়েছে সুস্থতার হারও। এ দিন তা দাঁড়িয়েছে ৯০.৮৫ শতাংশে।
আরও পড়ুন: কালীপুজোতেও হাইকোর্ট দেখাতে হবে কি বাঙালিকে
আরও পড়ুন: এক সপ্তাহ পর রাজ্যে নতুন আক্রান্ত ৪ হাজারের নীচে, বাড়ছে সুস্থতার হারও
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
সুস্থতার হার বাড়লেও দেশে করোনা সংক্রমণকে এখনও পুরোপুরি রোখা যাচ্ছে না। গত কালের থেকে কোভিড টেস্টের সংখ্যা কম হলেও এ দিন তা সামান্য বেড়েছে। প্রতি দিন যত সংখ্যকের কোভিড টেস্ট করা হয়, তার মধ্যে যত শতাংশের টেস্ট রিপোর্ট পজিটিভ, তাকেই পজিটিভিটি রেট বা সংক্রমণের হার বলে। এই হার যত নিম্নমুখী হবে, ততই স্বস্তিদায়ক। এ দিনের বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ১০ লক্ষ ৬৬ হাজার ৭৮৬ জনের টেস্ট করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪৩ হাজারের বেশি রিপোর্ট পজিটিভ আসায় সংক্রমণের হার বা পজিটিভিটি রেট দাঁড়িয়েছে ৪.১১ শতাংশে। মঙ্গলবার এই হার ছিল ৩.৮১ শতাংশে।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
সংক্রমণের হার বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যাও। এ দিন স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৫০৮ জন কোভিড রোগী মারা গিয়েছেন। মঙ্গলবার ৪৮৮ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছিল।
করোনায় আক্রান্তদের পরিসংখ্যানের নিরিখে বরাবরই বিশ্বে শীর্ষে রয়েছে আমেরিকা। সে দেশে এখনও পর্যন্ত ৮৭ লক্ষ ৭৭ হাজার ৩৮টি সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। আমেরিকায় ক্রমশই দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৪ হাজার ৬২৪ জন সংক্রমিত হয়েছেন। অন্য দিকে, এই তালিকায় ভারতের পরেই তৃতীয় স্থানে থাকা ব্রাজিলে ওই একই সময়ে আক্রান্ত হয়েছেন ২৯ হাজার ৭৮৭ জন। ব্রাজিলে এখনও পর্যন্ত ৫৪ লক্ষ ৩৯ হাজার ৬৪১ জন আক্রান্ত হয়েছেন।
এ দেশে আক্রান্তের নিরিখে মৃতের সংখ্যা ইউরোপীয় দেশগুলি বা আমেরিকায় তুলনায় বরাবরই কম। এখনও পর্যন্ত গোটা দেশে ১ লক্ষ ২০ হাজার ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। অন্য দিকে, আমেরিকায় ২ লক্ষ ২৬ হাজার ৬৯১ জন কোভিড রোগীর মৃত্যু হয়েছে। ব্রাজিলে এই সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে ১ লক্ষ ৫৭ হাজার ৯৪৬।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
সুস্থতার হার আশা জাগালেও দেশের মধ্যে মোট আক্রান্তের নিরিখে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে মহারাষ্ট্র (১৬ লক্ষ ৫৪ হাজার ২৮ জন), অন্ধ্রপ্রদেশ (৮ লক্ষ ১১ হাজার ৮২৫ জন), কর্নাটক (৮ লক্ষ ৯ হাজার ৬৩৮ জন), তামিলনাড়ু (৭ লক্ষ ১৪ হাজার ২৩৫ জন), উত্তরপ্রদেশ (৪ লক্ষ ৭৪ হাজার ৫৪ জন) এবং কেরল (৪ লক্ষ ২ হাজার ৬৭৪ জন)। পাশাপাশি, স্বস্তি দিচ্ছে না দিল্লি এবং পশ্চিমবঙ্গের পরিসংখ্যানও। দিল্লিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪ হাজার ৮৫৩টি রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। অন্য দিকে, এ রাজ্যে দুর্গা পুজোর পরের দিন অর্থাৎ গত কাল টানা ১ সপ্তাহ পর সংক্রমণ সামান্য কমলেও ২৪ ঘণ্টায় তা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৯৫৭-এ।
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)