প্রতীকী ছবি।
দেশ জুড়ে টিকাকরণের বিশাল কর্মকাণ্ড কী ভাবে ধাপে ধাপে কার্যকর করা হবে, তা আরও স্পষ্ট করল কেন্দ্রীয় সরকার। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, প্রাথমিক ভাবে করোনা-যোদ্ধা, কো-মর্বিড এবং পঞ্চাশোর্ধ্বদের টিকাকরণের পর দেশের অন্যান্য নাগরিককে টিকা দেওয়া হবে। এ কাজে সরকারের তরফে কোউইন (কোভিড ভ্যাকসিন ইন্টেলিজেন্স ওয়ার্ক) নামে একটি অ্যাপের মাধ্যমে যাবতীয় প্রক্রিয়ার গতিবিধি নজরে রাখা হবে।
কী ভাবে কাজ করবে এই অ্যাপ? কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে স্পষ্টই জানানো হয়েছে যে এখনও পর্যন্ত এই অ্যাপটি চালু করা হয়নি। ফলে গুগল প্লে-স্টোর থেকে এটি অন্যান্য অ্যাপের মতো ডাউনলোড করা যাবে না। তবে এই অ্যাপ সংক্রান্ত যাবতীয় খুঁটিনাটি নিয়ে একটি ধারণা দিয়েছে মন্ত্রক।
স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, কোউইন অ্যাপের মাধ্যমে এসএমএস, আধার এবং ডিজিলকারের মতো ব্যবস্থাপনার সাহায্যে গোটা টিকাকরণ প্রক্রিয়াটি কার্যকর করা হবে। টিকাকরণের প্রক্রিয়া নিয়ে দুর্নীতি ঠেকাতে আধার কার্ডের সাহায্য নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: ১৩ জানুয়ারি থেকে করোনা টিকাকরণ, জানাল স্বাস্থ্য মন্ত্রক
আরও পড়ুন: অনাবাসীদের জন্য পোস্টাল ব্যালটে ভোটদানে সায় দিল বিদেশ মন্ত্রক
টিকা নিতে ইচ্ছুকদের জন্য যাতে একটি ইউনিক আইডেন্টিটি নম্বর তৈরি করা যায়, তা নিয়েও চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার। ওই নম্বরের মাধ্যমে টিকা নেওয়া ব্যক্তির দেহে কোনও বিরূপ প্রতিক্রিয়া হচ্ছে কি না, তা-ও নজর রাখা সম্ভব হবে।
এক বার কোউইন অ্যাপ চালু হলে, এই অ্যাপের সাহায্যে টিকাকরণে জড়িত স্বাস্থ্যকর্মী এবং যিনি টিকা নিতে ইচ্ছুক— এই দু’জনের মোবাইলেই ১২টি ভাষায় একটি এসএমএস যাবে। টিকাকরণের প্রতিটি ধাপই তাতে স্পষ্ট করে উল্লেখিত থাকবে। টিকাকরণের পর তার শংসাপত্রটিও কোউইন অ্যাপের মাধ্যমে পাঠানো হবে। কিউআর বারকোড সম্বলিত ওই শংসাপত্রটি চাইলে সরকারের ক্লাউডবেসড স্টোরেজ অ্যাপ ডিজিলকারের মাধ্যমে সর্বদা মোবাইলে রাখা যাবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। যাতে ইচ্ছে মতো তা ডাউনলোড করা যায়। গোটা ব্যবস্থা নিয়ে যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর দিতে বছরের প্রতিদিন সব সময় তৈরি থাকবে একটি হেল্পলাইন নম্বর।
স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, পরীক্ষানিরীক্ষার স্তরে থাকা কোউইন অ্যাপে এই মুহূর্তে দেশের কেবলমাত্র ৭৫ লক্ষ করোনা-যোদ্ধার তথ্য রয়েছে, যাঁদের প্রাথমিক ভাবে টিকা দেওয়া হবে। তবে কোউইন অ্যাপ চালু হলে তাতে চারটি মডিউল থাকবে। ১) টিকাকরণের নজরদারির জন্য ব্যবহারকারী এবং যাঁরা টিকা দেবেন তাঁদের সুবিধার্থে তৈরি একটি মডিউল। ২) টিকা নিতে ইচ্ছুকদের জন্য মডিউল। ৩) টিকাকরণের হওয়ার পর তা জানানোর জন্য মডিউল। ৪) টিকাকরণের প্রক্রিয়ার কোন পর্যায়ে রয়েছে, সেই তথ্য জানানোর জন্য মডিউল।
কোউইন অ্যাপটি চালু হলে এতে নাম নথিভুক্তির জন্য তিনটি ‘অপশন’ থাকবে। ১) নিজে থেকে রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা। ২) কোনও আধিকারিকের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন। ৩) একসঙ্গে একাধিক ব্যক্তির রেজিস্ট্রেশন। এ বিষয়ে বিশদে কিছু না জানালেও মনে করা হচ্ছে যে বিভিন্ন শিবিরের মাধ্যমে সরকারি আধিকারিকেরাই মানুষজনকে রেজিস্ট্রেশনে সহায়তা করবেন। যাঁরা অ্যাপ ব্যবহারে স্বচ্ছন্দ নন, তাঁদের এবং বিশেষ করে ৫০ বছরের বেশি বয়সিদের নাম নথিভুক্তির জন্য ভোটার কার্ডের তথ্য কাজে লাগানো হবে বলে জানিয়েছেন দিল্লি কোভিড-১৯ টাস্ক ফোর্সের সদস্য সুনীলা গর্গ। তিনি বলেন, “কারও নাম নথিভুক্ত না থাকলে তিনি জেলা অথবা ব্লক স্তরের আধিকারিকদের সাহায্য নিতে পারবেন। যাঁরা ৫০ বছরের কমবয়সি অথচ হার্টের সমস্যায় ভুগছেন, তাঁরা নিজেদের মেডিক্যাল রিপোর্ট এই অ্যাপে আপলোড করার সুবিধা পাবেন।”
জরুরি ভিত্তিতে টিকাকরণের জন্য দেশে ইতিমধ্যেই কোভিশিল্ড এবং কোভ্যাক্সিন— এই দু’টি টিকার ছাড়পত্র দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই অ্যাপের মাধ্যমে যাতে টিকাকরণে প্রক্রিয়া শুরু করা যায়, তার সার্বিক মহড়াও করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। দেশের ৭০০ জেলায় ৯০ হাজারেরও বেশি জনকে এই সফ্টওয়্যার ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে, করোনা-যোদ্ধা, কো-মর্বিড এবং বয়স্কদের বিনামূল্যে টিকাকরণ শুরু হলেও কাকে এবং কখন টিকা দেওয়া হবে, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন জেলাশাসকেরা।