কোভিডজয়ী: ৯৭ বছর বয়সে করোনাকে হারালেন আগরার এই বৃদ্ধ। পরিবার সূত্রের খবর, বৃদ্ধের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা ছিল। গত ২৯ এপ্রিল হাসপাতালে ভর্তি হন। এখন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন তিনি। ছবি: পিটিআই।
এক ধাক্কায় হুহু করে বাড়ল সংক্রমণ। মোট করোনা রোগীর সংখ্যায় ব্রিটেনকে পেরিয়ে ভারত উঠে এল চার নম্বরে। সামনে শুধু আমেরিকা, ব্রাজিল ও রাশিয়া। ভারতে করোনা সংক্রমণ যেখানে তিন লক্ষের কাছাকাছি, সেখানে তৃতীয় স্থানে থাকা রাশিয়ায় সংক্রমিতের সংখ্যা পাঁচ লক্ষের কিছু বেশি। কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী এই প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘ভারত একটি ভুল প্রতিযোগিতা জিততে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’’
ইদানীং নতুন সংক্রমিতের সংখ্যা রোজ ৯ হাজারের কোঠায় থাকছিল। কিন্তু গত চব্বিশ ঘণ্টায় সেই সংখ্যাটা দশ পেরিয়ে প্রায় এগারো হাজারে পৌঁছেছে। গত কাল থেকে সংক্রমিত হয়েছেন ১০,৯৫৬ জন। মারা গিয়েছেন ৩৯৬ জন। অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা ১,৪১,৮৪২। সুস্থ ১,৪৭,১৯৪ জন। অ্যাক্টিভ রোগীর চেয়ে সুস্থের সংখ্যা রোজই বাড়বে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক।
তা সত্ত্বেও যে গতিতে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে, তাতে রোগীর সংখ্যায় আমেরিকাকে ছাড়িয়ে ভারত কবে এক নম্বরে উঠে আসবে, সেই চর্চাও শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, এখন ভারতে রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ হওয়ার হার প্রায় ১৭.৪ দিন। যা মে মাসের শেষেও ছিল ১৫.৪ দিন এবং লকডাউনের শুরুতে ছিল মাত্র ৩.৪ দিন।
দেশে ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণ বৃদ্ধি এই প্রথম ১০ হাজার ছাড়াল। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
যদিও এক স্বাস্থ্যকর্তার বক্তব্য, বর্তমানে সংক্রমিতের সংখ্যা এতটাই বেড়েছে যে, তা দ্বিগুণ হতেও বেশি সময় লাগছে। সংক্রমণের এই হার বজায় থাকলে রাশিয়ার বর্তমান সংখ্যা ছুঁতে ভারতের সতেরো থেকে কুড়ি দিনের মতো সময় লাগবে। আর আমেরিকাকে ছুঁতে সময় লাগা উচিত দু’মাসের বেশি। ভারত-সহ ওই দেশগুলিতে আগামী দিনে সংক্রমণ কোন গতিতে এগোয়, তার উপরেও এই হিসেব অনেকাংশে নির্ভর করছে। তবে প্রথম তিনটি স্থানে থাকা দেশগুলির থেকে এ দেশের জনসংখ্যা যতটা বেশি এবং লকডাউন শিথিলের পরে রোগীর সংখ্যা যে হারে বাড়ছে, তা হিসেব করে স্বাস্থ্য মন্ত্রকও নিশ্চিত যে, আজ নয় কাল ভারত সব দেশকে ছাপিয়ে যাবেই।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
এই পরিস্থিতিতে রাহুলের টুইট, ‘‘ঔদ্ধত্য ও অযোগ্যতার মিশেলে ওই ভয়ঙ্কর দুঃখজনক ঘটনা (করোনায় প্রথম হওয়া) ঘটতে যাচ্ছে।’’ এমসের ডিরেক্টর রণদীপ গুলেরিয়া অবশ্য বলেন, ‘‘জনসংখ্যার কারণেই আমরা চতুর্থ স্থানে। কিন্তু প্রতি দশ লক্ষে সংক্রমণ হিসেব করলে ভারত অনেক পিছিয়ে আছে।’’
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)
স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানায়, প্রতিষেধক আবিষ্কার না-হওয়া পর্যন্ত ভাইরাস ছড়াবে। কিন্তু প্রথম চার দেশের মধ্যে মৃত্যুহার ভারতেই সবচেয়ে কম। সেটাই আশার ব্যাপার।