গত কয়েক দিনে ভারতে যে ভাবে নতুন সংক্রমণ বাড়ছে, তা করোনাকালে বিশ্বের কোনও দেশে হয়নি। গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ।
আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় ভারতে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা আজ ৪০ লক্ষ পেরোল।
সকাল ৮টা পর্যন্ত পরিসংখ্যান দিয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছিল, দেশে মোট সংক্রমিত হয়েছেন ৩৯.৩৬ লক্ষ মানুষ। গত কালের পরে আজও ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমিতের সংখ্যা ৮৩ হাজার পেরিয়েছে। তবে গত কালের চেয়ে সংখ্যাটা কয়েকশো কম। আজ রাত ১টায় ‘ওয়ার্ল্ডোমিটার্স’-এর বিশ্ব-তালিকা দেখাচ্ছে, মোট আক্রান্তের সংখ্যার নিরিখে ব্রাজিলের সঙ্গে ভারতের ব্যবধান বড়জোর আর ৩৪ হাজারের। অথচ ব্রাজিলে দৈনিক রোগী বৃদ্ধির সংখ্যা ভারতের প্রায় অর্ধেক। ফলে শীঘ্রই ওই তালিকার দ্বিতীয় স্থানে ভারতের উঠে আসা নিশ্চিত বলে বিশেষজ্ঞদের মত। কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন জানিয়েই দিয়েছেন, ওনাম উৎসব উপলক্ষে রাজ্যবাসী যে ভাবে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে মেলামেশা করেছেন, তাতে সংক্রমণ বাড়তে পারে। তিনি বলেছেন, ‘‘পরের দু’টো সপ্তাহ গুরুত্বপূর্ণ। হয়তো ‘ওনাম ক্লাস্টার’ দেখব আমরা।’’
স্বাস্থ্য মন্ত্রক অবশ্য জোর দিয়েছে সুস্থের সংখ্যা ৩০ লক্ষ পেরোনোর বিষয়টিতে। মন্ত্রকের বক্তব্য, গত আট দিন ধরে রোজ ৬০ হাজারের বেশি মানুষ কোভিড থেকে সেরে উঠেছেন। সুস্থতার হার ৭৭.১৫ শতাংশে পৌঁছেছে। অ্যাক্টিভ রোগীর চেয়ে সুস্থের সংখ্যা ২২ লক্ষেরও বেশি। দেশে কোভিডে মৃত্যুহার (১.৭৪ শতাংশ) শুধু বিশ্বের সার্বিক হারের চেয়ে কম নয়, তা একটানা নেমেও চলেছে। সারা দেশে আজও ১১ লক্ষের বেশি পরীক্ষা হয়েছে।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
কোভিড পরীক্ষা হয়নি বলে কোনও সন্তানসম্ভবার প্রসবের ক্ষেত্রে বা আপৎকালীন অবস্থার কোনও রোগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে দেরি করা যাবে না বলে নয়া নির্দেশিকায় জানিয়েছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)। আরও বলা হয়েছে, কন্টেনমেন্ট এলাকায় কোভিড পরীক্ষা করানোর সময়ে র্যাপিড অ্যান্টিজেন পদ্ধতিকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে, কারণ তাতে দ্রুত ফল জানা যায়। তবে হাসপাতালে ভর্তি সমস্ত শ্বাসকষ্টের রোগী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ক্ষেত্রে ‘নিশ্চিত ফল দেওয়া’ আরটি-পিসিআর পরীক্ষাই করাতে হবে। কোনও রাজ্যে প্রবেশের আগে কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট বাধ্যতামূলক হলে ওই রাজ্যে ঢোকার সময়েই করোনা পরীক্ষার বন্দোবস্ত রাখতে হবে।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
সংক্রমণ রুখতে কন্টেনমেন্ট এলাকায় নজরদারি ও পরীক্ষা বাড়ানোয় জোর দিয়েছেন কেন্দ্রীয় তথ্য-সম্প্রচারমন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর। কিন্তু ভারতের মতোই বিশাল দেশ হয়ে চিন কী ভাবে সংক্রমণকে বিশেষ অঞ্চলের গণ্ডিতে বেঁধে ফেলল, তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন তিনি। বলেছেন, ‘‘এর উত্তর চিনই জানে।’’ নিয়ন্ত্রণরেখায় টানাপড়েনের আবহে তাঁর এই পর্যবেক্ষণ তাৎপর্যপূর্ণ।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
হরিয়ানার মুরথল-এ হাইওয়ের ধারে দু’টি জনপ্রিয় ধাবার মোট ৭৫ জন কর্মী কোভিড পজ়িটিভ হয়েছেন। পুলিশ জেনেছে, গত এক সপ্তাহে ওই দু’টি ধাবায় প্রায় ১০ হাজার জন খেতে গিয়েছিলেন। ধাবা দু’টি সিল করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এত লোকের সন্ধান কী করে মিলবে, তা নিয়েই চিন্তা প্রশাসনের। এই দু’টি ধাবার একটি, ‘গরম ধরম ধাবা’-র মালিক অভিনেতা ধর্মেন্দ্র।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)