ভারতে মোট করোনা আক্রান্ত হলেন ২২ লক্ষ ৬৮ হাজার ৬৭৫ জন। গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ।
দেশে ২৪ ঘণ্টায় করোনা-সংক্রমিতের সংখ্যা পরপর গত চার দিন ধরে ছিল ৬০ হাজারের উপরে। আজ বিশেষজ্ঞদের সাময়িক স্বস্তি দিয়ে সেই পরিসংখ্যানই ৫৪ হাজারের নীচে নেমে গেল। আন্তর্জাতিক সমীক্ষা অনুযায়ী গত রবিবার ২২ লক্ষে পৌঁছেছিল ভারতে মোট সংক্রমিতের সংখ্যা। আজ রাতে ওই সমীক্ষায় তা ২৩ লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে। তবে এর আগে এক লক্ষ রোগী বেড়েছিল কার্যত দেড় দিনে। আজ সেই বৃদ্ধির গতি কিছুটা শ্লথ।
রুটিন সাংবাদিক বৈঠকে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফেও আজ আশ্বাস দিয়ে বলা হয়েছে, দৈনিক করোনা পজ়িটিভের সংখ্যা সামান্য বেড়ে গেলেও রাজ্যগুলি যেন সন্ত্রস্ত হয়ে না-পড়ে। এই প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ বলেন, ‘‘৩১ মার্চ অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা মোট আক্রান্তের ৮৮.৮৩ শতাংশ ছিল। আজ তা কমে হয়েছে ২৮.২১ শতাংশ।
ভেন্টিলেটরে আছেন ১ শতাংশেরও কম রোগী। অক্সিজেন লাগছে এবং আইসিইউয়ে আছেন— এমন রোগীর শতকরা হিসেব যথাক্রমে ৩ শতাংশের ও ৪ শতাংশের কম। আমাদের বৃহত্তর ছবিটা মনে রাখা দরকার। সেই তাই দৈনিক রোগীর সংখ্যা সামান্য বাড়লেও তাতে ভয় না-পেয়ে রাজ্যগুলির উচিত পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানো। সেই সঙ্গে সংক্রমিতের সংস্পর্শে কারা এসেছিলেন, তাঁদের চিহ্নিত করা ও যথাযোগ্য চিকিৎসার বন্দোবস্ত প্রয়োজন।’’
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
২৪ ঘণ্টায় দেশে কোভিডে মৃতের সংখ্যা গত কাল এক হাজার পেরিয়েছিল। আজ তা-ও কমে হয়েছে ৮৭১। স্বাস্থ্যসচিব জানান, প্রথম দফার লকডাউনের পরে এই প্রথম বার দেশে কোভিডে মৃত্যুহার দুই শতাংশের নীচে নেমেছে। এখন তা ১.৯৯ শতাংশ। অন্য দিকে, সুস্থতার হার বেড়ে ৬৯.৮০ শতাংশে পৌঁছেছে। সুস্থের মোট সংখ্যা ১৫ লক্ষ পেরিয়েছে। দেশে রোজ প্রতি দশ লক্ষে ৫০৬ জনের নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে। মোট পরীক্ষার সংখ্যা পৌঁছেছে আড়াই কোটিতে।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
আশার কথা শুনিয়েছেন পুণের সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার সিইও আদার পুনাওয়ালাও। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘‘চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই ভারতে করোনার টিকা এসে যাওয়া উচিত। আইসিএমআর-এর সঙ্গে হাত মিলিয়ে আমরা এই দেশের কয়েক হাজার রোগীর উপরে টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করব।’’ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা-র সম্ভাব্য টিকা ‘কোভিশিল্ড’ তৈরি ও পরীক্ষা করছে সিরাম। ভারতের ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ ডিসিজিআই তাদের ওই টিকাটির দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা চালানোর ছাড়পত্র দিয়েছে। পুনাওয়ালা জানান, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হবে। টিকা তৈরি শুরু হবে অগস্টের শেষে।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
সিরাম কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি জানিয়েছিলেন, ‘বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন’ এবং ‘গাভি, দ্য ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স’-এর সহায়তায় শুধু ভারত এবং মধ্য ও স্বল্প আয়ের দেশগুলির জন্য তাঁরা ১০ কোটি টিকা তৈরি করতে চান। টিকা নিয়ে গবেষণার জন্য গাভিকে ১৫ কোটি ডলার দেবে গেটস-দের সংস্থা, সেই অর্থ সিরামও পাবে।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
পুনাওয়ালা জানিয়েছেন, ওই অর্থসাহায্য মিলছে বলে আপাতত তাঁদের টিকার ‘বিশেষ মূল্য’ হবে ৩ ডলার প্রতি ডোজ, অর্থাৎ ২২৫ টাকার কাছাকাছি। লাইসেন্স এসে গেলে দাম আরও একটু বাড়তে পারে। দু’মাসের মধ্যেই টিকার চূড়ান্ত দাম জানিয়ে দেওয়া হবে।
চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)