আক্রান্ত প্রায় ৬০ লক্ষ হলেও দেশে করোনা-জয়ীদের সংখ্যা বরাবরই আশাপ্রদ। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
দেশে করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৬০ লক্ষের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেল। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৮৮ হাজারেরও বেশি আক্রান্ত হওয়ার ফলে দৈনিক সংক্রমণের হারও বেড়ে প্রায় ৯ শতাংশ হয়েছে। সেই সঙ্গে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যাও হাজারের উপর।তবে বেড়েছে সুস্থতার হারও।
রবিবার সকালে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের প্রকাশিত বুলেটিন অনুযায়ী, দেশ জুড়ে এখনও পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৫৯ লক্ষ ৯২ হাজার ৫৩২ জন। তাঁদের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যাটাও নেহাত কম নয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, কোভিড-আক্রান্ত হলেও তা থেকে সেরে উঠেছেন মোট ৪৯ লক্ষ ৪১ হাজার ৬২৭ জন। ফলে এই মুহূর্তে সক্রিয় গোটা দেশে সক্রিয় কোভিড-রোগীর সংখ্যা ৯ লক্ষ ৫৬ হাজার ৪০২।
আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৬০ লক্ষ হলেও দেশে করোনা-জয়ীদের সংখ্যা বরাবরই আশাপ্রদ। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থতার হার শনিবারের তুলনায় সামান্য বেড়ে হয়েছে ৮২.৪৬ শতাংশ। গত কাল তা ছিল ৮২.১৪ শতাংশ।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
সুস্থতার হারের পরিসংখ্যান স্বস্তি দিলেও গত ২৪ ঘণ্টায় পজিটিভিটি রেট বা সংক্রমণের হার সামান্য বেড়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের হিসাব অনুযায়ী তা হল ৮.৯৭ শতাংশ। প্রতি দিন যত জনের কোভিড-টেস্ট করা হচ্ছে এবং তার মধ্যে প্রতি ১০০ জনে যত সংখ্যকের কোভিড-রিপোর্ট পজিটিভ আসছে, তাকেই বলা হয় পজিটিভিটি রেট বা সংক্রমণের হার। গত কাল এই হার ছিল ৬.৩৬ শতাংশ। এই হার যত নিম্নমুখী হবে, ততই স্বস্তিদায়ক।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
সংক্রমণের হার একলাফে অনেকটা বাড়লেও করোনা রোগীদের দৈনিক মৃত্যু সংখ্যাটা ২ সেপ্টেম্বর থেকেই হাজারের ঘরে ঘোরাফেরা করছে। আমেরিকা বা ইউরোপীয় দেশগুলির তুলনায় ভারতে কোভিড-রোগীর দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা কম হলেও গত ২৪ ঘণ্টায় এক হাজার ১২৪ জন কোভিড-রোগী মারা গিয়েছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত ভারতে ৯৪ হাজার ৫০৩ জন আক্রান্তের মৃত্যু হল।
আরও পড়ুন: ‘টিকার জন্য ৮০ হাজার কোটির পুঁজি আছে তো!’
আরও পড়ুন: মৃত পেরোতে পারে ২০ লক্ষ: হু
করোনা-আক্রান্তের পরিসংখ্যানের নিরিখে গোটা বিশ্বে গোড়া থেকেই শীর্ষে ছিল আমেরিকা। এ দিনও তার হেরফের ঘটেনি। ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৫ হাজারের বেশি সংক্রমণের খবর পাওয়া গিয়েছে। ফলে আমেরিকায় মোট আক্রান্ত বেড়ে হয়েছে ৭০ লক্ষ ৭৮ হাজার ৩৯। অন্য দিকে, ওই তালিকায় ভারতের পরেই রয়েছে ব্রাজিলের নাম। ব্রাজিলে এক দিনে ২৮ হাজার ৩৭৮ জনের মধ্যে সংক্রমণ ঘটেছে। এই মুহূর্তে সে দেশে মোট আক্রান্ত ৪৭ লক্ষ ১৭ হাজার ৯৯১ জন।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
দেশের করোনা-মানচিত্রে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু বা কর্নাটকের মতো রাজ্যে। আক্রান্তের তালিকায় শীর্ষে থাকা মহারাষ্ট্রে এক দিনে ২০ হাজার ৪১৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। অন্য দিকে, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু বা কর্নাটকে সেই সংখ্যাটা ছাপিয়েছে যথাক্রমে সাত হাজার ২৯৩, ৫ হাজার ৬৪৭ এবং আট হাজার ৮১১। ওই পাঁচ রাজ্যে মোট আক্রান্তের সংখ্যা যথাক্রমে ১৩ লক্ষ ২১ হাজার ১৭৬, ৬ লক্ষ ৬৮ হাজার ৭৫১, পাঁচ লক্ষ ৭৫ হাজার ১৭ এবং পাঁচ লক্ষ ৬৬ হাজার ২৩। মহারাষ্ট্র (৩৫,১৯১), অন্ধ্রপ্রদেশ (৫,৬৬৩), তামিলনাড়ু (৯,২৩৩) বা কর্নাটকে (৮,৫০৩) মৃতের সংখ্যাও উদ্বেগ বাড়াচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
গোটা দেশে ওই চার রাজ্যের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গে আক্রান্তের সংখ্যা কম হলেও তা পৌঁছেছে প্রায় আড়াই লক্ষের কাছাকাছি। গত কাল রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, এ রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা দুই লক্ষ ৪৪ হাজার ২৪৪। তার মধ্যে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ২৫ হাজার ৫৪৪। এখনও পর্যন্ত করোনায় মৃত্যু হয়েছে চার হাজার ৭২১ জনের।
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)