National News

উপসর্গ দেখা দিলে তবেই করোনা পরীক্ষা! আইসিএমআর কর্তার কথায় বিতর্ক

অভিযোগ উঠেছে, দেশে পরীক্ষার জন্য যথেষ্ট সংখ্যক আরএনএ কিট না থাকায় মেপে পরীক্ষার পথে হাঁটছে নরেন্দ্র মোদী সরকার।

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২০ ০৩:১৪
Share:

ছবি: এপি।

এলোপাথাড়ি পরীক্ষায় কোনও লাভ নেই। উপসর্গ দেখা দিলে তবেই করোনা সংক্রমণের পরীক্ষা করার পক্ষে সওয়াল করলেন ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর ডিজি বলরাম ভার্গব। দেশের নাগরিক তো বটেই, এমনকি বিদেশ থেকে আসা ভারতীয়দেরও সংক্রমণের লক্ষণ দেখা গেলে তবেই পরীক্ষা করার উপরে জোর দেন তিনি। একই সঙ্গে ভার্গবের দাবি, নমুনা পরীক্ষার যথেষ্ট কিট রয়েছে দেশে। তাই আশঙ্কার কোনও কারণ নেই। ভারতে আক্রান্ত ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষা ইচ্ছে করে কম করা হচ্ছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তা-ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন তিনি।

Advertisement

শুরু থেকেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলে আসছে, করোনা নির্ধারণের প্রশ্নে একমাত্র উপায় হল পরীক্ষা। নমুনা পরীক্ষাই চূড়ান্ত ভাবে জানাতে পারে কোনও ব্যক্তি সংক্রমিত কিনা। কিন্তু ভারতে এ যাবৎ মাত্র ১৫ হাজার ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পাশাপাশি অনেক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞই মনে করেন, ১৩০ কোটির দেশে মাত্র ১৫ হাজারের নমুনা পরীক্ষা করে সার্বিক চিত্রটি পাওয়া অসম্ভব। তা না পেলে কোনও ভাবেই করোনার মতো ছোঁয়াচে ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানোর লড়াইয়ে জেতা সম্ভব নয়।

তাই বেশি করে নমুনা পরীক্ষার প্রশ্নে সওয়াল করা শুরু করেছে একাধিক শিবির। আইসিএমআর-এর ডিজি ভার্গবের মতে, ‘‘এলোপাথাড়ি ভাবে পরীক্ষা করার এখনও প্রয়োজন আসেনি। কারণ ভারতে যে সংক্রমণ ছড়িয়েছে, তা মূলত বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের কারণেই ছড়িয়েছে। বিদেশ থেকে আসা সেই ব্যক্তি বা সেই ব্যক্তির সরাসরি সংস্পর্শে এসেছেন এমন লোকেদের আইসোলেশনে রেখে নজরদারি করাটাই যথেষ্ট। সাধারণত আইসোলেশনে থাকা কোনও ব্যক্তির ২ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে উপসর্গ দেখা দেয়। জ্বর, সর্দি-কাশি বা শ্বাসকষ্টের উপসর্গ দেখা দিলে একমাত্র তখনই পরীক্ষা করে দেখার প্রয়োজন রয়েছে।’’ তিনিও এ-ও দাবি করেছেন, ওই রোগে সংক্রমিত হয়েছেন এমন ৮০ শতাংশ মানুষের সাধারণ জ্বর হবে, আবার সেরেও যাবে। বাকি ২০ শতাংশ লোকের সর্দি-কাশির সঙ্গে জ্বর হবে। তাঁদের মধ্যে মাত্র ৫ শতাংশেরই হাসপাতালে যাওয়ার দরকার হবে।

Advertisement

আরও পড়ুন: জনতা কার্ফুর শেষেই লকডাউন দেশের ৭৫ জেলা

সংক্রমণের নিরিখে ভারত এই মুহূর্তে স্টেজ-টু’তে রয়েছে। তৃতীয় পর্যায় হল গোষ্ঠী সংক্রমণ। সংক্রমণের তৃতীয় পর্যায়ে কোনও ব্যক্তি বিদেশ থেকে আসা কোনও সংক্রমিত ব্যক্তি বা আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে না এসেও ওই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। স্বাস্থ্য কর্তাদের মতে, সংক্রমণ যদি তৃতীয় পর্যায়ে যাওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়, সে ক্ষেত্রে বাছবিচার না করে জনগোষ্ঠীর ভিতর থেকে নমুনা সংগ্রহ করা যেতে পারে। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের যুগ্মসচিব লভ আগরওয়ালের মতে, ‘‘ভারত এখনও সেই অবস্থায় পৌঁছয়নি।’’ উল্টে যাকে তাকে ধরে পরীক্ষা করলে লোকের মনে আরও আতঙ্ক সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

পরীক্ষায় কে কোথায়

দেশ প্রতি সপ্তাহে
• ফ্রান্স ১০ হাজার
• আমেরিকা ১৬ হাজার
• জার্মানি ৪২ হাজার
• দক্ষিণ কোরিয়া ৮২ হাজার
• ভারত ৫ হাজার

* ভারত এখনও পর্যন্ত প্রায় ১৫ হাজার ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষা করেছে।
** ভারত এই মুহূর্তে প্রতি সপ্তাহে ৬০ থেকে ৭০ হাজার ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষা করতে সক্ষম।

অভিযোগ উঠেছে, দেশে পরীক্ষার জন্য যথেষ্ট সংখ্যক আরএনএ কিট না থাকায় মেপে পরীক্ষার পথে হাঁটছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। আইসিএমআর-এর আর এক পদস্থ কর্তা রমন গঙ্গাখেদকরের দাবি, ‘‘দেশে প্রায় পনেরো লক্ষ কিটের ব্যবস্থা রয়েছে। সুতরাং কিট নেই, এ কথা সঠিক নয়।’’ যদিও প্রশ্ন উঠেছে, ১৩০ কোটির দেশে ১৫ লক্ষ কিট কতটুকু? স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, ভবিষ্যতের কথা ভেবে গত কাল প্রধানমন্ত্রী দেশের ওষুধ শিল্পকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় আরএনএ কিট বানানোর জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। বলরাম ভার্গব বলেন, ‘‘উন্নত দেশগুলির সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যাবে ভারতও পরীক্ষার প্রশ্নে পিছিয়ে নেই। আমাদের যা পরীক্ষাকেন্দ্র রয়েছে, তাতে সপ্তাহে ৬০ থেকে ৭০ হাজার নমুনা পরীক্ষা করার ক্ষমতা রয়েছে।’’

বর্তমানে দেশের ১১১টি সরকারি কেন্দ্রে করোনা ভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা করে দেখার ব্যবস্থা রয়েছে। সংক্রমণ স্টেজ-থ্রি পর্যায়ে পৌঁছলে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যাও যে লাফ দিয়ে বাড়বে, সে বিষয়ে নিশ্চিত স্বাস্থ্য কর্তারা। সেই কারণে গত এক সপ্তাহ ধরে আলোচনার শেষে গতকাল বেসরকারি পরীক্ষাকেন্দ্রগুলিকে করোনা সংক্রমণের নমুনা পরীক্ষা করে দেখার অনুমতি দেয় কেন্দ্র। সিদ্ধান্ত হয়েছে, পরীক্ষার জন্য কোনও ব্যক্তির কাছ থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে চার হাজার টাকা নিতে পারবে বেসরকারি পরীক্ষাকেন্দ্রগুলি। নমুনা পরীক্ষার মূল্য ধার্য করা নিয়ে কেন্দ্র ও বেসরকারি ল্যাব মালিকদের মধ্যে ঐকমত্য না হওয়ায় এত দিন ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছিল না বলে জল্পনা ছড়িয়েছিল বিভিন্ন শিবিরে। আইসিএমআর-এর ডিজি বলেন, ‘‘অর্থ কোনও দিনই কারণ ছিল না। আমরা মূলত চিন্তায় ছিলাম বেসরকারি ল্যাব-কর্মীদের সুরক্ষা নিয়ে। কারণ সংক্রমণের প্রশ্নে ওই ভাইরাস ভীষণ শক্তিশালী। তাই যতক্ষণ না কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে, ততক্ষণ অনুমতি দেওয়া হয়নি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement