দেহের তাপমাত্রা মাপার ব্যবস্থা শুরু হয়েছে সংসদে।—ছবি পিটিআই
করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কৌশল নিয়ে গোটা দেশে চলছে যুদ্ধকালীন তৎপরতা। ‘সামাজিক দূরত্ব’ তৈরির নির্দেশ কেন্দ্রের। কিন্তু অবিচল সংসদ। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত লোকসভা এবং রাজ্যসভায় চলছে অধিবেশন এবং মানুষের যাতায়াত। বিষয়টি নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে প্রতিবাদ করে এসেছে তৃণমূল। আজ সুর মিলিয়েছে কংগ্রেসও। বিরোধীদের সার্বিক উষ্মার ছবিটা আজ প্রকাশ্যে চলে এসেছে রাজ্যসভায়।
তৃণমূলের সাংসদদের বেশ কয়েক জন আজ সকালে মাস্ক পরে রাজ্যসভায় ঢোকার পরে চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নায়ডু তাঁদের বলেন, মাস্ক বাইরে খুলে অধিবেশন কক্ষে আসতে। কিন্তু তাঁর নির্দেশ শোনেননি তৃণমূলীরা। কংগ্রেস বেঞ্চ থেকে পি চিদম্বরম তখন উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, যদি কেউ বর্তমান পরিস্থিতিতে নিজেদের বিপন্ন বলে মনে করেন এবং স্বস্থ্য়ের কারণে মুখোশ পরেন, সেটা খুলে ফেলতে বলাটা ঠিক নয়। কংগ্রেস সাংসদ রাজীব গৌড়া তৃণমূলের বলেন, রাজ্যসভার সদস্যদের গড় বয়স ৬৪। করোনাভাইরাস সংক্রমণের পক্ষে যা বিপজ্জনক। তাই যত দিন না বিপদ কাটে, মুলতুবি করে দেওয়া হোক সংসদ। বিষয়টি নিয়ে রাজ্যসভার মত নেওয়া হলে বিজেপি বাদে সব দলই অধিবেশন আপাতত মুলতুবি করার পক্ষে রায় দেন।
শাসক দলের দুই সদস্য সুরেশ প্রভু এবং ভি মুরলীধরন সেলফ কোয়রান্টিন-এ চলে যাওয়ার পর আতঙ্ক বেড়েছে অন্যান্য দলের মধ্যেও। আজই প্রথম সাংসদদেরও দেহের তাপমাত্রা মাপার ব্যবস্থা শুরু হয়। দেখা যায়, তৃণমূলের কাকলি ঘোষ দস্তিদারের দেহে তাপমাত্রা বেশি। কাকলি সেই পরীক্ষককে জানান, তিনি নিজে চিকিৎসক এবং জ্বরের কোনও লক্ষণই তাঁর নেই। কাকলির অবশ্য আজ এমনিতেই ফিরে যাওয়ার কথা ছিল কলকাতা। তিনি হাজিরায় সই করে ফেরার উড়ান ধরেন। তৃণমূলের রাজ্যসভার সদস্য সুখেন্দুশেখর রায় চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়ে জানান, ‘পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বাজেট অধিবেশনের বাকি সময়টুকু বাড়িতে অন্তরীণ থাকবো। আমার ছুটি মঞ্জুর করা হোক।’
সংসদে বিজেপির সাংসদদের হাজিরা কার্যত বাধ্যতামূলক থাকলেও ক্রমশ উপস্থিতি ক্ষীণ হতে শুরু করেছে বিরোধী শিবিরে। রাজ্যসভায় কংগ্রেসের দুই শীর্ষ নেতা গুলাম নবি আজাদ এবং আনন্দ শর্মা আজ আসেননি। তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন জানান, ‘‘আমি শরদ পওয়ারকে ওঁর বয়সের কথা বিবেচনা করে না-আসতে অনুরোধ করেছি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘মধ্যপ্রদেশের হাওয়া দেখে দিল্লিতে সংসদ চালানো হচ্ছে।’’ অন্য দিকে রাজ্যে ফিরে যাচ্ছেন তৃণমূলের বেশ কিছু বয়স্ক সাংসদ। তবে লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, তিনি দিল্লিতেই থাকছেন। তাঁর কথায়, ‘‘দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য একটি স্বাস্থ্যবিধি পাঠিয়েছেন। আমার শারীরিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে উনি বলেছেন বিমানবন্দরে না-যেতে। দিল্লিতেই থাকতে।’’
তৃণমূলের পক্ষ থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী ভিডিয়ো কনফারেন্স করে সার্ক দেশগুলির সঙ্গে বৈঠক করলেন। সার্ক-এর তহবিলও তৈরি করলেন। কিন্তু আক্রান্ত রাজ্যগুলির কী হবে? মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে কবে বসবেন প্রধানমন্ত্রী? দলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকও যেন এখন না-ডাকা হয়। কারণ সেখানেও অনেকের সমাবেশ হয়।