ছবি: পিটিআই।
আক্রান্তের সংখ্যা এক দিনেই চার হাজার ছুঁইছুঁই। মৃতের সংখ্যা এক দিনে প্রায় ২০০। ভারতে গত তিন মাসের ইতিহাসে করোনা সংক্রমণ ও মৃতের সংখ্যায় এক লাফে নজিরবিহীন বৃদ্ধির জন্য নাম না করে কিছু রাজ্যকে দায়ী করল কেন্দ্র। স্বাস্থ্য মন্ত্রক আজ দাবি করেছে, রোগের তথ্য জানানোর বিষয়ে কিছু রাজ্যের তরফে খামতি থেকে গিয়েছিল। তা সংশোধন করে প্রকৃত তথ্য জানানোর পরেই দেশে সার্বিক ভাবে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে।
আবার আজই পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য দাবি করেছেন, ‘‘রাজ্য কোনও তথ্য গোপন করছে না। আমাদের তথ্য খুব স্পষ্ট। এখানে ১০ লক্ষে ১৪ জন সংক্রমিত। আর মৃত্যুর হার প্রতি ২০ লক্ষে তিন জন।’’ প্রশাসনের একটি সূত্রের তরফে এ-ও বলা হয়, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ওয়েবসাইটেও আজ করোনায় মৃত্যুর রাজ্যওয়াড়ি তালিকায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, ৭০ শতাংশের বেশি মৃত্যুর কারণ কো-মর্বিডিটি। তা হলে কো-মর্বিডিটির উল্লেখ করায় রাজ্যকে কেন এত দিন দোষারোপ করা হচ্ছিল? কেন্দ্রীয় সাইটে হঠাৎ কো-মর্বিডিটির উল্লেখ দেখে তার কারণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ওয়াকিবহাল মহলও।
গোড়া থেকেই পশ্চিমবঙ্গের বিরুদ্ধে করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কমিয়ে দেখানোর অভিযোগ উঠছিল। কেন্দ্রীয় দল রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিংহকে গত কাল যে-চিঠি দেয়, তাতে তথ্য-বিভ্রান্তির অভিযোগ করা হয়েছিল। কেন্দ্রীয় দল দাবি করেছিল, দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গেই করোনায় মৃত্যুর হার সর্বাধিক ১২.৮ % (যেখানে দেশে করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুর হার ৩.২৫ %)। কম হারে পরীক্ষা ও নজরদারির অভাবেই এই পরিস্থিতি হয়েছে বলে তাদের মত। ঘটনাচক্রে, গত কালই রাজ্যের মুখ্যসচিব জানান, রাজ্যের করোনা-তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতিতে কিছু ফাঁক থাকায় সমস্যা তৈরি হয়েছিল। সেই পদ্ধতি সংশোধন করা হয়েছে। নতুন তথ্য কেন্দ্রকে জানিয়েও দেয় সরকার।
গত ১০ দিনে মৃত্যু
• ২৬ এপ্রিল ৪৭ জন
• ২৭ এপ্রিল ৬০ জন
• ২৮ এপ্রিল ৫১ জন
• ২৯ এপ্রিল ৭১ জন
• ৩০ এপ্রিল ৬৭ জন
• ১ মে ৭৭ জন
• ২ মে ৭১ জন
• ৩ মে ৮৩ জন
• ৪ মে ৮৩ জন
• ৫ মে ১৯৪ জন
এ দিকে, দেশে দৈনিক আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যার নিরিখে সর্বাধিক বৃদ্ধি হয়েছে আজ। সাংবাদিক বৈঠকে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের যুগ্মসচিব লব আগরওয়াল গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত (১৯৪), সংক্রমিত (৩৮৭৫) এবং এ-পর্যন্ত মোট সংক্রমিতের সংখ্যা (৪৬,৭১১) জানান। দেশে মোট মৃতের সংখ্যা এখন ১৫৮৩। কেন আচমকা এমন বৃদ্ধি, নিজে থেকেই তার ব্যাখ্যা দেন যুগ্মসচিব। কোনও রাজ্যের নাম না-নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘করোনার মতো রোগে আক্রান্তদের সম্পর্কে ঠিক সময়ে তথ্য জানানোটা খুবই জরুরি। কিন্তু এ বিষয়ে কিছু রাজ্যের খামতি থেকে গিয়েছিল। যা ঠিক করা হয়েছে।’’
আরও পড়ুন: বেশি দামেও পরোয়া নেই মদ্যপায়ীদের
আরও পড়ুন: পরীক্ষায় কুষ্ঠের ওষুধ, মোদী চান ‘হ্যাকাথন’
যুগ্মসচিব আরও বলেন, ‘‘কিছু রাজ্যে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা ঠিক সময়ে জানানো হয়নি। সেই কারণেই কেন্দ্রের পক্ষ থেকে রাজ্যকে তা সংশোধন করতে বলা হয়। তা ঠিক করার ফলেই আচমকা আজ মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। আপাতত সংশ্লিষ্ট রাজ্য ও জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের দায়িত্ব হল সংক্রমণকে গণ্ডিবদ্ধ এলাকায় আটকে রেখে নজরদারি করা।’’
স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এই আমলা কৌশলগত ভাবেই কোনও রাজ্যের নাম নেননি। কিন্তু কেন্দ্রের একটি সূত্রের দাবি, কেন্দ্রীয় দল কড়া অবস্থান নেওয়াতেই পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসন প্রকৃত তথ্য দিতে বাধ্য হয়েছে। অতীতে পশ্চিমবঙ্গের বিরুদ্ধে ডেঙ্গিতে মৃতের সংখ্যা চেপে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। এ ক্ষেত্রেও তা-ই হত। সূত্রটির মতে, রাজ্যকে বুঝতে হবে, তথ্য গোপন করলে দেশবাসীর ক্ষতি। এতে দেশের সার্বিক চিত্র পাওয়া যায় না। লবের বক্তব্য, ‘‘সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি সামলাতে হলে জরুরি বিষয়টি হল, সংক্রমিতের তথ্য নথিভুক্ত করে তার ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ করা। রাজ্যগুলি আশ্বাস দিয়েছে, ঠিক ভাবে তথ্য নথিভুক্ত করা হবে। দেরি হবে না।’’
চন্দ্রিমা অবশ্য বলেন, এই অভিযোগ করে এমন ধারণা তৈরির চেষ্টা চলছে যে, বাংলাই সর্বত্র সংক্রমণ ঘটাচ্ছে। তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘এখন কেন্দ্রের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের ওয়েবসাইটে রাজ্যভিত্তিক তথ্য দেওয়া বন্ধ হয়েছে। তা কি গুজরাতের পরিস্থিতি গোপন করার জন্য?’’ প্রশাসনের একটি সূত্র এ-ও দাবি করছে, গতকাল রাত পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে মৃতের সংখ্যা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ওয়েবসাইটে ৩৫ দেখানো হয়েছে। যদিও রাজ্যের তরফে সরকারি ভাবে ঘোষিত করোনায় মৃতের সংখ্যা অনেক দিনই ৩৫ ছাড়িয়ে গিয়েছে। তা হলে আজ সেই পরিসংখ্যান হঠাৎ ‘আপডেট’ করে রাজ্যকে দোষারোপ করা হচ্ছে কেন?
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)