যুদ্ধজয়: বিরাশিতে হার মানালেন করোনাকে। সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে মঙ্গলবার দিল্লির লোকনায়ক জয়প্রকাশ নারায়ণ হাসপাতাল ছাড়লেন বৃদ্ধ (হুইলচেয়ারে)। পাশে হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। ছবি: পিটিআই।
করোনা রোগী ও সন্দেহভাজন সংক্রমিতদের রাখার জন্য তিন ধরনের কেন্দ্র বানাতে রাজ্যগুলিকে সুপারিশ করল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। এ নিয়ে আজ রাজ্যগুলিকে বিস্তারিত নির্দেশিকাও পাঠানো হয়েছে।
গত এক সপ্তাহ ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছোট ছোট গণ্ডি বা 'ক্লাস্টারে' সংক্রমণকে বেঁধে ফেলায় সাফল্য এসেছে বলে দাবি করেছে কেন্দ্র। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের যুগ্মসচিব লব আগরওয়াল জানান, এই ‘ক্লাস্টার নিয়ন্ত্রণ’ নীতির ফলে রাজস্থানের ভিলওয়াড়া, উত্তরপ্রদেশের আগরা, গৌতম বুদ্ধ নগর কিংবা মুম্বইয়ে নতুন সংক্রমণ কম ছড়িয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে সার্বিক আক্রান্তের সংখ্যাতেও। গত কালের তুলনায় কমেছে সংক্রমিতের সংখ্যা। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ওয়েবসাইট বলছে, আজ রাত পর্যন্ত দেশে মোট ৪৭৮৯ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সব মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা ১২৪। সেরে উঠেছেন ৩৫২ জন।
গোড়া থেকেই স্বাস্থ্য মন্ত্রক বলে আসছিল, সংক্রমণের প্রশ্নে নোভেল করোনাভাইরাস প্রবল শক্তিশালী। কতটা শক্তিশালী, সেই সমীক্ষা করে দেখেছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ। আজ সেই পরীক্ষার ভিত্তিতে লব আগরওয়াল বলেন, ‘‘করোনায় সংক্রমিত ব্যক্তি যদি লকডাউন না-মানেন, তা হলে এক মাসে তিনি গড়ে ৪০৬ জনকে সংক্রমিত করতে পারেন। আর তিনি যদি লকডাউনের নির্দেশ অন্তত ৭৫ শতাংশও মেনে চলেন, সে ক্ষেত্রে ওই রোগীর মাধ্যমে সংক্রমিত হবেন মাত্র আড়াই জন।’’
মন্ত্রক সূত্রের মতে, ভারতের মতো দুর্বল স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর দেশে সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য চাই সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা। সেই ভাবনা থেকেই তিন ধরনের কোভিড-১৯ কেন্দ্র তৈরি করতে বলা হয়েছে রাজ্যগুলিকে।
প্রথমটি হল, ‘কোভিড কেয়ার সেন্টার’। এই ধরনের কেন্দ্রগুলিতে যাঁদের সামান্য উপসর্গ দেখা দিয়েছে, যাঁদের করোনা হয়েছে বলে প্রাথমিক সন্দেহ করা হচ্ছে-- তাঁদের রাখার কথা বলা হয়েছে। কেন্দ্রের মতে, অনেকটাই নিভৃতবাসের ধাঁচে এই কেন্দ্রগুলি স্কুল-কলেজ, হস্টেল বা লজে বানানো সম্ভব। তবে ওই কেন্দ্রগুলিকে কোভিড হাসপাতালের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রেখে কাজ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যাতে কোনও ব্যক্তি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে চট করে হাসপাতালে স্থানান্তরিত করে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হয়।
আরও পড়ুন: দিল্লি সাজানো স্থগিত থাক, চিঠি সনিয়ার
দ্বিতীয়টি, নির্দিষ্ট কোভিড স্বাস্থ্য কেন্দ্র। যে করোনা রোগীদের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল, তাঁদের এই ধরনের কেন্দ্রে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই কেন্দ্রগুলি করোনা রোগীদের জন্য নির্দিষ্ট থাকা হাসপাতালে তৈরি করাটাই বাঞ্ছনীয়। যদি একান্তই অন্য হাসপাতালে করতে হয়, তা হলে করোনা-আক্রান্তদের সম্পূর্ণ আলাদা ব্লক বা অংশে রাখতে হবে। সেই অংশের সঙ্গে মূল হাসপাতাল বা অন্য রোগীদের কোনও সংস্পর্শ থাকবে না। করোনা রোগী ও চিকিৎসাকর্মীদের যাতায়াতের রাস্তাও সম্পূর্ণ আলাদা রাখতে হবে।
এবং তৃতীয়টি, সার্বিক করোনা হাসপাতাল। এখানে মূলত সঙ্কটজনক রোগীদের রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, যাতে ওই হাসপাতালে আইসিইউ, ভেন্টিলেটর, অক্সিজেনযুক্ত শয্যার ব্যবস্থা থাকে।
সংক্রমিত এলাকাগুলিকে ক্লাস্টারের মাধ্যমে ছোট গণ্ডিতে বেঁধে দিয়ে যেমন সাফল্য এসেছে, তেমনই সুরাত, বেঙ্গালুরু, পুণের মতো স্মার্ট সিটি-তে করোনার সংক্রমণ রুখতে প্রযুক্তিকে (জিয়ো ফেন্সিং) কাজে লাগানো হচ্ছে বলে জানান স্বাস্থ্য যুগ্মসচিব। তিনি বলেন, কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে রোগী বা নিভৃতবাসীদের গতিবিধির উপরে নজর রাখা হচ্ছে। এই কৌশলে সার্বিক ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি খেয়াল রাখা হচ্ছে আক্রান্ত ও চিকিৎসকদের স্বাস্থ্যের। এর ফলে সাফল্য আসছে বলে দাবি করেছেন তিনি। তবে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বিভিন্ন ধর্মের, বিভিন্ন প্রদেশের বার্ষিক উৎসব আসতে চলেছে। সেই সময়েও যাতে কড়া ভাবে লকডাউনের নিয়ম পালন করা হয়, তা নিশ্চিত করার উপরে জোর দিয়েছে কেন্দ্র। ধর্মগুরুদের সঙ্গেও এ নিয়ে কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্র কর্তারা। কেন্দ্র জানিয়েছে, রেল মন্ত্রক ২০৫০টি কামরায় ৪০ হাজার আইসোলেশন-শয্যা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। রোজ এমন ৩১৫টি করে বেড বানানোর কাজ চলছে।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)