Narendra Modi

করোনায় স্তব্ধ রাজধানীতে ঝড়ের গতিতে এগোচ্ছে ২০ হাজার কোটির সৌন্দর্যায়ন প্রকল্প, জনরোষের মুখে কেন্দ্র

শুধু সংসদভবনের জন্যই ৯৭১ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। তা কোভিড রোখার কাজে লাগানো যেত বলে মন বিরোধীদের।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২১ ১৪:৪৬
Share:

২০ হাজার কোটি টাকা খরচ করে সৌন্দর্যায়ন প্রকল্প করছে কেন্দ্র। —ফাইল চিত্র।

চিতা জ্বালানোর জায়গা না পেয়ে লোকালয়েই তুলে আনতে হয়েছে শ্মশান। দালালের হাত থেকে চড়া দামে কেনা অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে হাসপাতালের বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন রোগীর পরিজনরা। করোনার গ্রাসে বিধ্বস্ত রাজধানীতে গত কয়েক দিনে এমন অজস্র দৃশ্য ধরা পড়েছে সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায়। চারিদিকে এই থমথমে পরিবেশের মধ্যেও মধ্য দিল্লিতে ঝড়ের গতিতে দৌড়চ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারের নয়া সংসদ ভবন নির্মাণ এবং সংসদ ভবন চত্বরের সৌন্দর্যায়ন প্রকল্প। এমনকি, রাজধানীতে দৈনিক সংক্রমণ যে দিন ৩০ হাজার ছুঁইছুঁই, সেই দিনই তিনটি নতুন ভবন নির্মাণের জন্য দরপত্র চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। শুধু তাই নয়, করোনার প্রকোপে যাতে সৌন্দর্যায়নের কাজ থমকে না যায়, তার জন্য স্বাস্থ্য পরিষেবার মতোই নয়া সংসদ ভবন নির্মাণ প্রকল্পকে জরুরি পরিষেবার অন্তর্ভুক্ত করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। তাদের এই সিদ্ধান্ত ঘিরে জাতীয় রাজনীতি তো বটেই, সমাজের প্রায় সব ক্ষেত্রেই সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

Advertisement

নোভেল করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় কার্যত লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছে দিল্লি। এই মুহূর্তে ২০ হাজারেরও বেশি দৈনিক সংক্রমণ ধরা পড়ছে। দৈনিক মৃত্যু রয়েছে ৪০০-র আশেপাশে। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে আগামী ৩ মে পর্যন্ত লকডাউনের মেয়াদ বাড়িয়েছে অরবিন্দ কেজরীবালের সরকার। জরুরি পরিষেবার বাইরে সমস্ত কাজকর্ম বন্ধ রয়েছে সেখানে। কিন্তু ইন্ডিয়া গেট সংলগ্ন যে এলাকা দিল্লির প্রাণকেন্দ্র, সেই এলাকা গমগম করছে রাজমিস্ত্রি, খননকর্মী এবং ট্রাক-লরির আনাগোনায়। কোদাল হাতে ভিত খুঁড়ে চলেছেন একদল শ্রমিক। আর একদল কড়াইতে সেই মাটি মাথায় চাপিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লরিতে ফেলছেন। লকডাউনে কাজ বন্ধ নেই কেন জানতে চাইলে, ‘সেন্ট্রাল ভিস্তা অ্যাভিনিউ উন্নয়নের কাজ চলছে’ লেখা ব্যারিকেড দেখিয়ে বলেন ‘‘এখানে কাজ থামবে না।’’ উত্তরপ্রদেশের জৌনপুর থেকে কাজ করতে এসেছেন বলে জানান তিনি।

১৯৩০ সালে ব্রিটিশ স্থপতি স্যর এডউইন লুটিয়েন্সের নকশা অনুযায়ী রাজধানীতে যে প্রশাসনিক স্থাপত্য গড়ে উঠেছিল , দেশের সংসদ ভবনও তার মধ্যে পড়ে। সেই ‘লুটিয়েন্স দিল্লি’-রই ভোলবদল করতে উদ্যত হয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। নতুন সংসদভবন-সহ ঐতিহ্যবহনকারী সমস্ত সরকারি ভবনগুলিকে সেখানে সরিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। তার জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে এই প্রকল্পের জন্য দরপত্র হাঁকা শুরু হয়। তখনও যদিও করোনা হানা দেয়নি। কিন্তু নোটবন্দি, জিএসটি নীতির ধাক্কায় দেশে অর্থনৈতিক সঙ্কটের কালো ছায়া নেমে এসেছিল। সেই পরিস্থিতিতে খামোকা নতুন করে সংসদ ভবন নির্মাণের প্রয়োজন পড়ল কেন, রাজনীতির অন্দর থেকেই প্রশ্ন উঠে আসতে শুরু করে। যদিও তাতে কর্ণপাত করেনি কেন্দ্রীয় সরকার।

Advertisement

পুরোদমে চলছে নির্মাণকার্য।

কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতেও বিপুল টাকা খরচ করে নয়া সংসদ ভবনের নির্মাণের মতো ‘বিলাসিতা’ সরকারের সাজে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন বিরোধী শিবিরের রাজনীতিকরা। দিল্লি-সহ দেশের বিভিন্ন রাজ্যের হাসপাতালগুলিতে অক্সিজেনের ঘাটতি মেটাতে ১৬২টি অক্সিজেন জেনারেশন প্লান্ট তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। তাতে খরচ পড়ছে ২০১ কোটি টাকা। তাই বিরোধীদের প্রশ্ন, শুধুমাত্র নতুন সংসদ ভবনের জন্য যে ৯৭১ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে, তা দিয়ে আরও কত অক্সিজেন প্লান্ট বসানো যেত, তা কি ভেবে দেখেছে সরকার? গত ২০ এপ্রিল প্রস্তাবিত নয়া সংসদ ভবন চত্বরের যেখানে বর্তমানে ইন্দিরা গাঁধী ন্যাশনাল সেন্টার রয়েছে, সেটিকে ভেঙে আরও তিনটি ভবন নির্মাণের জন্য দরপত্র হাঁকে কেন্দ্র।

সেই প্রসঙ্গে কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গাঁধী টুইটাকে লেখেন, ‘কোভিড সঙ্কট, নমুনা পরীক্ষা নেই, টিকা নেই, অক্সিজেন নেই, আইসিইউ নেই...এই পরিস্থিতিতেও সরকারের কাছে কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই’! যুব কংগ্রেস নেতা শ্রীনিবাস বি ভি টুইট করেন, ‘সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রকল্পে ২০ হাজার কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। ওই টাকায় যদি ভেন্টিলেটর অথবা আইসিইউ শয্যা কেনা যেত, তাহলে আজ লক্ষ লক্ষ ভারতীয় অন্তত বেঁচে থাকতেন। আফশোস এই যে, যাঁরা নীতি-নিয়ম তৈরি করছেন, তাঁদের কাছে মানুষের জীবনের থেকে বিলাসিতার মূল্য অনেক বেশি’। নেটাগরিকদের একাংশও এ নিয়ে টুইটারে মুখ খোলেন। কিন্তু তার পরেও সৌন্দর্যায়ন প্রকল্পের গতি স্তিমিত হয়নি। বরং রাজধানী জুড়ে লকডাউন কার্যকর থাকলেও, নির্মাণে নিযুক্ত শ্রমিকদের কাজে এবং আনাগোনায় কোনও বাধা আসেনি।

নির্মামকার্যকে জরুরি পরিষেবার অন্তর্গত করার প্রস্তাব ও সম্মতিপত্র।

১৬ এপ্রিল বিজ্ঞপ্তি জারি করে গোটা নির্মাণকার্যকেই জরুরি পরিষেবার আওতায় আনা হয়। তার আওতায় ১৮০টি গাড়িকে লকডাউন থেকে ছাড়পত্রও দেওয়া হয়েছে। তবে এই মুহূর্তে খননকার্যে যে ৩০ জন শ্রমিক দিনে ১২ ঘণ্টা কাজ করছেন, নির্মাণস্থলে তাঁদের থাকার কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি। করোলবাগ, সরাইকালে খান এবং নিজামউদ্দিন এলাকায় আলাদা আলাদা ঘরভাড়া নিয়ে রয়েছেন তাঁরা। প্রতি দিন সকালে ঠিকাদারের ঠিক করে দেওয়া বাসে বা গাড়িতে চেপে সেখান থেকে কাজে আসেন তাঁরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঠিকাদার জানিয়েছেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় কার্ফু চালু হওয়ার আগে ভিন্ রাজ্য থেকে আসা ৫০০ শ্রমিক কাজ করছিলেন। তাঁদের বেশির ভাগ বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। যাঁরা থেকে গিয়েছেন, তাঁদের অভিযোগ, মার্চ থেকে পারিশ্রমিক পাননি। এমন অবস্থায় বাড়ি ফিরতে পারছেন না। টাকা হাতে পেলে বাড়ি ফিরে যাবেন বলে ঠিক করেছেন তাঁরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement