ছবি পিটিআই।
দেশজুড়ে হাহাকারের মধ্যে অবশেষে চাপের মুখে আমেরিকা, ব্রিটেন-সহ ছ’টি দেশ থেকে আপৎকালীন ভিত্তিতে অক্সিজেন আমদানির জন্য আসরে নামল কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্রিটেন, আমেরিকা, জার্মানি, জাপান, ইটালি এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে নিযুক্ত ভারতীয় দূতবাসগুলিকে এই মর্মে নির্দেশ পাঠানো হয়েছে সাউথ ব্লক থেকে। বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট দেশগুলির নেতৃত্বের সঙ্গে অবিলম্বে যোগাযোগ করে, দ্রুত এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
এখন ভারতে অক্সিজেন উৎপাদনের ক্ষমতা দিন প্রতি সাত হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু কোভিডের দ্বিতীয় ধাক্কা সামলাতে গিয়ে তাকে নগণ্য বলে মনে হচ্ছে। রাজধানীর সমস্ত বড় হাসপাতালগুলিতেই অক্সিজেনের ভাঁড়ারে প্রবল টান। এখন প্রতিদিন অক্সিজেনের চাহিদা ছয় হাজার মেট্রিক টন ছাড়িয়ে ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী। গত সপ্তাহেই সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, বর্তমান সঙ্কটের পরিপ্রেক্ষিতে ৫০ হাজার মেট্রিক টন মেডিক্যাল অক্সিজেন আমদানির জন্য দরপত্র দেওয়া হয়েছে। বিদেশ মন্ত্রকের বিভিন্ন দূতাবাসের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনাও চলছে বলে জানানো হয়েছিল।
দিল্লির সঙ্গে যে রাজ্যগুলিতে অক্সিজেন চাহিদা তুঙ্গে, তার মধ্যে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত, পঞ্জাব, হরিয়ানা, তামিলনাড়ু, হরিয়ানা, পঞ্জাব, কেরল, মধ্যপ্রদেশ কর্নাটক। অক্সিজেন সঙ্কট নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ফেব্রুয়ারি মাসেই প্রথম লাল পতাকা উড়িয়েছেল। তখন ভারতের কোভিড পরিস্থিতি অনেকটাই ভাল ছিল।
অক্সিজেনের পাশাপাশি প্রতিষেধকের কাঁচামাল সংক্রান্ত ভাঁড়ারেও রয়েছে টান। এ ব্যাপারে রফতানি সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা যাতে আমেরিকা তুলে নেয়, তার জন্য কূটনৈতিক সক্রিয়তা যতটা সম্ভব বাড়িয়েছে সাউথ ব্লক। এ ব্যাপারে কয়েকদিন আগেই সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার কর্তা আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে অনুরোধ করেছেন। ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকেও বার্তা দেওয়া হচ্ছে, তারা বিষয়টি ভেবে দেখবে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও হাতে-কলমে পদক্ষেপ করতে দেখা যায়নি বাইডেন সরকারকে।
বিরোধী শিবিরের বক্তব্য, গত কয়েক মাস ধরে নিজের ভাবমূর্তি বাড়াতে বিভিন্ন দেশকে প্রতিষেধক এবং ওষুধ দেওয়ার কূটনীতি নিয়েই প্রচার করে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, অক্সিজেন থেকে শুরু করে ভারতে তৈরি প্রতিষেধক — সমস্ত কিছুর জন্যই আসলে বিভিন্ন দেশের দাক্ষিণ্যের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে তাঁর সরকারকে। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রভাব তৈরিতে প্রতিষেধক কূটনীতিকে অস্ত্র করা দূর স্থান, উল্টে ‘আত্মনির্ভর’ ভারতকেই পরমুখাপেক্ষী হতে হচ্ছে। ফলে সঙ্কটে পড়তে হচ্ছে দেশের মানুষকেই।