মুম্বইয়ে ঘরে ঘরে গিয়ে করা হচ্ছে স্বাস্থ্য পরীক্ষা।—ছবি পিটিআই।
প্রথম দফার লকডাউন যত এগিয়েছে, দেশে মোট করোনা-সংক্রমিতের সংখ্যা ততই লাফিয়ে বেড়েছে। আজ, দ্বিতীয় দফার লকডাউনের প্রথম দিনে যে সংখ্যাটা পৌঁছল প্রায় ১২ হাজারে। আর আজই দেশের ১৭০টি জেলাকে সংক্রমণের ‘হটস্পট’ হিসেবে চিহ্নিত করল কেন্দ্র। যার মধ্যে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের ৪টি জেলা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার অবশ্য আগেই রাজ্যের বেশ কিছু এলাকাকে চিহ্নিত করে ফেলেছিল। সরাসরি 'হটস্পট' বলা না-হলেও সেগুলিকে বলা হচ্ছিল ‘স্পর্শকাতর’ এবং ‘হাই-রিস্ক এলাকা’।
আজ স্বাস্থ্য মন্ত্রকের রুটিন সাংবাদিক বৈঠকে যুগ্মসচিব লব আগরওয়াল জানান, এই মুহূর্তে দেশের ১৭০টি জেলায় সংক্রমণের হার খুব বেশি বলে সেগুলিকে ‘হটস্পট’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সংক্রমণের খবর এসেছে কিন্তু ‘হটস্পট’ নয়, এমন জেলার সংখ্যা ২০৭টি। পশ্চিমবঙ্গের ৮টি জেলা এই তালিকায় পড়ছে। হোয়াইট জ়োন হিসেবে চিহ্নিত এই ২০৭টি জেলাগুলিতেও আগামী দিনে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে না দিল্লি। তাই সেখানে সংক্রমণ রুখতে বাড়তি নজরদারি করতে বলা হয়েছে রাজ্যগুলিকে। বাকি জেলাগুলিকে (২০১১-এর আদমসুমারি অনুযায়ী, জেলা ছিল ৬৪০টি। যে সংখ্যা বর্তমানে প্রায় একশো বেড়েছে) ‘গ্রিন জ়োন’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে কেন্দ্র।
সরকারের উদ্বেগ বাড়িয়ে আজ বিকেল পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ১০৭৬টি নতুন সংক্রমণের খবর পাওয়া গিয়েছে। রাতে দেশে মোট সংক্রমিতের সংখ্যা ১১,৯৩৩। এঁদের মধ্যে ১৩৪৩ জন সুস্থ হয়েছেন। মোট মৃত্যু ৩৯২। করোনা রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়লেও গোষ্ঠী-সংক্রমণের সম্ভাবনা আজও খারিজ করে দিয়েছেন লব। তিনি জানিয়েছেন, কিছু ‘হটস্পট’-এ স্থানীয় পর্যায়ে গোষ্ঠী-সংক্রমণ ছড়িয়েছে। যা রুখতে সেখানকার সংক্রমিত এলাকা বা ‘ক্লাস্টার’-গুলিকে গণ্ডিতে বেঁধে দিয়ে সংক্রমণ রোখার চেষ্টা চালু রয়েছে।
আরও পড়ুন: লকডাউনের মধ্যেই এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে দম্পতির কাছে এল সদ্যোজাত
মহারাষ্ট্রে সংক্রমণ ২৬০০ পেরিয়েছে। মুম্বইয়ের ধারাভি এলাকায় অষ্টম করোনা-রোগীর আজ মৃত্যু হয়েছে বলে বৃহন্মুম্বই পুরসভার দাবি। জয়পুরের রামগঞ্জ এলাকায় সংক্রমণ বাড়তে থাকায় রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত উদ্বিগ্ন।
তালিকায় পশ্চিমবঙ্গ
হটস্পট
• কলকাতা
• হাওড়া
• পূর্ব মেদিনীপুর
• উত্তর ২৪ পরগনা
হটস্পট নয়, কিন্তু সংক্রমণ
• কালিম্পং
• জলপাইগুড়ি
• হুগলি
• নদিয়া
• পশ্চিম বর্ধমান
• পশ্চিম মেদিনীপুর
• দক্ষিণ ২৪ পরগনা
• দার্জিলিং
*ক্লাস্টারযুক্ত হটস্পট, অর্থাৎ হটস্পট জেলার কোনও বিশেষ এলাকাকে গণ্ডিতে বাঁধতে হয়েছে, এমন তালিকায় পশ্চিমবঙ্গের কোনও জেলা নেই।
যদিও আজ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন দাবি করেছেন, গোটা বিশ্বে সম্ভবত ভারতই করোনা-মোকাবিলায় সব চেয়ে ভাল কাজ করেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী এমন দাবি করলেও করোনা-সংক্রমণ মোকাবিলার প্রশ্নে এই মুহূর্তে দেশের সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ, ওই ১৭০টি 'হটস্পট' জেলা। আজ সমস্ত রাজ্যের মুখ্যসচিব, স্বাস্থ্যসচিব, স্বাস্থ্য আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন ক্যাবিনেট সচিব রাজীব গৌবা। স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, ওই বৈঠকে 'হটস্পট'-গুলিতে কী ভাবে সংক্রমণ রোখা সম্ভব, হবে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। যুগ্মসচিব জানান, 'হটস্পট'-এ বিশেষ দল নামানো হয়েছে। যারা এলাকার প্রতিটি বাড়ি ঘুরে কারও করোনার উপসর্গ রয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখছে। 'ক্লাস্টার' বা সংক্রমণের ভরকেন্দ্রগুলিকে গণ্ডিতে বাঁধায় বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি 'ক্লাস্টার'-এ ঢোকার ও বেরোনোর আলাদা পথ তৈরি করতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বান্দ্রা-কাণ্ডে ভিডিয়ো প্রচারে উস্কানি, গ্রেফতার অভিযুক্ত যুবক
'হটস্পট' এলাকায় যাঁরা সর্দি-কাশি বা শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের পরীক্ষার পাশাপাশি সংক্রমিত এলাকাগুলির বাইরে যে ৫-৭ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের ‘বাফার জ়োন’ নির্দিষ্ট করা হয়েছে, সেখানেও কারও এই ধরনের উপসর্গ থাকলে পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, কোনও হটস্পট এলাকা থেকে যদি টানা ২৮ দিন নতুন কোনও সংক্রমণের খবর না-আসে, তা হলেই সেটিকে ‘গ্রিন জ়োন’ হিসেবে ঘোষণা করা যাবে। তবে একই সঙ্গে ‘গ্রিন জ়োন’-গুলিতেও বাড়ি-বাড়ি ঘুরে স্বাস্থ্য-পরীক্ষা শুরু হয়েছে। মন্ত্রকের বক্তব্য, সংক্রমণ-মুক্ত এলাকাগুলিতে যাতে কোনও ভাবেই সংক্রমণ প্রবেশ করতে না-পারে, তাই ওই সাবধানতা নেওয়া হয়েছে।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.i• ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)