ছবি: সংগৃহীত।
দেশে করোনা পরীক্ষা বাড়াতে নরেন্দ্র মোদী সরকারের অন্যতম ভরসা অ্যান্টিজেন পরীক্ষা। কিন্তু অতীতের অ্যান্টিবডি পরীক্ষার মতোই অ্যান্টিজেন পরীক্ষায়ও ভুল তথ্য পাওয়া যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন রাজ্য থেকে। রাজস্থান সরকারের অভিযোগ, একশোটির মধ্যে পঞ্চাশটি নমুনার ক্ষেত্রে ভুল ফল দিচ্ছে অ্যান্টিজেন টেস্ট। একই অভিযোগ অরবিন্দ কেজরীবাল সরকারের। দিল্লিতে অন্তত ১৮-২০% পরীক্ষার ফলাফল ভুল এসেছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, যে পরীক্ষাকে অস্ত্র করে সংক্রমণ রোখার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা, তার গোড়াতেই গলদ।
অতীতে পরীক্ষা সংখ্যা বাড়াতে চিন থেকে অ্যান্টিবডি কিট আমদানি করেছিল ভারত। তাতে ভুল ফল আসায় অ্যান্টিবডি পরীক্ষা বাতিল করতে হয়। পরবর্তীতে অ্যান্টিজেন কিট আনা হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে। এ বার সেই কিটও ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় প্রশ্ন উঠছে অ্যান্টিজেন পরীক্ষার ভবিষ্যৎ নিয়ে।
অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় করোনাভাইরাসের প্রোটিনের উপস্থিতি বুঝিয়ে দেয় শরীরে ওই ভাইরাস রয়েছে কিনা। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, এতে সমস্যা হল নমুনায় ভাইরাসের প্রোটিনের অংশ কী পরিমাণে রয়েছে, তার উপরে পরীক্ষার ফল অনেকাংশেই নির্ভর করে। সংক্রমণের ১৪ দিনের মাথায় যদি কাউকে পরীক্ষা করা হয়, তা হলে ওই ব্যক্তির শরীরে ভাইরাল পার্টিক্যল কম থাকে। কিন্তু কোনও ব্যক্তিকে সাত দিনে পরীক্ষা করলে তা অনেক বেশি পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে দুজনেই সংক্রমিত, কিন্তু পরীক্ষায় দু’রকমের ফল আসার সম্ভাবনা।
মাত্র আধ ঘন্টার মধ্যে ফল ও প্রয়োজনে বাড়ি বাড়ি ঘুরে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা যায় বলে ওই পরীক্ষার উপরে জোর দেয় কেন্দ্র। গত ১৪ জুন একটি চিঠিতে কেন্দ্র সমস্ত গণ্ডিবদ্ধ সংক্রমিত অঞ্চলে জ্বর-সর্দির উপসর্গ থাকলেই বাসিন্দাদের ওই পরীক্ষা করার নির্দেশ দেয়। তবে সতর্কবার্তায় বলা হয়, অ্যান্টিজেন পরীক্ষার ফল কোনও ভাবেই চূড়ান্ত বলে ধরে নেওয়া যাবে না। মন্ত্রকের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় পজ়িটিভ মানে সেই ব্যক্তি অবশ্যই আক্রান্ত। অথচ ফল নেগেটিভ আসলেই যে তিনি আক্রান্ত নন এ কথা জোর দিয়ে বলা মুশকিল।’’ স্বাস্থ্য আধিকারিকদের মতে, সংক্রমিত এলাকার জনগোষ্ঠীতে কত জন করোনা-পজ়িটিভ, তা বুঝতেই অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হয়।
রাজস্থান সরকারের অভিযোগ, অর্ধেক ফল ভুল হলে পরীক্ষা অর্থহীন হয়ে দাঁড়ায়। গত সপ্তাহে রাজস্থান কেন্দ্রকে জানিয়েছে, গোড়া থেকেই অ্যান্টিজেন পরীক্ষার ফলে গরমিল ছিল। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও অ্যান্টিজেন পরীক্ষার ত্রুটি মেনেছেন। তাঁদের বক্তব্য, এই পরীক্ষার ভুল ফলের অর্থ, উপসর্গহীন আক্রান্ত নিজেকে নেগেটিভ ভেবে স্বাভাবিক জীবনযাপন করলে, ওই ব্যক্তির অন্যকে সংক্রমিত করার সম্ভাবনা বাড়ে। তিনি অজান্তে অন্যদের বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছেন। বোঝা সম্ভব হচ্ছে না করোনা সংক্রমণের প্রকৃত চিত্র।