দিল্লির বর্তমান পরিস্থিতি আলোচনা করতে আগামিকাল সর্বদলীয় বৈঠকের ডাক দিয়েছেন অমিত শাহ। ছবি: পিটিআই।
রাজধানী দিল্লির করোনা পরিস্থিতি ক্রমশ উদ্বেগজনক স্থানে পৌঁছে যাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্দেশে এ বার মাঠে নামলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আজ সকালে তিনি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল ও উপরাজ্যপাল অনিল বৈজলের সঙ্গে বৈঠকের পরে বিকালে তিন পুরকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেন। দিল্লির বর্তমান পরিস্থিতি আলোচনা করতে আগামিকাল সর্বদলীয় বৈঠকের ডাক দিয়েছেন তিনি।
রাজ্যগুলির মধ্যে মোট সংক্রমিতের সংখ্যার নিরিখে মহারাষ্ট্র ও তামিলনাড়ুর পরেই রয়েছে দিল্লি। গত তিন দিন ধরে দু’হাজারের বেশি মানুষ সংক্রমিত হয়ে চলেছেন রাজধানীতে। গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড সংক্রমিত ২২২৪ জন। মারা গিয়েছেন ৫৬ জন। মোট সংক্রমণ ৩৮,৯৫৮। মোট মৃত্যু ১২৭১। শুধু দিল্লিতেই কন্টেনমেন্ট জ়োন বা সংক্রমিত গণ্ডিবদ্ধ অঞ্চলের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাড়ে চারশোর কাছাকাছি।
এই পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেয় মোদী সরকার। তা ছাড়া যে হেতু দিল্লির আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্ব কেন্দ্রের হাতে, তাই দিল্লির সার্বিক পরিস্থিতির দায় কিছুটা হলেও কেন্দ্রের ঘাড়ে বর্তায়। অনেকেই বলছেন, এ সবের পাশাপাশি কেজরীবাল সরকারের করোনা-মোকাবিলা নিয়ে কেন্দ্র যে সন্তুষ্ট নয়, তা অমিত শাহের এ ভাবে আসরে নামায় স্পষ্ট। আজকের বৈঠকের পরে স্থির হয়েছে যে, গোটা দিল্লিতে দ্রুত বাড়ানো হবে পরীক্ষার সংখ্যা। মাঝে যা কমে গিয়েছিল। প্রতি দিন দিন গড়ে পাঁচ হাজারের কাছাকাছি পরীক্ষা হচ্ছে বলে গত সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছিল দিল্লি সরকার। সেই সংখ্যা দু’দিনের মধ্যে বাড়িয়ে দ্বিগুণ ও ছ’দিনের মধ্যে তিন গুণ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন: ফের লকডাউনের জল্পনা ওড়াল কেন্দ্র, সংক্রমিত এলাকায় কঠোর বিধিই ভরসা
আরও পড়ুন: দেশে নভেম্বরে শীর্ষে যাবে সংক্রমণ, বলছে সমীক্ষা
সংক্রমিতের সংখ্যা বাড়ায় টান পড়েছে হাসপাতালের শয্যাতেও। পরিস্থিতি দ্রুত মোকাবিলায় দিল্লি সরকারকে হাসপাতালের ধাঁচে পরিকাঠামো রয়েছে, এমন পাঁচশো কামরা দিয়ে সাহায্য করবে রেল। মন্ত্রক জানিয়েছে, এই সব কামরার বেশির ভাগটাই রাখা থাকবে আনন্দবিহার স্টেশনে। অমিত শাহের দাবি, এর ফলে দিল্লিতে এক ধাক্কায় আট হাজার শয্যা বাড়বে। রেলের ৫৪টি আইসোলেশন কোচ ইতিমধ্যেই দিল্লির শকুরবস্তি রক্ষণাবেক্ষণ ডিপোয় এসে গিয়েছে (আজ মোট ২০৪টি আইসোলেশন কোচ গিয়েছে দিল্লি-সহ ৪ রাজ্যে)। ছতরপুরের রাধাস্বামী সৎসঙ্গ বিয়াস ক্যাম্পাসে ১০ হাজার করোনা রোগীর থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আজ বৈঠকের পরে সেখানকার পরিকাঠামো দেখতে যান দিল্লির উপরাজ্যপাল।
গণ্ডিবদ্ধ সংক্রমিত জ়োনে সংক্রমণ রুখতে প্রতিটি ঘরে গিয়ে পরীক্ষার সিদ্ধান্ত হয়েছে আজ। অমিত বলেন, ‘‘কিছু দিনের মধ্যেই ভোট কেন্দ্রগুলিতে সংক্রমণ পরীক্ষার ব্যবস্থা চালু হয়ে যাবে। সংক্রমিতের সংস্পর্শে কারা এসেছিলেন, তাঁদের চিহ্নিতকরণে বিশেষ জোর দিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যেই ওই সমীক্ষা সেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’ সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালেও ৬০ শতাংশ শয্যা করোনা রোগীদের জন্য কম দামে সংরক্ষিত রাখা হবে বলে ঠিক হয় বৈঠকে। দিল্লিতে বেসরকারি পরীক্ষাগারে কত কম দামে করোনা পরীক্ষা হতে পারে, সে বিষয়ে আগামিকাল সরকারকে রিপোর্ট জমা দেবেন নীতি আয়োগ সদস্য (স্বাস্থ্য) ভি কে পল।
আগামী দিনে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক, এমস, দিল্লি স্বাস্থ্য বিভাগ ও তিন পুরসভার প্রতিনিধিদের নিয়ে গড়া চারটি দল রাজধানীর প্রতিটি হাসপাতাল ঘুরে সেখানকার পরিকাঠামো নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে রিপোর্ট দেবে। সেই দলে একাধিক চিকিৎসকও থাকবেন। দিল্লি সরকারের কাজে সাহায্য করার জন্য আন্দামান ও নিকোবর থেকে দু’জন এবং অরুণাচল প্রদেশ থেকে দু’জন আমলাকে সাময়িক ভাবে রাজধানীতে উড়িয়ে আনা হচ্ছে। আরও দুই আমলাকে এই প্রক্রিয়ায় যোগ করা হয়েছে। আজ থেকেই এমসে টেলিফোনের মাধ্যমে কোভিড আক্রান্তদের সাহায্যের জন্য একটি ২৪ ঘণ্টার কল সেন্টার চালু করা হয়েছে।