প্রতীকী ছবি।
প্রবল বৃষ্টির চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে দীর্ঘ ১৮ মাসের বিরতি পেরিয়ে বুধবার ক্লাসে ফিরল দিল্লির বিভিন্ন স্কুলের নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারা।
৫০% হাজিরার বিধি মেনে ছাত্রছাত্রীদের ডাকা হয় এ দিন। তবে অতিমারি আবহে চেনা স্কুলজীবনের অনেক কিছুই বদলে গিয়েছে পড়ুয়াদের কাছে। ছিল না একই বেঞ্চে বসে বন্ধুর সঙ্গে খুনসুটির সুযোগ। বরং বসতে হয়েছে একটি আসন ছেড়ে ছেড়ে। পাশাপাশি ক্লাসে ঢোকার আগে তাপমাত্রা মাপার মতো একাধিক কোভিড বিধিও মানতে হয়েছে ছাত্রছাত্রীদের। ফের ঘড়ির কাঁটা ধরে টিফিনের ঘণ্টা বাজলেও বন্ধুর সঙ্গে টিফিন ভাগ করে খাওয়ার আনন্দও এখন অতীত।
কোনও পড়ুয়ার মধ্যে সংক্রমণের লক্ষণ নজরে এলে যাতে তাড়াতাড়ি বাকিদের থেকে তাকে আলাদা করা যায় সে জন্য সরকারি নির্দেশ মেনে প্রত্যেক স্কুলে ব্যবস্থা করা হয়েছে ‘আইসোলেশন রুম’–এর। যে স্কুলগুলিতে দুটো শিফ্টে ক্লাস হয়, সেখানে সকালের শিফ্টের ছাত্রছাত্রীদের বেরোনো এবং পরের দফার ছাত্রছাত্রীদের ঢোকার মধ্যে এক ঘণ্টার ব্যবধান রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তবে যেহেতু ক্লাসরুম থেকেই অনলাইনেও ক্লাস নিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা, তাই ছাত্রছাত্রীদের একাংশ স্কুলে আসার বদলে এ দিনও বাড়ি থেকেই ক্লাসে যোগ দিয়েছে। হারকোর্ট বাটলার নামে এক স্কুলে মাত্র পাঁচজন পড়ুয়া এ দিন স্কুলে আসে। তবে দিল্লিতে সংক্রমণ চিত্র আগের চেয়ে ভাল হলেও দেশের একাধিক জায়গায় সংক্রমণ বৃদ্ধি নজরে এসেছে। সেই প্রেক্ষিতে দিল্লির উপ-মুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়ার বক্তব্য, ‘‘যদি সংক্রমণ বৃদ্ধির ইঙ্গিত মেলে তা হলে সঙ্গে সঙ্গে ফের বন্ধ করে দেওয়া হবে স্কুলগুলি। স্কুল খুলতে সময় লাগে। বন্ধ যখন তখনই করা যায়।’’ নিচু ক্লাসগুলির ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে ফেরানো নিয়ে পরবর্তী বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তবে সব স্কুলই যে খুলেছে তা নয়। সরকার উঁচু ক্লাসের জন্য স্কুল খোলার নির্দেশ দিলেও পরিস্থিতির নিরিখে আপাতত তা পুরোপুরি বন্ধ রাখারই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন একাধিক স্কুলের কর্তৃপক্ষ। তেলঙ্গানাতেও ১ সেপ্টেম্বর থেকে স্কুল খুলেছে। তবে সেই প্রসঙ্গে এ দিন একাধিক নির্দেশ দিয়েছে তেলঙ্গনা হাই কোর্ট। যার মধ্যে অন্যতম, ছাত্রছাত্রীদের ক্লাসে ফেরানোর জন্য চাপ দিতে পারবে না স্কুলগুলি। সঙ্গে কোভিড বিধি মানা সংক্রান্ত একাধিক নির্দেশও দেওয়া হয় আদালতের তরফে।
এ দিকে চিন্তা বাড়াচ্ছে কেরলের সংক্রমণ চিত্র। রাজ্যে প্রায় ৮৫% রোগী বাড়িতে নিভৃতবাসে রয়েছেন। পরিস্থিতির উন্নতির লক্ষ্যে ‘কৌশলগত লকডাউন’ দরকার বলে এ দিন জানায় কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। তবে কেরল তাদের নির্দেশিকা উপেক্ষা করছে বলে দাবি মন্ত্রকের কর্তাদের। আক্রান্তরা পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে বিধি মেনে চলছেন না বলেও দাবি তাঁদের। বিষয়টির নজরদারির ক্ষেত্রেও রাজ্যের কর্তাদের গাফিলতি রয়েছে বলেও ভর্ৎসনা করেন তাঁরা। যার জেরে সংক্রমণে লাগাম পরাতে এত সমস্যা হচ্ছে বলে দাবি তাঁদের। কেরল থেকে সে রাজ্যে এলে সাত দিনের বাধ্যতামূলক নিভৃতবাসে থাকতে হবে বলে এ দিন ঘোষণা করেছে কর্নাটক। কেরলে বুধবার নতুন করে ৩০ হাজার জন আক্রান্তের হদিস মিলেছে বুধবার।
সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে বাজারে চলে আসতে পারে ‘জ়াইকোভ-ডি’, দাবি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিন-এর পর জ়াইডাস গোষ্ঠীর তৈরি এই টিকা ভারতের মাটিতে তৈরি দ্বিতীয় করোনা টিকা। টিকাটির দাম কত হবে তা নিয়ে কৌতূহল বাড়ছে। তবে জ়াইডাসের এক কর্তার কথায়, ‘‘এই নিয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। কিন্তু তা সাধ্যের মধ্যেই থাকবে।’’