চলছে থার্মাল স্ক্যানিং।—ছবি এএফপি।
সত্তর বছরের বৃদ্ধ সম্প্রতি ইটালি হয়ে জার্মানি থেকে ফিরেছিলেন পঞ্জাবের বাড়িতে। হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে বাঙ্গা শহরের সরকারি হাসপাতালে গত কাল তিনি মারা যান। আজ এল তাঁর করোনা-পরীক্ষার ‘পজ়িটিভ’ রিপোর্ট।
করোনায় দেশে চতুর্থ মৃত্যু। কর্নাটকের কলবুর্গী, দিল্লি, মুম্বইয়ের পরে পঞ্জাবের বাঙ্গা। ইরানেও করোনা-আক্রান্ত এক ভারতীয় মারা গিয়েছেন আজ। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের হিসেবে দেশে সংক্রমিতের সংখ্যা এখন ১৭৩। যদিও আইসিএমআর বলছে, সংখ্যাটা ১৮২।
পঞ্জাবে মৃত করোনা-রোগীর বাড়ি পাথলাওয়া নামে যে গ্রামে, তার তিন কিলোমিটার ব্যাসার্ধ জুড়ে এলাকা সিল করা হয়েছে। শুক্রবার মধ্যরাত থেকে সরকারি-বেসরকারি বাস ও অটো-সহ যাবতীয় গণ-পরিবহণ বন্ধ করে দিচ্ছে অমরেন্দ্র সিংহের সরকার। সরকারি অফিসে যে সমস্ত ক্ষেত্রে আমজনতার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের প্রয়োজন পড়ে, সেগুলিও বন্ধ হচ্ছে। তালা পড়ছে হাসপাতালের আউটডোর ও সমস্ত ডেন্টাল কলেজে। ২০ জনের বেশি লোকের জমায়েতও নিষিদ্ধ।
পঞ্জাব স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, বৃদ্ধের ডায়াবিটিস ও উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা ছিল। দেশে ফেরার পরে সর্দি-জ্বর হয়েছিল তাঁর। বুধবার সকালে বুকে ব্যথা হওয়ায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আধ ঘণ্টার মধ্যেই মারা যান তিনি।
নওয়ানশহরের সিভিল সার্জন রাজেন্দ্র ভাটিয়া বলেন, ‘‘যে চিকিৎসক ও দু’জন সেবিকা ওই বৃদ্ধের চিকিৎসা করেছিলেন, তাঁরা এবং পরিজনেরা-সহ মোট ১৭ জনকে কোয়রান্টিনে পাঠানো হয়েছে।’’
মুখোশ তৈরির কাঁচামাল ও ভেন্টিলেটর রফতানি আজ নিষিদ্ধ করেছে কেন্দ্র। স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, এন-৯৫ মুখোশ যথেষ্ট সংখ্যায় মজুত রয়েছে। মুখোশ, স্যানিটাইজ়ারের জন্য কোনও ব্যবসায়ী অতিরিক্ত দাম নিলে তাঁর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে। মন্ত্রক সূত্রে আরও বলা হচ্ছে, কোয়রান্টিন সেন্টার থেকে কেউ পালালে তাঁর বিরুদ্ধে মহামারি আইনে ব্যবস্থা নিতে পারবে রাজ্য সরকার।
আজ প্রথম করোনা-সংক্রমণ ধরা পড়েছে গুজরাত এবং চণ্ডীগড়ে। চণ্ডীগড়ের আক্রান্ত ২৩ বছরের তরুণী সম্প্রতি লন্ডন থেকে ফিরেছিলেন। গুজরাতের আক্রান্তেরা এক জন রাজকোট, অন্য জন সুরাতের বাসিন্দা। মহারাষ্ট্রের সঙ্গে বাস-যোগাযোগ ও ৩১ মার্চ পর্যন্ত চাকরির সমস্ত পরীক্ষা বন্ধ রাখছে বিজয় রূপাণীর সরকার।
হায়দরাবাদের বেঙ্কটেশ্বর স্বামী তথা বালাজির মন্দির, গুজরাতের সোমনাথ ও দ্বারকাধীশ মন্দির বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অসমের কামাখ্যা মন্দির কাল থেকে দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ, তবে পুজো চলবে। দিল্লিতে ইন্ডিয়া গেট বন্ধ, সব রেস্তরাঁ বন্ধ, ২০ জনের বেশি লোকের জমায়েত নিষিদ্ধ। বন্ধ মুম্বইয়ের এসি লোকাল ট্রেন। উত্তরাখণ্ডের সমস্ত শপিং মল বন্ধ হয়েছে। গোটা রাজস্থানে ১৪৪ ধারা। মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত জানান, জরুরি পরিষেবা বাদে সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বশাসিত সমস্ত দফতর এবং সরকারি নিগমগুলি ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
রোমে আটকে পড়া ভারতীয়দের নিয়ে ২২ তারিখে ফিরবে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিমান। বেঙ্গালুরু বিমানবন্দরে বিদেশ-ফেরতদের বাঁ-হাতের উল্টো পিঠে স্থায়ী কালিতে দেওয়া হচ্ছে ছাপ— ‘‘অমুক তারিখ পর্যন্ত ঘরবন্দি থাকব।’’ একই ব্যবস্থা পঞ্জাবেও। ভারতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি হেঙ্ক বেকেডাম বলেছেন, ভারতে করোনা-পরীক্ষার সংখ্যা বাড়াতে হবে। সেই পথেই কাজ এগোচ্ছে। বিদেশে যাননি বা করোনা-আক্রান্তের সংস্পর্শে আসেননি, অথচ প্রবল শ্বাসকষ্ট ভুগছেন— ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে এমন রোগীদেরও পরীক্ষার আওতায় আনা হয়েছে।