ছবি: রয়টার্স।
রাজ্যের নাম কেরল। জেলার নাম পাতানামতিট্টা। সেই জেলার তিরুভাল্লার সাব-কালেক্টর তরুণ আইএএস বিজয় গয়াল। শুনলেই মনে হয় নিশ্চিন্ত জীবন। কিন্তু তা নয়, এই জেলাতেই শবরীমালা মন্দির। এবং করোনাভাইরাসের প্রকোপ।
“দেশে করোনাভাইরাসের প্রথম ঢেউ কেরলে। দ্বিতীয় ঢেউ আমাদের জেলায়, পাঁচ জন রোগী দিয়ে শুরু। এ দিকে শবরীমালা মন্দিরে দর্শন চলছে। সব থেকে খারাপটা ধরে নিয়েই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিলাম”—বলছেন বিজয়। ডাক্তারি ছেড়ে আইএএস হয়েছিলেন। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লেগেছে? “রোগীরা তো কেউ নিজেদের খোঁজই জানাতে চাইছিলেন না। তাই মোবাইলের টাওয়ার, রুট ম্যাপ, কল ডিটেলস রেকর্ড ধরে খোঁজ করতে হয়েছিল।” তবে বিজয়ের সামনে তার থেকেও কঠিন চ্যালেঞ্জ ছিল শবরীমালা মন্দির। তাই রাতারাতি মন্দিরের পথে নীলাক্কল ও পাম্বা ঘাঁটিতে দু’দফা স্ক্রিনিং-এর ব্যবস্থা করেছিলেন। মন্দির বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত সমস্ত ভক্তকে উপসর্গ পরীক্ষা করে তবেই ছাড়া হয়েছে।
পঞ্জাবের চণ্ডীগড়ের মহকুমা শাসক নাজুক কুমারের আবার অন্য রকম চ্যালেঞ্জ। তিনি চণ্ডীগড়ের প্রধান পাইকারি বাজারের প্রশাসক। এই বাজার থেকেই চণ্ডীগড়-পাঁচকুল্লা-মোহালির ২০ লক্ষ মানুষের কাছে আনাজ, ফল, খাদ্যসামগ্রী পৌঁছয়। গোটা দেশে লকডাউনের আগেই পঞ্জাবে কার্ফু শুরু হয়ে গিয়েছিল। সে দিন থেকে অফিসের সময়ও গুলিয়ে গিয়েছে ২০১৬-র ব্যাচের আইএএস নাজুকের। ভোর চারটের সময়ই তাঁকে পৌঁছে যেতে হয় বাজারে। দেখতে হয়, কার্ফুর মধ্যেও শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে, ২০ লক্ষ মানুষের কাছে অত্যাবশক পণ্য পৌঁছচ্ছে কি না।
আরও পড়ুন: প্রথম দিনে প্রাণ পেল না শিল্প, সমস্যা বিস্তর
মঙ্গলবার, ২১ এপ্রিল সিভিল সার্ভিস দিবস। আইএএস-দের দিন। মোদী সরকারের মন্ত্রী থেকে সব রাজ্য সরকারই মানছে, আসলে করোনা-সঙ্কটের মোকাবিলা হচ্ছে একেবারে স্থানীয় স্তরে। সেই লড়াইয়ের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিজয়-নাজুকের মতো তরুণ আমলারা। আইএএস-দের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র মুসৌরির লালবাহাদুর শাস্ত্রী ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশন-এর প্রাক্তনীদের উদ্যোগে তাঁরা নিজেরাই নিজেদের গল্প তুলে ধরছেন। ঝাড়খণ্ডের পশ্চিম সিংভূম জেলার ডেপুটি ডেভেলপমেন্ট কমিশনার আদিত্য রঞ্জনের এলাকায় কোনও করোনা পজ়িটিভ নেই। কিন্তু একসময় মাওবাদী সমস্যায় জর্জরিত আদিবাসী প্রধান জেলাটির প্রত্যন্ত এলাকায় লকডাউনের মধ্যে হতদরিদ্র মানুষের মুখে অন্ন তুলে দেওয়াটা আদিত্যর পরীক্ষা ছিল। জেলায় ৭১টি ডাল-ভাত কেন্দ্র খুলেছেন। তার সঙ্গে গাড়িতে করেও খাবার পৌঁছচ্ছে প্রায় ৬ হাজার মানুষের কাছে। রোজ।
আরও পড়ুন: করোনা আক্রান্তের মধ্যে উপসর্গ না থাকলেই ভয় বেশি!
তবে চ্যালেঞ্জ এখনও শেষ হয়নি। নাজুকের পঞ্জাবে অনাবাসী পঞ্জাবিরা বিদেশ থেকে ফিরতে শুরু করার পরেই সংক্রমণ ছড়িয়েছিল। বিজয়ের পরীক্ষা হল, লকডাউনের পরে অনাবাসী মালয়ালিরা ফিরলে আরও এক দফা সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়বে। বিজয় তাঁদের কোয়রান্টিনে রাখার আগাম ব্যবস্থা করে রাখছেন। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে আসার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আদিত্য পুরনো ফোন বুথের আদলে নমুনা সংগ্রহ কেন্দ্র বানিয়েছেন। হাল ছাড়ছেন না তরুণ আইএএস-রা।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)