Corona

দেশে প্রতি ঘণ্টায় করোনা সংক্রমিত হচ্ছেন ১০,০০০ মানুষ, মৃত ৬০-এরও বেশি

দিল্লিতে সংক্রমণের বাড়বাড়ন্তের মধ্যেই আজ করোনা পজ়িটিভ ধরা পড়েছে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালের স্ত্রী সুনীতার।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২১ ০৭:২৫
Share:

যন্ত্রে কাটা হচ্ছে মাটি। কবর দেওয়া হচ্ছে করোনায় মৃতদের। মঙ্গলবার দিল্লির এক সমাধিক্ষেত্রে। ছবি: পিটিআই।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে কার্যত দিশাহারা গোটা দেশ। এই প্রথম বার দৈনিক মৃ্ত্যু পেরোল ১,৭০০। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, রবিবার প্রতি ঘণ্টায় সংক্রমিত হয়েছেন ১০,৮৯৫ জন। ৬২ জনের মৃত্যু হয়েছে প্রতি ঘণ্টায়। সোমবার সেই সংখ্যাটাই বেড়ে ঘণ্টায় সংক্রমণ ও মৃত্যু যথাক্রমে ১১,৪০৮ এবং ৬৭। আজ অবশ্য সংক্রমণ সামান্য কমলেও (ঘণ্টায় ১০,৭৯৮) ঘণ্টা-পিছু মৃত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৩। আজ অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যাও ২০ লক্ষের গণ্ডি পেরিয়েছে। এর মধ্যে ৬২.০৭ শতাংশই ৫টি রাজ্যে (মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, কর্নাটক, ছত্তীসগঢ় ও কেরল)। দৈনিক সংক্রমণের মতোই দৈনিক মৃত্যুর তালিকাতেও শীর্ষে মহারাষ্ট্রই। তবে দৈনিক মৃত্যুর ক্ষেত্রে দ্বিতীয় স্থানে দিল্লি থাকলেও দৈনিক সংক্রমণে মহারাষ্ট্রের পিছনেই উত্তরপ্রদেশ।

Advertisement

দিল্লিতে সংক্রমণের বাড়বাড়ন্তের মধ্যেই আজ করোনা পজ়িটিভ ধরা পড়েছে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালের স্ত্রী সুনীতার। তিনি আইসোলেশনে থাকছেন। তবে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে নিভৃতবাসে থাকছেন কেজরীবালও। আম আদমি পার্টির নেতা দুর্গেশ পাঠক জানিয়েছেন, আইসোলেশনেও গোটা পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছেন কেজরীবাল। তবে মণীশ সিসৌদিয়া এবং সত্যেন্দ্র জৈনের দল সক্রিয় ভাবে কাজ চালাবেন।

দিল্লির পরে এ বার লকডাউনের পথে হাঁটল ঝাড়খণ্ড। মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন আজ ঘোষণা করেছেন, ২২ থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউন জারি করা হচ্ছে রাজ্যে। মহারাষ্ট্রের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রাজেশ টোপে জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে আগামিকাল সিদ্ধান্ত নেবেন, রাজ্যে লকডাউন কার্যকর করা হবে কি না। কেরলে আজ থেকেই বলবৎ হচ্ছে দু’সপ্তাহব্যাপী নৈশ কার্ফু। কর্নাটকেও আজ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেন রাজ্যপাল। রাজস্থানেও আজ থেকে শুরু হচ্ছে নৈশ কার্ফু।

Advertisement

দিল্লি ও মুম্বইয়ের বেশ কয়েকটি হাসপাতাল প্রবল অক্সিজেন সঙ্কটের কথা জানিয়েছে। হাসপাতালগুলির বক্তব্য, অবস্থা এমন যে, আর ৩-৪ ঘণ্টার মধ্যেই অক্সিজেনের ভাঁড়ার শেষ হয়ে যাবে। তখন আর কিছু করার থাকবে না। পুণের একটি হাসপাতালে অক্সিজেন শেষ হয়ে যাওয়ায় অন্যত্র স্থানান্তরিত করা হয় রোগীদের।

সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে টিকাকরণের হার বাড়ানোর উপর জোর দিচ্ছে কেন্দ্র। তাই প্রতিষেধকের উপর থেকে আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সূত্রের থবর। রেমডেসিভিয়ার-সহ কিছু ওষুধের কাঁচামালের আমদানি শুল্কও কমাল কেন্দ্র।

এ দিকে গুজরাতের বিজয় রূপাণী সরকারের বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের অভিযোগ ইতিমধ্যেই উঠেছে। এ বার অভিযোগ উঠল, তথ্য লুকোনোর হাতিয়ার হিসেবে কোভিডে মৃতদের অসুস্থ বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে। মাকেনা পাওয়েলা নামে জনৈক ব্যক্তির অভিযোগ, তাঁর আত্মীয়ের মৃত্যুর কারণ হিসেবে লেখা হয়েছে, অসুস্থতা (বিমারী)। নাম প্রকাশ করা যাবে না, এই শর্তে গুজরাতের এলিসব্রিজ শ্মশানের এক কর্মী জানিয়েছেন, মৃত্যুর কারণ হিসেবে করোনাভাইরাস যাতে লেখা না-হয় সেই নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্য দফতরের ডেপুটি কমিশনার। একই নির্দেশ গিয়েছে আরও কয়েকটি শ্মশানেও। আমদাবাদ পুরসভার এক আধিকারিক অবশ্য এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে জানিয়েছেন, শ্মশানের তৃতীয় বা চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরা তেমন শিক্ষিত নয়। তাই ভুল এড়াতেই মৃত্যুর কারণ হিসেবে অসুস্থতা লেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাওয়েলা অবশ্য স্পষ্ট জানিয়েছেন, সংবাদমাধ্যমের কাছে তথ্য লুকোতেই এই পন্থা নিয়েছে সরকার।

আজ গুজরাত হাইকোর্টে একটি মামলার শুনানিতে সরকারের তরফে জানানো হয়, সবমিলিয়ে ৭৯,৯৪৪টি শয্যা রয়েছে হাসপাতালে। তার মধ্যে ৫৫,৭৮৩টি শয্যা ভর্তি। সরকারের সেই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আজ হাইকোর্ট সরকারের কাছে জানতে চেয়েছে, বাকি শয্যাগুলি যদি খালিই থাকে, তা হলে সংক্রমিতদের হাসপাতালে ভর্তির জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে কেন? এর উত্তরে রাজ্য জানিয়েছে, নির্দিষ্ট কিছু হাসপাতালে ভর্তির জন্য চেষ্টা করছেন বহু মানুষ। সেই কারণেই অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এর পাশাপাশি রাজ্যের আইনজীবী জানিয়েছেন, পর্যাপ্ত অক্সিজেনের জোগান রয়েছে। অক্সিজেন সরবরাহের নজরদারির জন্য মুখ্যমন্ত্রীর অফিসে বিশেষ কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ যোজনার (পিএমজিকেপি) আওতায় করোনা যোদ্ধাদের বিমা বন্ধ করার কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে আজ অসন্তোষ প্রকাশ করেন প্রবীণ আইনজীবী পার্সি কাবিনা। তাঁর বক্তব্য, পিএমজিকেপি-র আওতায় মাত্র ২৮৭ জনের বিমার দাবি কেন্দ্র মঞ্জুর করেছে। এর পরেই বিস্মিত কাবিনার বলেন, ‘‘গোটা দেশে মাত্র ২৮৭ জন!’’ এই প্রকল্প কেন বন্ধ করা হল, সেই প্রশ্নও তুলেছেন কাবিনা।

মধ্যপ্রদেশেও সংক্রমণ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। তৈরি হয়েছে অক্সিজেন সঙ্কট। পরিস্থিতি সামলাতে ময়দানে নেমেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবর্গ। বিজেপি সাংসদ জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া কোভিড রোগীদের বিভিন্ন সরঞ্জাম সরবরাহের কাজ শুরু করছেন। কংগ্রেস সাংসদ বিবেক তঙ্খাও ৩৪ টন তরল অক্সিজেন পাঠিয়েছেন জবলপুরে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement