দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ২৯৪ জনের। গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ।
প্রতি দিন করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যায় তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন রেকর্ড। শনিবারও তার ব্যতিক্রম ঘটল না। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের দেওয়া তথ্য অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ন’হাজার ৮৮৭ জন। এক দিনে এত সংখ্যক মানুষ এর আগে সংক্রমিত হননি। এই বৃদ্ধির জেরে দেশে মোট কোভিড-১৯ আক্রান্ত হলেন দু’লক্ষ ৩৬ হাজার ৬৫৭ জন। করোনাভাইরাসে আক্রান্তের মোট সংখ্যার হিসাবে ইটালিকে পিছনে ফেলল ভারত। কোভিডে মোট আক্রান্তের নিরিখে ভারতের স্থান বিশ্বে ষষ্ঠ। আমেরিকা, ব্রাজিল, রাশিয়া, ব্রিটেন, স্পেনের পরেই।
শুধু সংক্রমণ বৃদ্ধি নয়। করোনার জেরে রোজ মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধিও উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের দেওয়া হিসাবে, গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ২৯৪ জনের। যা এক দিনে মৃত্যুর নিরিখে সর্বোচ্চ। এই নিয়ে করোনার থাবায় প্রাণ হারালেন মোট ছ’হাজার ৬৪২ জন। করোনার জেরে দেশে সবথেকে বেশি মৃত্যু হয়েছে মহারাষ্ট্রে। এখনও অবধি দু’হাজার ৮৪৯ জন মারা গিয়েছেন সেখানে। এর পরই রয়েছে গুজরাত। সেখানে মারা গিয়েছেন এক হাজার ১৯০ জন। রাজধানী দিল্লিতে ৭০৮ জনের প্রাণ কেড়েছে করোনা। এর পর রয়েছে মধ্যপ্রদেশ (৩৮৪) ও পশ্চিমবঙ্গ (৩৬৬)। শতাধিক মৃত্যুর তালিকায় রয়েছে উত্তরপ্রদেশ (২৫৭), তামিলনাড়ু (২৩২), রাজস্থান (২১৮) ও তেলঙ্গানা (১১৩)।
দেশে সংক্রমণের শীর্ষে রয়েছে মহারাষ্ট্র। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৮০ হাজার। গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় দু’হাজার ৪৩৬ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন মহারাষ্ট্রে। এই বৃদ্ধির জেরে সেখানে মোট আক্রান্ত হলেন ৮০ হাজার ২২৯ জন। এর পরই রয়েছে তামিলনাড়ু। সেখানে মোট আক্রান্ত ২৮ হাজার ৬৯৪ জন। আক্রান্তের নিরিখে তৃতীয় স্থানে রাজধানী দিল্লি। সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২৬ হাজার ৩৩৪ জন। গুজরাতে মোট আক্রান্ত ১৯ হাজার ৯৪ জন। এর পর ক্রমান্বয়ে রয়েছে রাজস্থান (১০,০৮৪), উত্তরপ্রদেশ (৯,৭৩৩), মধ্যপ্রদেশ (৮,৯৯৬), পশ্চিমবঙ্গ (৭,৩০৩), কর্নাটক (৪,৮৩৫), বিহার (৪,৫৯৬), অন্ধ্রপ্রদেশ (৪,৩০৩), হরিয়ানা (৩,৫৯৭), জম্মু ও কাশ্মীর (৩,৩২৪), তেলঙ্গানা (৩,২৯০), ওড়িশা (২,৬০৮), পঞ্জাব (২,৪৬১), অসম (২,১৫৩), কেরল (১,৬৯৯) ও উত্তরাখণ্ড (১,২১৫)-র মতো রাজ্যগুলি।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
কলকাতা, হাওড়া, দুই ২৪ পরগনা ছাড়িয়ে অন্যান্য জেলাগুলিতে সংক্রমণ বৃদ্ধি চিন্তা বাড়াচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪২৭ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন এ রাজ্যে। এক দিনে এত লোক এর আগে সংক্রমিত হননি এ রাজ্যে। এই বৃদ্ধির জেরে পশ্চিমবঙ্গে করোনাভাইরাসে মোট আক্রান্ত হলেন সাত হাজার ৩০৩ জন। করোনার কারণে এ রাজ্যে এখনও অবধি মৃত্যু হয়েছে ৩৬৬ জনের। যদিও রাজ্য সরকারের বুলেটিন অনুসারে, রাজ্যে ২৯৪ জনের মৃত্যু হয়েছে সরাসরি করোনার কারণে। বাকি ৭২ জনের মৃত্যু হয়েছে কোমর্বিডিটিতে।
আরও পড়ুন: করোনাভাইরাসের হানা স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দফতরে, আক্রান্ত ৫
আরও পড়ুন: এক সঙ্গে ২৫ স্কুলে চাকরি! বেতন এক কোটি, তদন্ত শুরু
দেশে আক্রান্তের সংখ্যা হু হু করে বাড়লেও, সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যাটাও এক লাখ ছাড়িয়েছে। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে এটাই যেন আশার আলো। দেশে এখনও অবধি করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে উঠেছেন এক লক্ষ ১৫ হাজার ৯৪২ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনার কবল থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন চার হাজার ৯৮২ জন।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)