ঘরে থেকে উৎসব পালনের আহ্বান কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন। —ফাইল চিত্র
অতিমারি আবহেও ফাঁক নেই উৎসবের প্রস্তুতিতে। এই উৎসব পালন করতে গিয়েই পারস্পরিক দূরত্ব-বিধি উড়িয়ে জনসমাগমে করোনা সংক্রমণ বাড়বে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিশেষজ্ঞেরা। আজ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধনও বললেন, ‘‘জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পুজো-পার্বণে যোগ দেওয়ার নির্দেশ কোনও ধর্ম বা ঈশ্বর দেননি। এ-ও বলেননি, প্রার্থনা করার জন্য মণ্ডপ, মন্দির বা মসজিদে যেতে হবে।’’ তাঁর পরামর্শ, মেলা বা জমায়েত এড়িয়ে উৎসবের দিনগুলি প্রিয়জনের সঙ্গে বাড়িতেই পালন করুন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, আজ দেশে করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা ৭০ লক্ষের সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৭৪ হাজার ৩৮৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন। আশঙ্কা, খুব শীঘ্রই সংক্রমণের বিচারে শীর্ষে থাকা আমেরিকাকে ছুঁয়ে ফেলবে ভারত। এই অবস্থায় আসন্ন উৎসবের মরসুমে দেশবাসীকে সাবধান করতে হর্ষ বর্ধন বলছেন, ‘‘বিশ্বাস বা ধর্মের প্রতি আনুগত্য প্রকাশের জন্য দলে দলে উৎসবে যোগ দেওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। সেটা হলে আমরা কিন্তু অনেক বড় বিপদে পড়ব। কৃষ্ণ বলেছিলেন, নিজের লক্ষ্যে মনোনিবেশ কর। আমাদের এখন লক্ষ্য করোনাকে পরাস্ত করে মানবজাতিকে রক্ষা করা। এটাই আমাদের ধর্ম। এটাই গোটা বিশ্বের ধর্ম।’’
আজ সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘সানডে সংবাদ’ অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ-ও মনে করিয়েছেন, করোনার দাপট যে-হেতু ঠান্ডা ও কম আর্দ্র পরিবেশে বাড়ে তাই ভরা শীতে ভারতে করোনার সংক্রমণ ও বিস্তার বিপজ্জনক সীমায় পৌঁছে যেতে পারে। ঘটনা হল, অতিমারি সত্ত্বেও দুর্গাপুজো, দশেরা, দীপাবলি, ছটপুজো— দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে এই উৎসবগুলির। আর তা শেষ হতে না হতেই চলে আসবে শীত অর্থাৎ বড়দিন। অভিজ্ঞতা বলছে, কেরলে ওনাম উৎসবের পরেই করোনা সংক্রমণ মাত্রা ছাড়ায়। সেই দৃষ্টান্ত মাথায় রেখে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘ধর্মের থেকে কর্মের গুরুত্ব কি বেশি নয়? উৎসব পালন করতে গিয়ে কি জীবন বাজি রাখা উচিত? কোনও ধর্মীয় নেতাই সে নির্দেশ দেননি। বাইরে আগুন জ্বলছে জেনেও ধর্মের নামে সেই আগুনেই ঝাঁপ দিয়ে বিপদ ডাকলে এ সব উৎসবের যুক্তি কী?’’
আরও পড়ুন: চাষির ভাল চাই বলেই রাগ: মোদী ॥ পাল্টা প্রশ্ন বিরোধীদের
তবে মন্ত্রীর এই হুঁশিয়ারি আদৌ ধোপে টিকবে নাকি, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে নানা মহলে। পুরীর রথযাত্রার সময়েও দূরত্ব-বিধি শিকেয় তুলে লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড়ের আশঙ্কায় প্রথমে যাত্রা বন্ধ রাখার কথা বলেছিল সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি এস এ বোবডে তখন বলেছিলেন, ‘‘রথযাত্রার অনুমতি দিলে প্রভু জগন্নাথই ক্ষমা করবেন না।’’ যদিও পরে আবার বোবডের নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চই বেশ কিছু শর্তসাপেক্ষে রথ যাত্রার অনুমতি দেয়।