ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ছবি: এএফপি।
নোভেল করোনাভাইরাসের জেরে গোটা বিশ্বের মৃতের সংখ্যা ৮ হাজার ছুঁইছুঁই। এমন পরিস্থিতিতে ভারতেও করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বুধবার দুপুর পর্যন্ত ভারতে মোট কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হল ১৫১। এ দিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছে তাতে দেখা গিয়েছে, মোট আক্রান্তের মধ্যে ২৫ জন বিদেশি নাগরিক। নোভেল করোনায় আক্রান্ত হয়ে এখনও পর্যন্ত এ দেশে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর পাশাপাশি সুস্থও হয়ে উঠেছেন ১৪ জন।
মহারাষ্ট্র, কেরল-সহ দেশের একাধিক রাজ্যে করোনার প্রকোপ দেখা দিলেও, এত দিন বাংলা সুরক্ষিতই ছিল। কিন্তু মঙ্গলবার লন্ডনফেরত এক যুবকের শরীরে কোভিড-১৯ ভাইরাস ধরা পডে়ছে। কলকাতার বেলেঘাটা আইডি-তে ভর্তি রয়েছেন তিনি। এ ছাড়াও কোয়ারান্টাইনে রাখা হয়েছে আরও ১৮ জনকে। বুধবার সকালে আবার পুণেতে নতুন করে একজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত ওই মহিলা সম্প্রতি ফ্রান্স এবং নেদারল্যান্ডস গিয়েছিলেন বলে জানা গিয়েছে। পুণের নায়ডু হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন তিনি।
দেশের মধ্যে এখনও পর্যন্ত মহারাষ্ট্রেই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এখনও পর্যন্ত সেখানে ৪২ জন কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে কেরল। সেখানে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২৭। উত্তরপ্রদেশে ১৬ জন কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এমনকি করোনা কবল থেকে রক্ষা পায়নি ভারতীয় সেনাবাহিনীও। লেহ-তে ৩৪ বছরের এক সেনাকর্মীর শরীরে কোভিড-১৯ ভাইরাস ধরা পড়েছে। ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১ মার্চ পর্যন্ত তিনি ছুটিতে ছিলেন। তাঁর বাবা সম্প্রতি ইরান থেকে তীর্থ করে ফেরেন। লেহ-র এসএনএম হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে তাঁকে। পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে তাঁর স্ত্রী, দুই সন্তান এবং এক বোনকেও।
আরও পড়ুন: যুদ্ধ পরিস্থিতি ফ্রান্সে, মৃত্যু পাকিস্তানেও
দেশ জুড়ে করোনা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লেও, এখনও সংসদের অধিবেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়নি। তবে সম্প্রতি সৌদি আরব থেকে ফেরেন বিজেপি সাংসদ ও প্রাক্তন রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু। পরিস্থিতি বিবেচনা করে আগামী ১৪ দিনের জন্য বাড়িতেই নিজেকে কোয়রান্টাইনে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। যদিও এখনও পর্যন্ত তাঁর শরীরে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব ধরা পড়েনি।
তবে ভারতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চললেও, অতিমারি খানিকটা বেগ পেয়েছে চিনে। যে উহান থেকে নোভেল করোনা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে, মঙ্গলবার সেখানে শুধুমাত্র ১ জনের শরীরে কোভিড-১৯ ভাইরাস ধরা পড়েছে। মঙ্গলবার সেখানে সবমিলিয়ে ১১ জন প্রাণ হারিয়েছেন। নোভেল করোনার জেরে এখনও পর্যন্ত চিনে ৩ হাজার ২৩৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
সৌদি আরব হয়ে করোনা ভাইরাস ঢুকে পড়েছে কিরঘিস্তানেও। সেখানে সৌদি ফেরত তিন জনের শরীরে কোভিড-১৯ ভাইরাস মিলেছে। কাজাখস্তান এবং উজবেকিস্তানেও এ মাসেই করোনা প্রবেশ করেছে। নাগরিকদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে সেখানে সমস্ত সমাবেশ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শুক্রবারের নমাজও বন্ধ রাখা হচ্ছে আপাতত।পশ্চিম এশিয়ার মধ্যে ইরানের অবস্থাই সবচেয়ে ভয়াবহ। সেখানে এখনও পর্যন্ত ১ হাজার ১৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার আরও ১৪৭ জন নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
ইউরোপের মধ্যে ইটালির অবস্থাই সবচেয়ে ভয়ঙ্কর। সেখানে মৃত্যুসংখ্যা ইতিমধ্যেই আড়াই হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩১ হাজার ৫০৬। ইউরোপের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে স্পেন। সেখানে ১২ হাজার ৭০০ জন নোভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। প্রাণ হারিয়েছেন ৫৫৮ জন।
আরও পড়ুন: কলকাতায় প্রথম করোনা, লন্ডনফেরত আক্রান্ত আইডি-তে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও মৃতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে। রাজ্যের ৫০টি প্রদেশেই করোনাভাইরাস হানা দিয়েছে। সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬ হাজার ৩০০। সারা বিশ্বে এই মুহূর্তে ১ লক্ষ ৯৭ হাজার ৪৯০ জন নোভেল করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৭ হাজার ৯৪০ জনের। এমন পরিস্থিতিতে করোনা মোকাবিলায় যে তহবিল গড়া হয়েছে, তাতে আরও ২০০ কোটি মার্কিন ডলার ঢালার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্বব্যাঙ্ক। শুরুতে ওই তহবিলে ১২০০ কোটি টাকা অনুদান দেওয়ার কথা ছিল।