প্রতীকী ছবি।
করোনা নিজের মোক্ষম বিষকামড় তো দিয়েছেই। সেই সঙ্গে অনিদ্রা, নিদ্রা-ঘাটতির মতো সমস্যা বাড়িয়ে নানান অসুখের দরজাও খুলে দিয়েছে সে। অতিমারির দাপটে পথেঘাটে বেরোনো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মানুষকে বাধ্য হয়ে ঘরবন্দি হতে হয়েছে ঠিকই। কিন্তু জীবনের রোজনামচা, দৈনন্দিন ‘ঘড়ির কাঁটা’ অনেকাংশে বিগড়ে গিয়েছে। রুজিরোজগার-সহ বিভিন্ন বিষয়ে তার ধাক্কা লাগার সঙ্গে সঙ্গে তার প্রভাব পড়ছে ঘুমেও।
‘বিশ্ব নিদ্রা দিবস’ উপলক্ষে নিদ্রারোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একটি অনুষ্ঠানে সাম্প্রতিক এই সমস্যার কথা উঠে এসেছে। তাঁরা জানাচ্ছেন, জীবনে ব্যস্ততা বাড়ায় গত কয়েক বছর ধরেই নিদ্রা সংক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছিল। করোনা আবহে তা আরও বেড়েছে।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ছয় থেকে ১৩ বছর বয়সি শিশু-কিশোরদের দিনে ৯-১১ ঘণ্টা, ১৪ থেকে ১৭ বছর বয়সিদের ৮-১০ ঘণ্টা এবং প্রাপ্তবয়স্কদের দিনে ৭-৯ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। কিন্তু অতিমারির পরিস্থিতিতে দেখা গিয়েছে, অনেকেই রাতে ঘুমোতে পারছেন না। কেন? এ ক্ষেত্রে বাড়িতে একটানা কম্পিউটারের সামনে বসে থাকা, নিরবচ্ছিন্ন ভাবে মোবাইল ব্যবহারকেও দায়ী করছেন অনেকে। কোথাও কোথাও রাত জেগে অনেকে জরুরি কাজও করেছেন।
“শরীরের উপরে বদলে যাওয়া জীবনযাত্রার নানা কুপ্রভাব পড়েছে। সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বায়োলজিক্যাল ক্লক। এর আরও দু’টি কারণ সূর্যের আলোর অভাব এবং অতিরিক্ত ফোন ও ল্যাপটপ ব্যবহার। ওই সব যন্ত্র থেকে নির্দত ‘ব্লু লাইট’-ও বায়োলজিক্যাল ক্লকের ক্ষতি করে। এর ফলে ঘুমের সময় অনিয়মিত হয়ে যাচ্ছে। শরীরে থাইরয়েড, কর্টিসোল ইত্যাদি হরমোন ঠিক সময়ে ঠিক পরিমাণে নিঃসরণ হচ্ছে না। এর ফলেই নানা ধরনের অসুখ হচ্ছে,” বলেন নিদ্রারোগ বা স্লিপ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সৌরভ দাস। তিনি জানান, অতিমারির জেরে তৈরি হওয়া শারীরিক, মানসিক এবং অর্থনৈতিক চাপের ফলে এই ধরনের রোগ ও রোগীর সংখ্যা আরও বেড়ে গিয়েছে। তার সঙ্গে আছে অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া (ঘুমের মধ্যে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া), সারক্যাডিয়ান রিদম স্লিপ ডিজ়অর্ডারের (দিন-রাতের সঙ্গে ঘুমের সময় না-মেলা) মতো আরও নানা ধরনের জটিলতা।
ঘুম হারিয়ে যাওয়া শুধু একটি রোগ নয়। সুখনিদ্রার ঘাটতি ডেকে আনতে পারে আরও কিছু রোগ। এর ফলে তাৎক্ষণিক ক্লান্তি, মনোযোগের অভাব, স্মৃতিশক্তির সমস্যা, অ্যাংজ়াইটি বা উদ্বেগ, বিরক্তি থেকে শুরু করে ভবিষ্যতে জটিল হৃ্দ্রোগ, নার্ভের সমস্যা, অবসাদ, অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজ়অর্ডারের মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। তবে ওই সংগঠনের সদস্য চিকিৎসক উত্তর আগরওয়ালের আশ্বাস, নিদ্রাদেবীকে ফেরানোর দাওয়াইও রয়েছে।