গ্রাফিক।
কথা না শুনলেই লকডাউন। শেষে হুঁশিয়ারি দিল মহারাষ্ট্র সরকার। রাজ্যে কোভিড আচরণবিধি যথাযথ পালন হচ্ছে না জানিয়ে বলা হল, যদি এরপরও মহারাষ্ট্রবাসী সতর্ক না হন, তবে রাজ্য জুড়ে ফের লকডাউন ঘোষণা করতে বাধ্য হবে সরকার। একটি ভার্চুয়াল বৈঠকে রবিবার মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে করোনা নিয়ে মহারাষ্ট্রের মানুষের গয়ংগচ্ছ মনোভাব নিয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
রবিবার বৈঠকে রাজ্যবাসীকে রীতিমতো লকডাউনের ভয় দেখিয়েছেন উদ্ধব। তিনি জানান, রাজ্য সরকারকে কড়া পদক্ষেপ করতে বাধ্য না করাই ভাল। কিন্তু সমস্যা হল, অতিমারির নিয়মবিধি পালন করার ক্ষেত্রে রাজ্যবাসীর মধ্যে ইদানীং এক অদ্ভুত গা-ছাড়া মনোভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যা সম্প্রতি অত্যন্ত বেড়ে গিয়েছে। উদ্ধব বলেন, ‘‘আমাদের কড়া লকডাউন জারি করতে বাধ্য করবেন না। এই বার্তাকে আমাদের শেষ সতর্কতা বলেই ধরে নিন।’’
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় মহারাষ্ট্রে রোজই উত্তরোত্তর বাড়ছে সংক্রমণের সংখ্যা। অথচ করোনাকে ঠেকাতে প্রশাসন যে সব বিধিনিষেধ চালু করেছে, তা মানার ক্ষেত্রে সর্বত্র গাফিলতি নজরে পড়ছে বলে জানিয়েছেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী। এ ব্যাপারে ভার্চুয়াল বৈঠকে এক একটি বিষয় ধরে রাজ্যবাসীকে সতর্ক হতে বলেছেন উদ্ধব। বলেছেন, ‘‘বিভিন্ন এলাকায় ভি়ড় জমানোর প্রবণতা গত অক্টোবর থেকেই বাড়তে শুরু করেছে মহারাষ্ট্রে।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘কেন এই ভিড়?’’ হোটেলে, রেস্তোরাঁয় কোভিড আচরণবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রেও ঢিলেমি দেখা যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। উদ্ধব বলেন, ‘‘অনেকেই ভাবছেন তাঁরা ব্যক্তিগতভাবে পরিচ্ছন্নতার সব নিয়ম নীতি মানছেন। কিন্তু এটাও বুঝতে হবে সরকারি বিধি নিষেধ মানা ও ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা মানার মধ্যে অনেক তফাৎ আছে।’’
এই ঢিলেঢালা মনোভাব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আগে তাই মহারাষ্ট্রবাসীকে সতর্ক হতে বলেছেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘গত সপ্তাহেই কেন্দ্রের একটি দল মুম্বইয়ে এসেছিল করোনা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে। ওই দলেরই এক সদস্য আমাকে বলেন, শারীরিক দূরত্ববিধি বজায় রাখা তো দূরের কথা কেউ মাস্ক-ই পড়ছেন না।’’ রাজ্যবাসীকে করোনা নিয়ন্ত্রণে সরকারের সহযোগিতা করার অনুরোধ জানিয়ে উদ্ধবের সংযোজন, ‘‘সরকার লকডাউন করার পক্ষে নয়। তবে তার জন্য রাজ্যবাসীকে এগিয়ে আসতে হবে।’’ রাজ্যের হোটেল রেস্তোরাঁগুলিকে কোভিড আচরণবিধি অক্ষরে অক্ষরে পালন করার নির্দেশও জারি করেছেন উদ্ধব। বলেছেন, ‘‘কেন্দ্রীয় দলটি মূলত রাজ্যের হোটেল রেস্তোরাঁগুলি পর্যবেক্ষণ করতে এসেছিল। সব খতিয়ে দেখে তারা জানিয়েছে, হোটেল এবং রেস্তোরাঁগুলিতে কোভিড আচরণবিধি পালন করা হচ্ছে না।’’
প্রসঙ্গত, শনিবারও নতুন করে ১৫,৬০২ জন করোনা সংক্রমিত হয়েছেন মহারাষ্ট্রে। মৃত্যু হয়েছে ৮৮ জনের। যেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আক্রান্ত হয়েছেন ২৫,৩২০ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ১৬১ জনের।
এই নিয়ে দেশে মোট সংক্রমণের সংখ্যা পৌঁছল ১ কোটি ১৩ লক্ষ ৫৯ হাজার ০৪৮-এ। মোট মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১ লক্ষ ৫৮ হাজার ৬০৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৮ লক্ষ ৬৪ হাজার ৩৬৮ জনের। টিকা পেয়েছেন ১৫ লক্ষ ১৯ হাজার ৯৫২ জন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের দেওয়া হিসেব বলছে গত ২৪ ঘণ্টায় যত পরীক্ষা হয়েছে, তার মধ্যে ২.৯৩ শতাংশ করোনা আক্রান্ত বলে ধরা পড়েছে।