ফাইল চিত্র।
পেট্রল একশো পেরিয়েছে। এ বার রান্নার গ্যাসের দাম হাজার পার করল। কিন্তু রান্নার গ্যাসে ভর্তুকির পরিমাণ কার্যত শূন্যই!
শুক্রবার মধ্য রাতে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম ফের ৫০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যের ভোটের ফলপ্রকাশের পরে গত দেড় মাসে এই নিয়ে রান্নার গ্যাসের দাম ১০০ টাকা বাড়ল। এর আগে গত ২২ মার্চ গ্যাসের দাম ৫০ টাকা বাড়ানো হয়েছিল। এর ফলে কলকাতায় রান্নার গ্যাসের দাম এ দিন হাজার পার করে ১,০২৬ টাকায় পৌঁছেছে। আজ বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছে, গত পাঁচ বছর ধরে রান্নার গ্যাসে নামমাত্র ভর্তুকি দিচ্ছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। তার ফলেই সাধারণ মানুষের উপরে বোঝা ক্রমশ বাড়ছে।
আজ কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী অভিযোগ করেন, ‘‘ইউপিএ সরকারের আমলে সিলিন্ডার দাম ছিল ৪১৪ টাকা। প্রতি সিলিন্ডারে ৮২৭ টাকা করে ভর্তুকি দেওয়া হত। আজ, দিল্লিতে প্রতি সিলিন্ডারের দাম ৯৯৯.৫০ টাকা। কিন্তু ভর্তুকির পরিমাণ শূন্য।’’ কেন্দ্রীয় সরকারেরই ‘পেট্রলিয়াম প্ল্যানিং অ্যানালিসিস সেল’-এর পরিসংখ্যান তুলে ধরে কংগ্রেস দাবি করেছে, ২০১৬-১৭ থেকে ২০২০-২১— এই পাঁচ বছরে রান্নার গ্যাসে কার্যত কোনও ভর্তুকিই দেয়নি মোদী সরকার। সরকারি পরিসংখ্যানে কোটি টাকার অঙ্কে ভর্তুকি দেখানো হয়েছে। ভর্তুকির পরিমাণ এতই কম যে, ওই পাঁচ বছরে ভর্তুকির কোনও তথ্যই নেই! গত অর্থ বছর, অর্থাৎ, ২০২১-২২-এ-ও ভর্তুকির তথ্য নেই। কংগ্রেসের অভিযোগ, ভর্তুকি দেওয়াই হয়নি, তাই তথ্যও নেই।
সরকারি তথ্য বলছে, ২০১৪-র মে মাসে দিল্লিতে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারে দাম ছিল ৪১৪ টাকা। এখন তা ৯৯৯ টাকা ৫০ পয়সা। অর্থাৎ আট বছরে দাম বেড়েছে ৫৮৫ টাকা ৫০ পয়সা। এর মধ্যে গত দেড় মাসেই ১০০ টাকা দাম বেড়েছে। গত দু’মাসে হোটেল-রেস্তরাঁয় ব্যবহারের বাণিজ্যিক সিলিন্ডারের দামও ৪৫৭.৫০ টাকা বেড়েছে। কংগ্রেসের বক্তব্য, এ সব থেকে নজর সরাতেই গত আট বছরে বিজেপি মানুষের শব্দকোষে নতুন নতুন শব্দ যোগ করেছে। যেমন, টুকরে টুকরে গ্যাং, লাভ জিহাদ, ঝটকা বনাম হালাল, হনুমান চালিসা বনাম আজান, বুলডোজ়ার। কারণ, এই সব বিষয় না তুললে, সমাজে অশান্তি তৈরি না করলে মানুষ মোদী সরকারের বিরুদ্ধে অশান্ত হয়ে উঠবে।
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে মোদী গ্যাসের দামবৃদ্ধি নিয়ে কংগ্রেসকে কটাক্ষ করে জনসভায় বলতেন, ‘ভোট দিতে যাওয়ার আগে গ্যাসের সিলিন্ডারে নমস্কার করবেন। ওরা মানুষের থেকে গ্যাস কেড়ে নিতে চাইছে।’ ভোটে জেতার পরে মোদী আমজনতার কাছে স্বেচ্ছায় রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি ছেড়ে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন। বিরোধীদের অভিযোগ, এ বার চড়া দামের জেরে সাধারণ মানুষকে রান্নার গ্যাস ব্যবহার করাই ছেড়ে দিতে হবে। আজ দিল্লিতে সাংবাদিক সম্মেলনে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারে মালা পরিয়ে, সামনে ধূপকাঠি জ্বেলে কংগ্রেস মুখপাত্র পবন খেরা বলেন, ‘‘পঁয়ষট্টি ঘণ্টায় তিন দেশের সফর করে, বিশ রকম পোশাক পরে, ষাট বার ফোটোশ্যুট করে সাহেব ভারতে ফিরলেন। এসেই রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম বাড়িয়ে দিলেন!’’
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিকে ‘গ্রেট ইন্ডিয়ান লুট’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তাঁর দাবি, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার অবিলম্বে দেশের মানুষের উপর এই অত্যাচার বন্ধ করুক। বারবার জ্বালানি, রান্নার গ্যাস, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে বিজেপি গ্রেট ইন্ডিয়ান লুট চালাচ্ছে।’’ তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, ‘‘এটা মুনাফাখোর সরকারে পরিণত হয়েছে। মানুষের উপর বোঝা চাপিয়ে ২০১৪ সাল থেকে ১৭ লক্ষ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। এই সরকার যে সংস্কারের রাস্তা নিয়েছে, আমরা তার সংস্কার চাইছি।’’
‘পেট্রলিয়াম প্ল্যানিং অ্যানালিসিস সেল’-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মনমোহন সিংহ সরকারের শেষ বছর অর্থাৎ ২০১৩-১৪-য় রান্নার গ্যাসে ৪৬ হাজার ৫০০ কোটি
টাকার বেশি ভর্তুকি দেওয়া হয়েছিল। মোদী সরকারের প্রথম বছর, ২০১৪-১৫-য় রান্নার গ্যাসের ভর্তুকির পরিমাণ ছিল ৩৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বেশি। তার পরের বছরই ভর্তুকির পরিমাণ এক ধাক্কায় ১৮ কোটি টাকার কমে নেমে আসে। তার পর থেকে ভর্তুকির অঙ্ক নামমাত্র। গত অর্থ বছরের তথ্যই নেই। সরকারি সূত্রের দাবি, ২০২১-২২-এর প্রথম নয় মাসে রান্নার গ্যাসে প্রায় ২,৭০৬ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। চলতি অর্থ বছরে রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি বাবদ ৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত কত খরচ হবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।