নতুন সংসদ ভবনের ছাদে বসবে ব্রোঞ্জের তৈরি এই অশোকস্তম্ভ। সোমবার সেটির উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নয়াদিল্লিতে। পিটিআই
সাড়ে বারোশো কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ে মোদী সরকারের নির্মীয়মাণ সেন্ট্রাল ভিস্তার কেন্দ্রে রয়েছে নতুন সংসদ ভবন। আর সেই সংসদ ভবনের ছাদে বসানোর জন্য ব্রোঞ্জের তৈরি জাতীয় প্রতীক অশোক স্তম্ভের আজ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে, এর ওজন ৯৫০০ কিলোগ্রাম, উচ্চতা ৬.৫ মিটার। একে ধরে রাখার জন্য সাড়ে ছ’হাজার কিলোগ্রাম ওজনের ইস্পাতের কাঠামো তৈরি হয়েছে। ক্লে মডেলিং, ব্রোঞ্জ ঢালাই, পালিশ হওয়া-সহ মোট আটটি ধাপে এটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানের সময় প্রধানমন্ত্রী নতুন সংসদ ভবন নির্মাণের সঙ্গে জড়িত কর্মীদের সঙ্গে কথাবলেন। মূর্তি উন্মোচনের পরে পুজোয় প্রধানমন্ত্রী অংশ নেন। লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা, রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশ, সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরী ছিলেন এই অনুষ্ঠানে। অনুপস্থিত ছিলেন উপরাষ্ট্রপতি তথা রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নায়ডু, যাঁর মেয়াদ শেষ হতে চলেছে।
আজ নির্মাণ-কর্মীদের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আপনারা কি ইমারত বানাচ্ছেন না ইতিহাস তৈরি করছেন? কী মনে হচ্ছে?” একযোগে উত্তর আসে, “ইতিহাস।” তাঁরা যে শুধুমাত্র প্রাসাদোপম অট্টালিকা নির্মাণ করছেন না, জাতীয় গৌরবের কাজ করছেন, তা তাঁদের মনে করিয়ে দেন মোদী। বলেন, ‘‘আপনারা আমাদের উৎসাহ বাড়িয়ে দিয়েছেন, এত কম সময়ে কাজ শেষ করে।” তাঁদের কোভিড সংক্রান্ত কোনও সমস্যা হয়েছে কি না, তা খোঁজ নেন মোদী।
তবে প্রধানমন্ত্রী এই সুবিশাল অশোক স্তম্ভের উদ্বোধন করায় রাজনৈতিক বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ‘অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন’ প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েইসি বলেছেন, “সংবিধানই সংসদ, সরকার এবং বিচারবিভাগীয় ব্যবস্থার মধ্যে সীমারেখা তৈরি করেছে। সরকারের প্রধান হিসাবে মোদীর নতুন সংসদ ভবনের জন্য তৈরি জাতীয় প্রতীকের উদ্বোধন করা উচিত হয়নি। লোকসভার স্পিকারের এই উদ্বোধন করা উচিত ছিল। তা হলে প্রশাসন এবং সংসদের পার্থক্য বজায় থাকত। এ ক্ষেত্রে সংবিধানের নীতি লঙ্ঘন করা হয়েছে।” সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরিরও একই বক্তব্য। বলেছেন, “সংবিধান গণতন্ত্রের তিনটি ব্যবস্থাকে পৃথক করেছে। রাষ্ট্রপতি সংসদের অধিবেশন ডাকেন আর প্রধানমন্ত্রী সরকারের প্রধান। ফলে প্রধানমন্ত্রী সংসদ ভবনের জন্য তৈরি জাতীয় প্রতীকের উদ্বোধন করায় স্পষ্টতই সংবিধান লঙ্ঘন হয়েছে। এ ছাড়া, প্রধানমন্ত্রী আজ এই উপলক্ষে পুজো করেছেন। আমাদের সংবিধান সব ভারতীয়কে তাঁদের ধর্মাচরণের অধিকার দিয়েছে। পাশাপাশি সংবিধানে এ কথাও বলা আছে, সরকারের বা রাষ্ট্রের কোনও একটি বিশেষ ধর্মের প্রচার বা পক্ষপাতের অধিকার নেই।”
বিজেপি নেতা অমিত মালবীয় অবশ্য বলেছেন, “নতুন সংসদ ভবনের ছাদে জাতীয় প্রতীকের উদ্বোধন করা সরকারের প্রধান হিসাবে প্রধানমন্ত্রীর এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে। কংগ্রেস তো সেন্ট্রাল ভিস্তারই বিরোধিতা করেছে। যখন প্রধানমন্ত্রী দেশের রাজধানীকে নতুন চেহারা দেওয়ার কর্মকাণ্ডে শ্রমিকদের কেন্দ্রস্থলে রাখছেন, বিরোধীরা তাকে খাটো করে দেখছেন।”