রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর ডি সুব্বারাও। —ফাইল চিত্র।
কেন্দ্রের সংগ্রহ করা করে উত্তর ভারত ও দক্ষিণ ভারতের অংশীদারি কতটা এবং তার মধ্যে থেকে বণ্টনযোগ্য করের কতটা এই দুই অঞ্চলে ফিরে আসছে, তা নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘদিনের। সম্প্রতি এই তরজা আরও বেশি করে দানা পাকিয়েছে। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর ডি সুব্বারাওয়ের বক্তব্য, এর সমাধানের জন্য দরকার কেন্দ্রীয় ও রাজ্যস্তরে যোগ্য নেতৃত্ব। অর্থ কমিশনের পক্ষে তা সম্ভব নয়।
সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ুর মতো রাজ্যগুলিতে কর সংগ্রহের আনুপাতিক হার উত্তরের রাজ্যগুলির তুলনায় বেশি। যদিও কেন্দ্রীয় করের ভাগের টাকা দক্ষিণে ফেরে কম। আবার সাম্প্রতিক কালে নতুন বিতর্ক দানা বেঁধেছে জনসংখ্যা নিয়ে। অনেকে বলছেন, স্বাধীনতার পর থেকে দক্ষিণ ভারতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমেছে উত্তরের তুলনায় বেশি। ফলে ভবিষ্যতে আসন পুনর্বিন্যাস হলে জনসংখ্যার কারণেই সংসদে দক্ষিণের প্রতিনিধিত্ব কমবে। বাড়বে সেই তাদের থেকেই ‘ভর্তুকি’ পাওয়া রাজ্যগুলির।
সুব্বারাও রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের শীর্ষ পদের দায়িত্ব সামাল দেওয়া ছাড়াও অন্ধ্রপ্রদেশের অর্থসচিব হিসেবে কাজ করেছেন। ছিলেন কেন্দ্রেরও অর্থসচিব। নিজের সাম্প্রতিকতম বই ‘জাস্ট আ মার্সেনারি?: নোটস ফ্রম মাই লাইফ অ্যান্ড কেরিয়ার’-এ যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় অর্থ ব্যবস্থার বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন তিনি। জানিয়েছেন, বণ্টনযোগ্য করের অনুভূমিক বণ্টন ব্যবস্থা নিয়ে বরাবর বিতর্ক ছিল। এখন তা আরও বেড়েছে। সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সুব্বারাও বলেছেন, ‘‘এটি (উত্তর-দক্ষিণ কর বিতর্ক) একটি জটিল রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ। অর্থ কমিশনের ক্ষমতার বাইরে। এর জন্য কেন্দ্র ও রাজ্যস্তরে যোগ্য নেতৃত্ব প্রয়োজন, যাঁরা রাজনীতিকে অতিক্রম করে ঐক্যমত তৈরি করে এগিয়ে যেতে পারবেন।’’ তিনি স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন, ধনী রাজ্যগুলি থেকে ১ টাকা সংগ্রহ করা হলে তাদের কাছে ফিরে আসে কম। আর দরিদ্র রাজ্যগুলির কাছে যায় ১ টাকার বেশি। ভারতের মতো বৃহৎ ও বৈচিত্রযুক্ত দেশে এই ব্যবস্থা অবশ্যম্ভাবী, গ্রহণযোগ্যও। তবে তাঁর সংযোজন, ‘‘আমরা কি একটি রাজ্যের টাকায় অন্য রাজ্যকে ভর্তুকি দেওয়ার এই ব্যবস্থার ঊর্ধ্বসীমায় পৌঁছে গিয়েছি? এটাই এখন প্রশ্ন।’’
সুব্বারাওয়ের বক্তব্য, অর্থনীতির বিভিন্ন মাপকাঠিতে স্পষ্ট, পরিকাঠামো, বেসরকারি বিনিয়োগ বা সামাজিক সূচকে দক্ষিণের রাজ্যগুলি এগিয়ে রয়েছে। তাদের আর্থিক বৃদ্ধির হারও বেশি। এর ফলে উত্তরের সঙ্গে তাদের ফারাক বেড়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘আর কতটা ভর্তুকি উত্তরকে দিতে হবে? এবং কত দিন ধরে?... তার উপরে যদি সংসদে দক্ষিণের রাজ্যগুলির আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব কমে, তবে তা তাদের কাছে হবে জোড়া ধাক্কা।’’
তবে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এপ্রিলের জিএসটি সংগ্রহে তামিলনাড়ুকে (১২,২১০ কোটি টাকা) ছাপিয়ে চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে উত্তরপ্রদেশ (১২,২৯০ কোটি টাকা)। প্রথম সারিতে রয়েছে মহারাষ্ট্র, কর্নাটক এবং গুজরাত। যদিও সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, উত্তরপ্রদেশ দেশের বৃহত্তম রাজ্য। জনসংখ্যার অনুপাতে কর সংগ্রহের ক্ষেত্রে এখনও দক্ষিণের রাজ্যগুলি তুলনায় এগিয়ে রয়েছে।