Supreme Court of India

বিতর্ক নিয়েই কোর্ট ছাড়লেন বিচারপতি মিশ্র

রীতি অনুযায়ী বিচারপতিদের অবসরের দিন সুপ্রিম কোর্টের লনে বার অ্যাসোসিয়েশন বিদায় সংবর্ধনা দেয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৪:১৯
Share:

বিচারপতি অরুণ মিশ্র

কলকাতা হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্টে আসার পরে গত ছয় বছরে বিতর্ক তাঁর পিছু ছাড়েনি। মোদী সরকারের পক্ষে যাবতীয় স্পর্শকাতর মামলা তাঁর বেঞ্চে পাঠানো হচ্ছে এবং তিনি সরকারকে সুবিধা পাইয়ে দিচ্ছেন— এমন অভিযোগ বহু বার উঠেছে। প্রবীণ বিচারপতিরাও এই অভিযোগ তুলে বেনজির ভাবে প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিদ্রোহ জানিয়েছেন। সাম্প্রতিক অতীতে সুপ্রিম কোর্টের আর কোনও বিচারপতিকে ঘিরে এমন বিতর্ক বিরল। বুধবার সেই বিচারপতি অরুণ মিশ্র অবসর নিলেন। তাঁর বিতর্কিত ইনিংসের শেষ দিনেও বিতর্ক তাঁর পিছু ছাড়ল না।

Advertisement

বুধবার অবসরের দিন প্রধান বিচারপতি যখন তাঁর এজলাসে বিচারপতি মিশ্রকে বিদায় সংবর্ধনা জানাচ্ছেন, সেই সময় সুপ্রিম কোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দুশ্যন্ত দাভেকে বলতে দেওয়া হল না বলে অভিযোগ উঠল। দাভের দাবি, ভিডিয়ো কনফারেন্সে তাঁর মাইক্রোফোন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।

রীতি অনুযায়ী বিচারপতিদের অবসরের দিন সুপ্রিম কোর্টের লনে বার অ্যাসোসিয়েশন বিদায় সংবর্ধনা দেয়। কিন্তু বিচারপতি মিশ্র বার অ্যাসোসিয়েশনের আমন্ত্রণে সাড়া দেননি। দাভে বরাবরই বিচারপতি মিশ্রর কড়া সমালোচক। প্রশান্ত ভূষণের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলাতেও তিনি সওয়াল করেছিলেন। প্রশ্ন উঠেছে, শেষ বেলাতেও অস্বস্তিকর কথা শুনতে হতে পারে বলেই কি দাভের মাইক্রোফোন বন্ধ করে দেওয়া হল? দাভে বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট এমন জায়গায় পৌঁছেছে যেখানে বিচারপতিরা আইনজীবীদের ভয় পাচ্ছেন।’’ প্রতিবাদ জানিয়ে প্রধান বিচারপতিকে চিঠিও লিখেছেন তিনি।

Advertisement

বোধ হয় তাঁর সমালোচকদের বার্তা দিতেই, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে কর্মজীবনের শেষ দিনে বিচারপতি অরুণ মিশ্র মন্তব্য করেছেন, ‘‘রায়ের সমালোচনা করুন। কিন্তু তাতে রং চাপাবেন না।’’

গত ছয় বছরে বিচারপতি মিশ্রের এজলাসে মোদী সরকারের পক্ষে স্পর্শকাতর একের পর এক মামলার শুনানি হয়েছে। সহারা-বিড়লা ডায়েরিতে রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ, হরেন পাণ্ড্য খুন, মেডিক্যাল কলেজে দুর্নীতির মামলায় বিচারপতিদের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ, দলিতদের নির্যাতন প্রতিরোধ আইনে সংশোধন, সিবিআইয়ের শীর্ষ পদের বিবাদ, ভীমা কোরেগাঁও মামলায় ধৃত সমাজকর্মীদের জামিনের আর্জি, কর্পোরেট সংস্থার স্বার্থ বনাম জমি অধিগ্রহণ আইন সংক্রান্ত মামলা— তালিকা দীর্ঘ। প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের মহিলা কর্মীর যৌন হেনস্থার অভিযোগের মামলার শুনানিও তাঁর বেঞ্চেই হয়েছে। বিতর্কের শীর্ষে অবশ্যই থাকবে সিবিআই বিচারক বি এইচ লোয়ার মৃত্যুর তদন্তের দাবিতে মামলা। ২০১৮-য় এই মামলা বিচারপতি মিশ্রর বেঞ্চে পাঠানোর পরে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রর বিরুদ্ধে চার প্রবীণতম বিচারপতি প্রকাশ্যে ক্ষোভ জানিয়েছিলেন। বিদ্রোহের মুখে বিচারপতি মিশ্রের বেঞ্চ থেকে প্রধান বিচারপতি নিজের বেঞ্চে মামলা নিয়ে নেন।

আজ বিচারপতি মিশ্রকে বিদায় জানাতে গিয়ে প্রধান বিচারপতি শরদ অরবিন্দ বোবডে বলেন, ‘‘উনি সাহস ও কঠোর পরিশ্রমের ঐতিহ্য রেখে যাচ্ছেন। সাহসের সঙ্গে বহু বিরূপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন। কিন্তু নিজের দায়িত্ব পালন করে গিয়েছেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement