ফাইল ছবি
স্ত্রী গ্রেফতার হওয়ার পরে চার রাত কেটে গিয়েছে। সমাজকর্মী জাভেদ আনন্দ ব্যস্ত আইনজীবীর ফোনে। ২৫ জুন গুজরাত এটিএসের হাতে ধৃত তিস্তা শেতলবাদের জামিনের আবেদন জানানো যায়, তা নিয়েই ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে যাচ্ছে তাঁর।
মঙ্গলবার ফোনে আমদাবাদ থেকে জাভেদ জানান, তিস্তার সঙ্গে তাঁকে এবং আইনজীবীকে আলাদা আলাদা ভাবে রোজ এক বার করে দেখা করার অনুমতি দিয়েছে আদালত। জাভেদের সঙ্গে দেখা হয়েছে তিস্তার। তাঁর কথায়, ‘‘তিস্তা অত্যন্ত শান্ত ভাবে পরিস্থিতির মোকাবিলা করছে। ভয় পেয়ে দমে যাওয়ার মানুষ ও নয়।’’
জেলবন্দি সমাজকর্মী তিস্তার স্বামী বলছেন, ‘‘আমার আর তিস্তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে। কিন্তু আমরা মানবাধিকারকর্মী। মানুষের জন্য, সত্যের জন্য লড়াই করি। সবচেয়ে জরুরি কথা, আইনি পথে লড়াই করি। সংবিধানই আমাদের একমাত্র হাতিয়ার। জ়াকিয়া জ়াফরির সঙ্গে অন্যায় হয়েছে, তাঁর আদালতে ন্যায়বিচার চাওয়ার অধিকার রয়েছে এবং সেই ন্যায়ের লড়াইয়ে আইনি পথে সাহায্য করার আমাদেরও সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে। আমাদের বিরুদ্ধে এত মামলা-অভিযোগ, তা সত্যের লড়াইকে দিগভ্রান্ত করার জন্যই।’’
জাভেদ জানাচ্ছেন, শনিবার দুপুরে মুম্বইয়ের বাড়িতে তাঁরা সবে খেতে বসেছিলেন। সেই সময়ে বেল বাজে। দরজা খুলতেই ঘরে ঢুকে আসে পুলিশ। কোনও কাগজপত্র ছাড়াই তিস্তাকে আটক করা হয়। আইনজীবী ছাড়া কথা বলবেন না জানালে তিস্তার সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। সেই সময়ে আহত হন তিনি। এমনকি, সমাজকর্মী শৌচাগারে যেতে গেলেও তাঁকে আটকানো হয় বলে অভিযোগ জাভেদের। এর পরে সন্ধ্যা ছ’টা নাগাদ তিস্তাকে সঙ্গে নিয়ে গুজরাত এটিএস আমদাবাদের পথে রওনা হয়।
জাভেদ বলছেন, ‘‘প্রথমে শীর্ষ আদালতে নিহত সাংসদের স্ত্রী জ়াকিয়া জ়াফরির আবেদন খারিজ। তার পরে অমিত শাহের তিস্তাকে নিয়ে মন্তব্য। কিছু যে একটা ঘটতে পারে, তিস্তাও আঁচ করেছিল। কিন্তু সেটা যে এত দ্রুত ঘটবে, আমরা ভাবিনি। রবিবার সকালে জ়াকিয়ার ছেলে তনভিরের সঙ্গে আমার দীর্ঘ ক্ষণ কথা হয়। উনি পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।’’
জ়াকিয়ার ছেলে তনভির মঙ্গলবার ফোনে বলেন, ‘‘শীর্ষ আদালতের রায়ে আমরা খুবই হতাশ। এটা খুবই উদ্বেগজনক যে সুপ্রিম কোর্ট ২০০২ সালে গুজরাত গণহত্যায় কোনও সাম্প্রদায়িক ষড়যন্ত্র খুঁজে পায়নি। তিস্তা এবং শ্রীকুমার দু’জনেই আইন এবং সংবিধানের প্রতি বিশ্বাস রাখা, সৎ মানুষ।’’
বর্তমানে তিস্তা আদালতের নির্দেশে ২ জুলাই পর্যন্ত এটিএসের হেফাজতে রয়েছেন। তিস্তার পরিবারের পক্ষ থেকে ফের আদালতে তাঁর জামিনের আবেদন জানানো হবে। এই বিষয়ে তিস্তার আইনজীবী বিজয় হীরেমথ ফোনে বলেন, ‘‘তিস্তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে। ইতিমধ্যেই ২০১১ সালে একই বিষয়ে তদন্ত হয়েছে, যেখানে তিস্তা আদালত থেকে সুরক্ষাকবচ হিসাবে আগাম জামিন পেয়েছিলেন। আমাদের বক্তব্য— ওই তদন্তের এখনও যে হেতু নিষ্পত্তি হয়নি এবং তিস্তা সহযোগিতা করেছেন, আবারও এফআইআর দায়েরের প্রয়োজন ছিল না।’’
তিনি জানান, এর আগেও গুজরাত দাঙ্গায় মিথ্যে তথ্যপ্রমাণ পেশ করার অভিযোগ তুলে ২০১১ সালে সমাজকর্মী তিস্তা শেতলবাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। সেখানে আদালত তাঁর জামিন মঞ্জুর করে। গুজরাত সরকার তার পরেও কেন মামলা করল, সেই প্রশ্ন তোলা হবে আদালতে। বিজয় বলেন, ‘‘রবিবার শুনানির সময়ে আদালত পুলিশকে ২ তারিখ পর্যন্ত তদন্তের সময় দিয়েছে। আর জ়াকিয়া জ়াফরির মামলায় সুপ্রিম কোর্ট কোথাও সরাসরি তিস্তা শেতলবাদের নাম উল্লেখ করেনি। আদালত তার রায়ে কোথাও বলেনি, তিস্তা মিথ্যা তথ্যপ্রমাণ পেশ করেছেন। সেখানে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার নামোল্লেখ ছিল।’’
দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সাক্ষাৎকারে তিস্তার নাম নেওয়া প্রসঙ্গে কী বলছেন আইনজীবী? বিজয়ের উত্তর, ‘‘অমিত শাহ বলতে পারবেন, তিনি কী বলতে চান।’’
সুপ্রিম কোর্টে নরেন্দ্র মোদীকে ক্লিনচিট দেওয়ার বিরোধিতা করে জ়াকিয়ার আবেদন খারিজ হওয়া প্রসঙ্গে জাভেদ বলছেন, ‘‘এ বিষয়ে স্পেশাল ইনভিস্টেগেশন রিপোর্ট ফাইল হয়েছিল ২০১১-১২ সালে। প্রায় দশ বছর হয়ে গিয়েছে। এর পরে জ়াকিরাজি ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে প্রোটেস্ট পিটিশন দাখিল করেন। সেখানেও বিশেষ তদন্ত দল বক্তব্য জানায়। বিচারকের রায় আসে, পেশ হওয়া রিপোর্ট ঠিক আছে। এর পরে আমরা হাই কোর্টে যাই। সেখানেও সিট বক্তব্য জানায়। হাই কোর্টের রায় আসে। এর পরে মামলা সুপ্রিম কোর্টে যায়। শেষের শুনানিটি ছাড়া গত নয়-দশ বছরে কোথাও এই প্রসঙ্গ উঠেনি যে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আমরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে তথ্যপ্রমাণ পেশ করেছি। শীর্ষ আদালতে এই প্রথম ওই প্রসঙ্গ এল, যা অপ্রত্যাশিত।’’