শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেনের জন্য এ বার আর গন্তব্য রাজ্যের অনুমতি নয়। —ফাইল চিত্র।
পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরানোর ক্ষেত্রে এ বার থেকে আর গন্তব্য রাজ্যের অনুমোদনের প্রয়োজন হবে না। শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেন চালানো নিয়ে মঙ্গলবারই নয়া নির্দেশিকা জারি করেছে কেন্দ্রীয় রেল মন্ত্রক। তাতে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সঙ্গে পরামর্শ করে এ বার থেকে শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেন চালানোর অনুমতি দিতে পারে রেল মন্ত্রক। তার কিছু ক্ষণ পরেই রেল মন্ত্রকের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, এ ব্যাপারে গন্তব্য রাজ্যের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক নয়।
পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরানো নিয়ে চলতি মাসের শুরুতেই পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও কেন্দ্রের মধ্যে সংঘাত পরিস্থিতি দেখা দেয়। পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরাতে রাজ্যের কাছ থেকে প্রত্যাশিত সমর্থন পাচ্ছেন না, গোটা বিষয়টিতে রাজ্য অনীহা দেখাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সেই নিয়ে সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লেখেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গ সরকার কোনও ট্রেন ঢুকতে দিচ্ছে না বলে সেই সময় অভিযোগ করেন রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়ালও। তার পাল্টা হিসাবে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসার রাজনীতির অভিযোগ তুলে সরব হয় নবান্ন।
সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এ দিন রেল মন্ত্রকের তরফে এমন ঘোষণা করা হল। রেলমন্ত্রকের মুখপাত্র রাজেশ বাজপেয়ী এ দিন বলেন, ‘‘শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেন চালানোর ক্ষেত্রে যাত্রা যেখানে শেষ হচ্ছে, সেই রাজ্যের অনুমতি নেওয়া জরুরি নয়। কেন্দ্রের তরফে সংশোধিত যে নির্দেশিকা জারি হয়েছে, তার পর গন্তব্য রাজ্যের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলকও নয়।’’
আরও পড়ুন: আমপানের তুলনা ৯৯-এর সুপার সাইক্লোনের সঙ্গে, বিধ্বংসী সেই ঝড়ের গতি মাপতে ব্যর্থ হয় যন্ত্রও
এর আগে গত ২ মে রেলমন্ত্রকের তরফে যে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছিল, তাতে যদিও বলা ছিল, শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেন চালানোর ক্ষেত্রে গন্তব্য রাজ্যের অনুমোদন প্রয়োজন। যে রাজ্য থেকে যাত্রা শুরু হচ্ছে, তাদেরকেই এই অনুমোদন জোগাড় করতে হবে। ট্রেন ছাড়ার আগে তার লিখিত কপি তুলে দিতে হবে রেলের হাতে। তাই আচমকা এই সিদ্ধান্ত বদল নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে রাজনৈতিক মহলে।
এ নিয়ে নবান্নের তরফে এখনও পর্যন্ত কোনও মন্তব্য করা হয়নি। উপযুক্ত পরিকাঠামো ছাড়া পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরানো নিয়ে সম্প্রতি উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারও। দলে দলে পরিযায়ী শ্রমিক এসে ভিড় করলেও, তাঁদের সকলের কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা এবং সকলকে কোয়রান্টিনে জায়গা দেওয়ার মতো পরিকাঠামো রাজ্যের হাতে নেই বলে জানান তিনি। এখনও পর্যন্ত রাজ্য যত পরিযায়ী শ্রমিক ফিরেছেন, তার মধ্যে ৮ শতাংশের দেহেই সংক্রমণ ধরা পড়েছে বলে সোমবারই ঘোষণা করে বিহার সরকার।
আরও পড়ুন: ৩ লক্ষ লোককে সরালো প্রশাসন, কাল বাড়ির বাইরে বেরবেন না: মমতা
এমনকি গোয়ায় বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাবন্তও এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। গোয়ায় শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেন দাঁড়ানো নিয়ে আপত্তি তোলেন তিনি। এতে অসংক্রিমত এলাকাগুলিতেও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তবে এ দিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে যে নির্দেশিকা জারি করা হয়, তাতে বলা হয়, শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেনের সময়সূচি, গন্তব্য এবং পথে কোথায় কোথায় ট্রেন থামবে, সে ব্যাপারে রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে রেলমন্ত্রকই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।