নাবালিকার যৌন হেনস্থার মামলায় অভিযুক্তকে জামিন দিল বম্বে হাই কোর্ট। প্রতীকী ছবি।
ঘনিষ্ঠতায় উভয় পক্ষের সমর্থন থাকলে পকসো আইনে অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করা যায় না। এই যুক্তিতে এক নাবালিকার যৌন হেনস্থার মামলায় অভিযুক্ত যুবককে জামিন দিল বম্বে হাই কোর্ট। আদালতের পর্যবেক্ষণ, পকসো আইন রোম্যান্টিক বা পরস্পরের সম্মতিযুক্ত সম্পর্কে সাজা দেওয়ার জন্য তৈরি হয়নি। কাউকে ‘অপরাধী’ হিসাবে দেগে দেওয়া এই আইনের উদ্দেশ্য নয়।
বর্তমানে অভিযুক্ত যুবকের বয়স ২৫ বছর। ২০২১ সালে যখন তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, বয়স ছিল ২২ বছর। এক নাবালিকাকে যৌন হেনস্থার অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। কিন্তু দু’বছর অতিক্রান্ত হলেও এখনও বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। ২০২১-এর ফেব্রুয়ারি থেকে জেল হেফাজতে রয়েছেন ওই যুবক। আদালতের পর্যবেক্ষণ, বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। তাই যুবককে বেশি দিন জেল হেফাজতে রাখা উচিত হবে না। এতে জেলের অন্য অপরাধীদের সংস্পর্শে আসবেন তিনি। যার বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে অভিযুক্তের মনে।
বম্বে হাই কোর্টের বিচারপতি অনুজা প্রভুদেশাইয়ের একক বেঞ্চ যুবকের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেছে। বিচারপতি জানিয়েছেন, এই ঘটনার প্রাথমিক তদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী, অভিযুক্তের সঙ্গে, যৌন হেনস্থার শিকার ওই নাবালিকার সম্পর্ক ছিল। তাঁদের পারস্পরিক সম্মতিতেই এই সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।
শুনানি চলাকালীন বিচারপতি বলেন, ‘‘শিশুদের যৌন হেনস্থা, নিগ্রহের হাত থেকে বাঁচাতে পকসো আইন তৈরি হয়েছিল। শিশুদের স্বার্থ সুরক্ষিত করা এবং তাদের মঙ্গলসাধনের জন্য এই আইনে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। কিন্তু রোম্যান্টিক এবং পরস্পরের সম্মতিযুক্ত সম্পর্কে কাউকে দোষী ঘোষণা করে সাজা দেওয়া এই আইনের কাজ নয়।’’
নির্যাতিতা নাবালিকার মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে যুবককে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। এফআইআরে জানানো হয়েছিল, ২০২০ সালের ২৭ ডিসেম্বর ওই নাবালিকা বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল, আর ফেরেনি। তার মা ভেবেছিলেন, কেউ বা কারা মেয়েকে অপহরণ করেছেন।
পরে নাবালিকাকে খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল। সে পুলিশকে জানিয়েছিল, বাড়ি থেকে বেরিয়ে সে এক বন্ধুর বাড়ি যায় এবং দু’তিন দিন তার বাড়িতে থাকে। বাবা-মাকে না বলে বাড়ি থেকে বেরোনোর ফলে আবার বাড়ি ফিরতে সে ভয় পেয়েছিল। বন্ধুর বাড়ি থেকে বেরিয়েও সে নিজের বাড়িতে ফিরতে পারেনি। বাড়ির কাছে ঘুরঘুর করেছে বেশ কিছু দিন। রাস্তাতেই কেটেছে রাত।
নাবালিকা জানায়, ২৯ ডিসেম্বর রাতে অভিযুক্ত যুবক তাকে ডেকে একটি আবাসনের ছাদে গিয়েছিলেন। সেখানে তার সঙ্গে জোর করে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেন যুবক। পরে ২০২১ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বিতীয় বার তাদের মধ্যে একই ভাবে যৌন সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
একাধিক শর্তে অভিযুক্তকে জামিন দেওয়া হয়েছে। অভিযোগকারী এবং এই মামলার অন্যান্য সাক্ষীর সঙ্গে কোনও রকম যোগাযোগ না করা, প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা না করা ইত্যাদি শর্ত দেওয়া হয়েছে তাঁকে।