সনিয়া গাঁধী। ফাইল চিত্র।
প্রথমে কংগ্রেসের কার্যকরী কমিটির বৈঠক। তারপরে আলাদা আলাদা ভাবে বিক্ষুব্ধ নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ। এবার সংসদীয় দলের বৈঠক।
কংগ্রেস হাই কমান্ডের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে দলের বিক্ষুব্ধ নেতাদের ক্ষোভ দূর করতে আজ ফের সনিয়া গান্ধী আশ্বাস দিলেন, তিনি সংগঠন মজবুত করতে সক্রিয়। বিক্ষুব্ধ নেতাদের অনেক পরামর্শই যথাযথ। সেই অনুযায়ী তিনি পদক্ষেপ করবেন। একই সঙ্গে কংগ্রেসের বাস্তব পরিস্থিতি স্বীকার করে নিয়ে সনিয়া বলেছেন, আগামী দিনে দলের সামনে রাস্তা ‘আগের থেকে আরও চ্যালেঞ্জিং’ হতে চলেছে। যা কংগ্রেসের লড়াইয়ের ক্ষমতা, নিষ্ঠা ও সঙ্কল্পকে কঠিন পরীক্ষার মুখে ফেলবে।
পঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যের ভোটে কংগ্রেসের ভরাডুবির পরে দলের বিক্ষুব্ধ নেতারা নতুন করে সক্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। তাঁদের মধ্যে গান্ধী পরিবারের প্রতি ক্ষোভও প্রকাশ্যে চলে এসেছে। বিক্ষুব্ধদের সম্পর্কে কড়া মনোভাব নেওয়ার বদলে নিজেই সক্রিয় হয়ে ক্ষোভ মেটানোর চেষ্টা করেছেন সনিয়া। আজ সংসদের সেন্ট্রাল হলে দলের সংসদীয় কমিটির বৈঠকে সনিয়া পাঁচ রাজ্যের ভোটে কংগ্রেসের ফলাফলকে ‘ভয়াবহ ও যন্ত্রণাদায়ক’ আখ্যা দিয়েছেন। দলের সাংসদদের সনিয়া বলেন, ‘‘আমি ভাল ভাবেই জানি, সাম্প্রতিক নির্বাচনের ফলাফলের পরে আপনারা কতখানি হতাশ। কী ভাবে সংগঠনকে মজবুত করা যায়, তা নিয়ে অনেক পরামর্শ আমার কাছে এসেছে। অনেকগুলিই যথাযথ এবং আমি সেই অনুযায়ী কাজ করছি।’’
একের পর এক রাজ্যে হারের পরে কংগ্রেসের প্রবীণ নেতাদের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজ্যেও অনেকেই যে ভাবে ক্ষুব্ধ হয়ে বিজেপি বা আম আদমি পার্টিতে পা বাড়ানোর কথা ভাবছেন, তাতে কংগ্রেসের চিন্তা বেড়েছে। সনিয়া, রাহুল একাধিক রাজ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মেটাতে ধারাবাহিক বৈঠক করেছেন। সনিয়া আজ বলেন, ‘‘সংগঠনের প্রতিটি স্তরে ঐক্য ভীষণ জরুরি। আমার দিক থেকে বলতে পারি, তা নিশ্চিত করতে যা যা দরকার, সব করতে আমি বদ্ধপরিকর।’’
কংগ্রেসের কার্যকরী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, দলের হাল শোধরানোর পথ খুঁজতে চিন্তন শিবিরের আয়োজন করা হবে। এপ্রিলের শেষে বা মে মাসে চিন্তন শিবির ডাকা হতে পারে। সনিয়া আজ বলেছেন, চিন্তন শিবিরে বহু সহকর্মী ও দলের নেতাদের মতামত শোনা যাবে। চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে স্পষ্ট রূপরেখা তৈরি করা যাবে। সনিয়ার যুক্তি, দলের হাল ফেরানোটা শুধু কংগ্রেসের জন্য নয়, গণতন্ত্র ও সমাজের জন্যও প্রয়োজন।
বিজেপিকে নিশানা করে সনিয়া বলেছেন, প্রাচীন থেকে সাম্প্রতিক ইতিহাস বিকৃত করা হচ্ছে। বিরোধীদের উপরে শাসনযন্ত্রকে কাজে লাগানো হচ্ছে। কৃষকদের আন্দোলন প্রত্যাহারের সময় যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তা পালন করা হয়নি। রান্নার গ্যাস, জ্বালানি ও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম সহনসীমা ছাড়িয়েছে। রাহুল গান্ধী ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহও বৈঠকে হাজির ছিলেন। সনিয়া বলেন, ইউপিএ সরকারের আমলে তৈরি একশো দিনের কাজ ও খাদ্য সুরক্ষা আইনের সমালোচনা করেছিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু ওই দুই প্রকল্পই অতিমারির সময়ে মানুষের সহায় হয়ে উঠেছে।