মোদী সরকার আচমকা ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডেকেছে। —ফাইল চিত্র।
মহিলা সংরক্ষণ বিল না কি রোহিণী কমিশনের রিপোর্ট মেনে ওবিসি-দের সংরক্ষণে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের জন্য বিভিন্ন পরিমাণ ঘোষণা? নতুন সংসদ ভবনে অধিবেশনে প্রথম অধিবেশনের জন্য গণেশ চতুর্থীর সময়কে বেছে নেওয়া? না কি জি২০ আয়োজন, চন্দ্রযান-৩-এর সাফল্যের ঢাক পিটিয়ে ২০৪৭-এ ‘বিকশিত ভারত’-এর স্বপ্ন বিলি? মোদী সরকার কেন আচমকা ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডেকেছে, বিরোধী শিবির তা নিয়ে এখনও অন্ধকারে।
মোদী সরকারের পরিকল্পনা যা-ই হোক না কেন, সংসদের বিশেষ অধিবেশনে আদানি-কাণ্ডে যৌথ সংসদীয় কমিটি বা জেপিসি তদন্ত এবং চিনের আগ্রাসনের সামনে মোদী সরকারের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে কংগ্রেস প্রশ্ন তুলবে। কংগ্রেসের অভিযোগ, বিদেশি সংবাদপত্রে সম্প্রতি আদানি গোষ্ঠীর বেআইনি কাজকর্ম ও মোদী সরকারের নিষ্ক্রিয়তার দিকে আঙুল উঠেছে। তা থেকে নজর ঘোরাতেই মোদী সরকার প্রথমে ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ নিয়ে জলঘোলা শুরু করেছে। তার পরে সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডেকে অন্য বিষয় সামনে নিয়ে আসবে।
মোদী জমানায় ওবিসি ভোটব্যাঙ্ক বিজেপির অন্যতম শক্তি হয়ে উঠেছে। তাতে ধাক্কা দিয়ে এসপি, জেডিইউ, আরজেডি-র মতো দলগুলি জাতগণনার দাবি তুলেছে। তাঁদের মতে, এখন ওবিসি-দের জন্য ২৭% আসন সংরক্ষিত। জাতগণনায় ওবিসি-দের সংখ্যা জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ বা তার বেশি বলে জানা গেলে আরও সংরক্ষণের দাবি উঠবে। তাতে ওবিসি, উচ্চবর্ণ দু’দিক থেকেই চাপের মুখে পড়বে মোদী সরকার। পাল্টা চালে মোদী সরকার ওবিসি-দের মধ্যে যে সব পিছিয়ে থাকা গোষ্ঠী সংরক্ষণের সুবিধা পাচ্ছে না, তাদের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ সংরক্ষণের বন্দোবস্ত করতে পারে। ২০১৭-এ অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি জি রোহিণীর নেতৃত্বে কমিশন গঠন হয়েছিল। সম্প্রতি সেই কমিশন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে রিপোর্ট পেশ করেছে। বিরোধীদের একাংশের ধারণা, সংসদের বিশেষ অধিবেশনে সেই রিপোর্ট পেশ করা হতে পারে।
বিরোধী শিবিরের একাংশ মনে করছেন, লোকসভা ভোটের আগে মহিলা ভোটব্যাঙ্ক ও ওবিসি ভোটব্যাঙ্ককে আরও মজবুত করতে চাইতে পারে মোদী সরকার। মহিলা ভোটব্যাঙ্ককে মজবুত করতে ২০২৪-এর আগে মহিলা সংরক্ষণ বিল নিয়ে আসা হতে পারে। ইউপিএ জমানায় মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশ করানোর চেষ্টা হলেও তা সফল হয়নি। এ বার মোদী সরকার তা করে বাজিমাতের চেষ্টা করতে পারে।
সংসদের বিশেষ অধিবেশনে মোদী সরকারের পাল্টা রণকৌশল চূড়ান্ত করতে মঙ্গলবার বিকেলে সনিয়া গান্ধীর ১০ জনপথের বাসভবনে কংগ্রেসের সংসদীয় স্ট্র্যাটেজি গোষ্ঠীর বৈঠক ডাকা হয়েছে। তার পরে কংগ্রেস সভাপতি তথা রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে অন্যান্য বিরোধী দলের নেতানেত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। সেখানে বিরোধীদের সামগ্রিক রণকৌশল নিয়ে আলোচনা হবে।
কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলের নেতারা মনে করছেন, গত ২৮ মে নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন হলেও সে সময় তার কাজ শেষ হয়নি। তার পরে পুরনো ভবনেই বাদল অধিবেশন বসেছিল। শুধুমাত্র হিন্দু রাষ্ট্রের প্রণেতা বিনায়ক দামোদর সাভরকরের জন্মদিবসে সংসদ উদ্বোধন করার জন্য মোদী সরকার ওই দিনটি বেছে নিয়েছিল। এ বার নতুন সংসদ ভবনে ১৮ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর, মাত্র পাঁচ দিনের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হয়েছে। হিন্দু ধর্মে গণেশপুজো থেকে যাবতীয় পুজোআচ্চা শুরু হয়। ১৯ সেপ্টেম্বর গণেশ চতুর্থী। হতে পারে, এই কারণেই ওই সময় বিশেষ অধিবেশন ডাকা হয়েছে। নতুন সংসদ ভবনের মাহাত্ম্য নিয়েও এক দিন আলোচনা হবে বলে বিরোধীরা খবর পেয়েছেন।