BJP

ফেসবুক-বিজেপি যোগ: তদন্ত দাবি কংগ্রেসের

মার্কিন সংবাদপত্র ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে এই নতুন তথ্য প্রকাশের পরে আজ কংগ্রেস একইসঙ্গে ফৌজদারি তদন্ত ও যৌথ সংসদীয় কমিটির তদন্তের দাবি তুলেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৬:১৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

বিজেপি ও ফেসবুকের মধ্যে আঁতাত নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠল। এ বার অভিযোগ, নরেন্দ্র মোদীর লোকসভা ভোটে জয়ে ফেসবুকের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা উচ্ছ্বসিত হয়ে নিজেদেরও সাফল্যের ঢাক পিটিয়েছিলেন।

Advertisement

মার্কিন সংবাদপত্র ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে এই নতুন তথ্য প্রকাশের পরে আজ কংগ্রেস একইসঙ্গে ফৌজদারি তদন্ত ও যৌথ সংসদীয় কমিটির তদন্তের দাবি তুলেছে।

কংগ্রেসের দাবি, বিজেপি-ফেসবুক আঁতাতের তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত ফেসবুক ও তার মালিকানাধীন হোয়াটসঅ্যাপ-এর লাইসেন্স ও অন্যান্য ছাড়পত্রের উপর স্থগিতাদেশ জারি করা হোক। কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী বলেন, ‘‘আমরা এ বিষয়ে সংসদে সরব হব। কিন্তু সরকার না চাইলে আলোচনা হতে পারে না। সরকারের যদি মনোবাঞ্ছা হয় ফেসবুককে আগলানো, তা হলে সরকার আলোচনা চাইবে না।’’

Advertisement

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের খবর অনুযায়ী, ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে নরেন্দ্র মোদীর জয়ের পর এ দেশে ফেসবুকের পাবলিক পলিসি এগ্‌জিকিউটিভ আঁখি দাস তাঁর সংস্থার কর্মীদের ই-মেল পাঠিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিলেন। আঁখি সেই ই-মেলে লিখেছিলেন, ‘আমরা ওঁর সোশ্যাল মিডিয়ার প্রচার দাবানলের মতো ছড়িয়ে দিয়েছিলাম। বাকিটা ইতিহাস।’ কংগ্রেস আগেই ফেসবুক সংস্থার মার্ক জ়াকারবার্গকে চিঠি পাঠিয়েছিল। এ বার তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকেও বিজেপির সঙ্গে ফেসবুকের আঁতাতের অভিযোগ জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, ‘‘ফেসবুক-বিজেপি আঁতাঁত নিয়ে গত বছর লোকসভা নির্বাচনের পর জুন মাসে আমি সংসদে সরব হই। তৃণমূলই এই বিষয়টা প্রথম সামনে আনে। আজ আঁখি দাস সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে, তাতে আমাদের তখন থেকে বলে আসা কথাগুলোই প্রমাণিত হচ্ছে। কয়েক মাস পরে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোট। তার আগে এই ধরনের ঘটনায় আমরা প্রতিবাদ করছি। ফেসবুককে আমরা চিঠি দিয়েছি।’’

তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ফেসবুকের শীর্ষকর্তাদের তলব করা হয়েছে। ২ সেপ্টেম্বরের বৈঠকে এ নিয়ে ঝড় উঠতে পারে। কারণ এমনিতেই জম্মু-কাশ্মীরে ইন্টারনেট পরিষেবা নিয়ে স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা হতে পারে কি না, তা নিয়ে এনডিএ-র সাংসদদের সঙ্গে বিরোধী সাংসদদের বিবাদ তুঙ্গে উঠেছে। ২ সেপ্টেম্বরের বৈঠকে ফেসবুক কর্তাদের সঙ্গে বিশেষজ্ঞদেরও ডাকা হয়েছে। তৃণমূলের দুই সাংসদ মহুয়া মৈত্র, নাদিমুল হক বৈঠকে যোগ দেবেন। এর আগেও বিজেপি ও ফেসবুক সংস্থার মধ্যে আঁতাতের অভিযোগ উঠেছে। বিদেশি সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরে দেখা গিয়েছে, এ দেশে শাসক দল বিজেপিকে চটাতে ‘ভয়’ পায় ফেসবুক। সে ‘ভয়’ এতটাই যে, তার জন্য হিংসায় উস্কানি বা বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের বিরুদ্ধে সংস্থার নীতি ভাঙতেও পিছপা হয় না মার্ক জ়াকারবার্গের সংস্থা।

এ দেশে ফেসবুকের পাবলিক পলিসি এগ্‌জিকিউটিভ আঁখি দাস বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে ‘বিদ্বেষ রোধ আইন’ প্রয়োগে বাধা দিয়েছিলেন। আঁখি সংস্থার কর্মীদের বলেছিলেন, বিজেপি নেতাদের আইনভঙ্গকারী হিসেবে শাস্তি দিলে ভারতে ফেসবুকের ব্যবসায়িক ক্ষতি হতে পারে।

তৃণমূলের অভিযোগ, গত ২৮ অগস্ট তৃণমূল ছাত্র পরিষদের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তৃতার ফেসবুক লাইভের সময় যাঁরা লাইক, কমেন্ট করছিলেন, তাঁদের ব্লক করে দেওয়া হয়। তা নিয়েও তৃণমূল ফেসবুককে অভিযোগ জানিয়েছে। ভারতের বিপুল সম্ভাবনাময় অনলাইন কেনাকাটার বাজারে টাকা মেটানোর মাধ্যম হয়ে উঠতে চাইছে ফেসবুকের শাখা হোয়াটসঅ্যাপের টাকা মেটানোর পরিষেবা ‘হোয়াটসঅ্যাপ-পে’। সেই ব্যবসায়িক স্বার্থেই শাসক দলের সঙ্গে মার্ক জ়াকারবার্গের সংস্থা গোপন বোঝাপড়ার পথে হাঁটছে বলেও এর আগে অভিযোগ উঠেছে।

এ বার নরেন্দ্র মোদীর জয়ে আঁখি দাসের উচ্ছ্বাস জানিয়ে ই-মেল ফাঁস হওয়ার পরে অধীরের মন্তব্য, ‘‘এটা স্পষ্ট যে উনি মোদীর জয়ে এবং তার পিছনে ওঁর সংস্থা ফেসবুক যে ভূমিকা পালন করেছে, তাতে আনন্দিত হয়েছিলেন। তিনি গর্ব করে বলেছিলেন, ফেসবুক বিজেপির কাছে যে সব দাবি তুলেছিল, তা বিজেপি নিজেদের নির্বাচনী ইস্তাহারে রেখেছিল। তার থেকেও খারাপ হল, ফেসবুকের উচ্চপদস্থ কর্তারা ভারতে ফেসবুকের কর্তাদের এই পক্ষপাতিত্বের কথা জানতেন। তাঁরাও এতে অংশ নিয়েছিলেন। কংগ্রেস এই ভাবে দেশের গণতন্ত্র নিয়ে খেলা করতে দেবে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement