উপনির্বাচনের ফল নিয়ে প্রাথমিক উচ্ছ্বাসের রেশ না কাটতেই ভবিষ্যতের দিশা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়ে গেল কংগ্রেসে।
বিহারে ১০ বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনে লালু-নীতীশ-কংগ্রেসের জোট শুধু বিজেপিকে ধাক্কাই দেয়নি, লোকসভা ভোটের পর দৃশ্যত নেতিয়ে পড়া তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে কিছুটা চাঙ্গা করেছে। বিহারে কংগ্রেস ১টি আসনও পেয়েছে। কিন্তু এ বার কোন পথে এগোবে দল, তা নিয়ে কংগ্রেসে উঠে আসছে তিনটি মত। সেগুলি হল, l আঞ্চলিক দলগুলির লেজুড় হয়ে না থেকে এখনই ঘোষণা করে দেওয়া, বিহারে একলা চলবে কংগ্রেস। l লালু-নীতীশদের জোটে থেকেই বিজেপিকে গোটা দেশে কোণঠাসা করার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। l উচ্চবর্ণের রাজনীতি করে বিজেপির ভোটব্যাঙ্কে থাবা বসানো। দরকারে শুধু নীতীশ কুমারের সঙ্গে জোট করা।
উপনির্বাচনে জোটে যাওয়াটা ভুল হয়েছে, এমনটা কেউই বলছেন না। দলের ওয়ার্কিং কমিটির এক সদস্য আজ বলেন, “মোদী ঝড়ের গতি কমছে, এটা ভাল খবর। সে দিক থেকে দেখলে জোট করে কোনও ভুল হয়তো করেনি দল। কিন্তু জাতীয় দলের মর্যাদা ধরে রাখতে হলে এই সূত্রের এখানেই ইতি হওয়া প্রয়োজন।”
জোট সাফল্য পাওয়ার পরই কেন এমন একলা চলার দাবি? কংগ্রেস শীর্ষ নেতাদের একটি অংশের ব্যাখ্যা, ওই জোট-সূত্র আঁকড়ে থাকলে ঘুরে দাঁড়ানো দূরের কথা, এটাই হতে পারে কংগ্রেসের উল্টো যাত্রার শুরু। এর পর লালু-নীতীশদের বা আঞ্চলিক দলগুলির লেজুড় হয়েই থেকে যেতে হবে দলকে। কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির ওই নেতার বক্তব্য, বিহারে বিধানসভা ভোটের এক বছর বাকি। এখনই দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যে সনিয়া বা রাহুল গাঁধীর ঘোষণা করে দেওয়া উচিত, বিহারে কংগ্রেস একলা চলবে।
রাহুল শিবিরের কয়েক জন নেতা এই দাবির পক্ষে একটি হিসেবও দিচ্ছেন। তা হল, বিহারে একা লড়লে হয়তো ১০টির বেশি আসন পাবে না কংগ্রেস। কিন্তু লালু-নীতীশের সঙ্গে জোটে গেলেও তার থেকে বেশি আসন আসবে না। ২৪৩ আসনের বিধানসভায় লালু-নীতীশরা অন্তত শ’দুই আসনে লড়বেনই। এখন তাঁরা বামেদেরও সঙ্গী করার কথা ভাবছেন। ফলে কংগ্রেসকে তাঁরা ২০-২৫টি আসন ছাড়তে পারেন। তার মধ্যে ১০টির বেশি জেতা কংগ্রেসের পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু বিহারে জোটনীতিতে আটকে থাকলে উত্তরপ্রদেশ থেকেও একই দাবি উঠবে। হিন্দিবলয়ের এই দুই রাজ্যে লোকসভার মোট ১২০টি আসন রয়েছে। জোট-পথে চললে দেখা যাবে হিন্দিবলয়ের হৃদয়খণ্ডে কংগ্রেসের একক অস্তিত্বই থাকবে না।
কিছু কংগ্রেস নেতার মত ঠিক উল্টো। তাঁদের বক্তব্য, একলা চলার রাজনীতি ছেড়ে দিয়ে এখন জোট গড়ার ওপরেই নজর দেওয়া উচিত। সেটাই বাস্তব। যাতে ধর্মনিরপেক্ষ জোট গঠনের মাধ্যমে একের পর এক রাজ্যে বিজেপিকে চাপে ফেলা যায়।
কংগ্রেস নেতাদের তৃতীয় একটি অংশ আবার বলছেন, নিজেদের লক্ষ্য বুঝে এগোতে হবে। দলের শীর্ষ সারির এক সংখ্যালঘু নেতার মতে, কংগ্রেস মুসলিম ভোট এমনিতেই পাবে। পিছিয়ে পড়া ও অতি-পিছিয়ে পড়াদের রাজনীতি করেন লালু-নীতীশ। প্রাসঙ্গিকতা ধরে রাখতে কংগ্রেসের এখন উচ্চবর্ণের রাজনীতি করে একলা চলার কথা ঘোষণা করা ও বিহারে সভাপতি পদে উচ্চবর্ণের নেতাকে বসানো উচিত। তাতে বিজেপিও চাপে পড়বে। পরে দরকারে শুধু নীতীশের সঙ্গে জোটে গেলেও ৭০-৮০টি আসনে লড়ার সুযোগ পেতে পারে কংগ্রেস। তবে কংগ্রেস চাইলেও একা নীতীশের সঙ্গে জোট সম্ভব কি না, সে প্রশ্ন থাকছেই। বিশেষ করে নিজের অস্তিত্বের স্বার্থেই নীতীশকে যেখানে দু’দশকের শত্রুতা ভুলে লালুপ্রসাদের সঙ্গে জোট করতে হয়েছে। এবং ভোটে তা সাফল্যও পেয়েছে সদ্য।