রবিবার কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক। প্রতীকী ছবি।
রবিবার বিকেলে কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের আগে শনিবার দলত্যাগী গুলাম নবি আজাদের বাড়িতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে বৈঠক করলেন আর এক বিক্ষুব্ধ নেতা আনন্দ শর্মা।
আনন্দ শর্মা নিজে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য। আবার তিনি গুলাম নবির মতো কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধ নেতাদের জি-২৩ গোষ্ঠীরও অন্যতম মস্তিষ্ক। রবিবার কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে দলের সভাপতি নির্বাচনের নির্ঘণ্ট চূড়ান্ত হওয়ার কথা। ঠিক তার আগে গুলাম নবির সাউথ অ্যাভিনিউ লেনের বাংলোয় গিয়ে আনন্দ শর্মা এক ঘণ্টা বৈঠক করায় রক্তচাপ বেড়েছে চব্বিশ আকবর রোডে এআইসিসি-র নেতাদের। শর্মা কিছু দিন আগেই হিমাচলে ভোটের স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যানের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। তিনিও রাহুলের দিকে ইঙ্গিত করে তাঁকে অপমান করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছিলেন। প্রশ্ন উঠেছে, রাহুল গান্ধীর ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রার মুখে দলের মনোবল ভেঙে দিয়ে কি গুলাম নবির পথে আরও বিক্ষুব্ধ নেতা একে একে দল ছাড়বেন? না কি গান্ধী পরিবারের আস্থাভাজন কাউকে সভাপতি করা হলে বিক্ষুব্ধ নেতারা তাঁর বিরুদ্ধে প্রার্থী দেবেন?
শুক্রবার গুলাম নবি কংগ্রেস থেকে ইস্তফা দিয়ে সনিয়া ও রাহুল গান্ধীকে কড়া ভাষায় নিশানা করেছিলেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, তিনি ও দলের ২২ জন নেতা দলের হাল ফেরাতে সনিয়াকে চিঠি লেখার পরে যে সব সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তার কোনওটাই কার্যকর হয়নি। সাংগঠনিক নির্বাচনের নামে প্রহসন হচ্ছে। সনিয়াকে সামনে রেখে রাহুলই দল চালাচ্ছেন। গান্ধী পরিবার নিজের হাতের পুতুল হিসেবে কোনও ‘প্রক্সি’-কে সভাপতি করতে চলেছে বলে অভিযোগ তাঁর।
আজ জি-২৩-র আর এক সদস্য মণীশ তিওয়ারি কার্যত গুলাম নবির সুরেই অভিযোগ তুলেছেন, দু’বছর আগে তাঁরা দলের হাল ফেরানো নিয়ে চিঠি লেখার পরে সনিয়া গান্ধীর বাড়িতে বৈঠক হয়। কিন্তু সেখানে আলোচনার কোনওটাই রূপায়ণ হয়নি। তার পর থেকে সমস্ত বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস হেরেছে। সিদ্ধান্ত রূপায়ণ হলে এমনটা হত না। জি-২৩ গোষ্ঠীর আর এক সদস্য পৃথ্বীরাজ চহ্বাণও গুলাম নবির সুরেই নালিশ জানিয়েছেন, সাংগঠনিক নির্বাচন ঠিক মতো হচ্ছে না। কাউকে ‘হাতের পুতুল’ করে রেখে সভাপতি পদে বসালে লাভ নেই। গুলাম নবি বলেছিলেন, রাহুল বা তাঁর নিরাপত্তা রক্ষী, ব্যক্তিগত সহায়কেরা দলের সিদ্ধান্ত নেন। আজ তিওয়ারি বলেছেন, “যাঁরা কংগ্রেস নেতাদের চাপরাশি ছিলেন, কোনও ওয়ার্ডের ভোটে জেতেননি, তাঁরা এখন কংগ্রেস নিয়ে জ্ঞান দিচ্ছেন!” কংগ্রেস নেতারা তিওয়ারির মন্তব্যকে গুরুত্ব দিতে চাইছেন না। তাঁদের মতে, তিওয়ারি চাইছেন, তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হোক। যাতে কংগ্রেসে না থেকেও তিনি নিজের সাংসদ পদ ধরে রাখতে পারেন।
কংগ্রেস সূত্রের খবর, এই পরিস্থিতিতে রবিবার বিকেলে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে দলের নেতারা সনিয়া-রাহুলের নেতৃত্বেই ফের নিজেদের আস্থা জানাবেন। সনিয়া, রাহুল, প্রিয়ঙ্কা তিন জনেই এখন সনিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য লন্ডনে। সেখান থেকেই তাঁরা ভিডিয়ো কনফারেন্সে ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে যোগ দেবেন। সভাপতি নির্বাচনের নির্ঘন্টও চূড়ান্ত করে ফেলা হবে। পাশাপাশি রাহুলকে আরও একবার সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার জন্য আর্জি জানানো হবে। ওয়ার্কিং কমিটির নেতা মল্লিকার্জুন খড়্গের বক্তব্য, “আমরা ওঁকে জোর করব। আর বিকল্প কে রয়েছে?” কংগ্রেস সূত্রের খবর, রাহুল সভাপতি না হওয়ার অবস্থানে অনড় থাকলে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌতকেই সভাপতি করার প্রক্রিয়া শুরু হবে। গহলৌত শর্ত দিয়েছেন, সচিন পাইলটের বদলে তাঁর নিজের পছন্দসই লোককে মুখ্যমন্ত্রী করতে হবে।