ফাইল চিত্র।
ইডি-র যাবতীয় ক্ষমতায় সিলমোহর দিলেও গত আট বছরে ইডি-কে রাজনৈতিক স্বার্থে বিরোধীদের বিরুদ্ধে কাজে লাগানোর বিষয়টি সুপ্রিম কোর্ট বিবেচনা করেনি বলে অবস্থান নিল কংগ্রেস। উল্টো দিকে কেন্দ্রীয় সরকার সংসদে জানিয়েছে, বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলিই দুর্নীতির তদন্তে বাধা দিচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ-সহ আধ ডজন বিরোধীশাসিত রাজ্য সিবিআই তদন্তের সার্বিক অনুমতি প্রত্যাহার করে নেওয়ায় ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি দুর্নীতিতে দু’শোরও বেশি তদন্ত আটকে রয়েছে। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের ২৭টি মামলায় প্রায় ১২০০ কোটি টাকার দুর্নীতির তদন্ত আটকে রয়েছে বলে রাজ্যসভায় জানিয়েছে সরকার।
বুধবার সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতির বেঞ্চ ইডি-র গ্রেফতারি থেকে তল্লাশি, নগদ-সম্পত্তি আটক থেকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় বয়ান নথিবদ্ধ করে প্রমাণ হিসেবে পেশ করার যাবতীয় ক্ষমতায় সিলমোহর দিয়েছে। কংগ্রেসের দাবি, মোদী সরকারের আট বছরে ইডি পুরোপুরি শাসক দলের শাখা হিসেবেই কাজ করেছে। বিরোধী দল ছেড়ে কেউ বিজেপিতে যোগ দিলেই ইডি হাত গুটিয়ে নিয়েছে। তাদের সম্পর্কে কে কী ভাবল, তা নিয়েও ইডি মাথা ঘামায়নি। ইডি-র এই অপব্যবহারের জন্যই আর্থিক নয়ছয় প্রতিরোধ আইনে রক্ষাকবচ দরকার ছিল বলে কংগ্রেসের মত।
সরাসরি সুপ্রিম কোর্টের রায়ের সমালোচনা না করলেও কংগ্রেস নেতা তথা আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির বক্তব্য, গত আট বছরে ইডি-র মামলা, তল্লাশির সংখ্যা বেড়েছে। তার ৯৯ শতাংশই বিরোধীদের বিরুদ্ধে। কিন্তু দোষী সাব্যস্ত করার হার মাত্র ০.৫ শতাংশ। যার ফলে স্পষ্ট, ইডি-র কাজ শুধুমাত্র বিরোধীদের হেনস্থা করা। এই বিষয়গুলিতে সুপ্রিম কোর্টের আরও নজর ও হস্তক্ষেপ দরকার ছিল।
বিজেপির তরফে পাল্টা যুক্তি দেওয়া হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে ইডি-র তল্লাশিতে কোটি কোটি টাকা নগদ উদ্ধার থেকেই স্পষ্ট, নিছক রাজনৈতিক স্বার্থে তদন্ত হচ্ছে না। মনু সিঙ্ঘভি বলেন, ‘‘যেখানে প্রমাণ রয়েছে, সেখানে অবশ্যই তদন্ত, তল্লাশি হোক। আমরা কখনও তাতে আপত্তি করছি না। কিন্তু বিজেপিতে যোগ দিলেই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত হিমঘরে চলে যাচ্ছে কেন?’’
ইডি-র যথেচ্ছ ক্ষমতায় মানবাধিকার এবং সংবিধান-প্রদত্ত মৌলিক অধিকারে আঘাত আসছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। সুপ্রিম কোর্ট সেই অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছে। ইডি কাউকে গ্রেফতার করলে জামিনের জোড়া শর্তেও সিলমোহর দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ইডি-র আইনে বলা রয়েছে, অভিযুক্তকেই নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখাতে হবে। জামিন পেলেও তিনি অপরাধ করবেন না বলে আদালতের বিশ্বাস আদায় করতে হবে।
পাঁচ বছর আগে সুপ্রিম কোর্টেরই প্রাক্তন বিচারপতি রোহিন্টন নরিম্যানের বেঞ্চ ইডি-র আইনের এই ধারা ‘অসাংবিধানিক’ বলে খারিজ করে দিয়েছিল। কিন্তু এ বার সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি এ এম খানউইলকরের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ বুধবার তাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। আইনজ্ঞদের একাংশও সুপ্রিম কোর্টের রায়ের সমালোচনা করেছেন। প্রাক্তন অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যের মতে, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট ইডি-র আর্থিক নয়ছয় প্রতিরোধ আইনের বিতর্কিত ধারাগুলো সংশোধন করার সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু সেই সুযোগ হারাল। শীর্ষ আদালত যে মানবাধিকারের পক্ষে, সেই বার্তা দেওয়ার সুযোগও হাতছাড়া হল।’’ কংগ্রেস সাংসদমণীশ তিওয়ারির বক্তব্য, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের এই রায় কার্যত সংবিধান-প্রদত্ত সমস্ত রক্ষাকবচ ও মৌলিক অধিকার কেড়ে নিচ্ছে।’’