অরবিন্দ কেজরীওয়াল। —ফাইল চিত্র।
রাজনৈতিক শত্রু থেকে বিজেপি বিরোধী জোটের শরিক— কংগ্রেস ও আম আদমি পার্টির সম্পর্কে এই বদল ঘটেছিল আগেই। এ বার অরবিন্দ কেজরীওয়ালের গ্রেফতারি কংগ্রেস ও আম আদমি পার্টির শীর্ষ নেতৃত্বকে আরও কাছাকাছি এনে দিল। এককালে গান্ধী পরিবারের সঙ্গে কেজরীওয়ালের সাপে-নেউলে সম্পর্ক ছিল। আর এখন খোদ রাহুল গান্ধী কেজরীওয়ালের পরিবারের সঙ্গে দেখা করার কথা ভাবছেন।
২০১৪ সালে অণ্ণা হজারে ও অরবিন্দ কেজরীওয়ালের দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলন মনমোহন সরকারের পতন ডেকে এনেছিল বলে কংগ্রেসের নেতারা মনে করেন। ২০১৩-র শেষে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী পদে শীলা দীক্ষিতকে সরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হন কেজরীওয়াল। সেই ভোটে শীলার বিরুদ্ধে মন্তব্যের জন্য এখনও কংগ্রেস নেতারা কেজরীওয়ালকে ক্ষমা করতে পারেন না। তাঁদের অনেকেরই মতে, বিজেপি-আরএসএসের মদতেই কংগ্রেসের বিরুদ্ধে দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলেন অণ্ণা ও কেজরী। দশ বছর পরে এখন দুর্নীতির মামলায় কেজরীওয়াল ইডি-র হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। আম আদমি পার্টির আঙুল উঠেছে বিজেপির প্রতিহিংসার রাজনীতির দিকে। আর কেজরীর পাশে দাঁড়িয়েছে গোটা কংগ্রেস।
তবে রাজনৈতিক শিবির একে কংগ্রেস ও আম আদমি পার্টির সম্পর্কের ‘উলটপুরাণ’ হিসেবে দেখছে। বিজেপি নেতারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, যে আবগারি দুর্নীতির মামলায় কেজরীওয়ালকে গ্রেফতার করা হয়েছে, সেই দুর্নীতির অভিযোগ প্রথম জানিয়ে দিল্লির পুলিশ কমিশনারকে চিঠি লিখেছিলেন দিল্লি প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি অনিল চৌধরিই। কিন্তু বর্তমান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অরবিন্দর সিংহ লাভলি বলেছেন, ‘‘আম আদমি পার্টির পাশে আমরা দৃঢ় ভাবে রয়েছি।’’
কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি এমনিতেই কেজরীওয়ালের হয়ে মামলা লড়ছেন। প্রয়োজনে কংগ্রেসের তরফ থেকে আইনি সাহায্য করা হবে কেজরীওয়ালকে। যা থেকে স্পষ্ট, গান্ধী পরিবার কেজরীওয়ালকে ‘ক্ষমা’ করে দিয়েছে এবং রাজনৈতিক বাস্তবতা বুঝে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে স্থায়ী বন্ধু তৈরি করতে চাইছে। যে কারণে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কেজরীওয়ালকে গ্রেফতারির পরেই রাহুল, প্রিয়ঙ্কা দু’জনেই তার নিন্দা করে, নরেন্দ্র মোদীকে ‘স্বৈরাচারী’ বলে আক্রমণ করেছেন।
দু’বছর আগে ইডি ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় রাহুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। সে সময় বাকি সব দল এর নিন্দা করলেও আপ ছিল নীরব। এ নিয়ে প্রশ্নও তুলেছিল কংগ্রেস। তবে তারপরে আম আদমি পার্টি বিজেপির বিরুদ্ধে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চে যোগ দেয়। মোদী পদবি নিয়ে মানহানির মামলায় রাহুলের সাংসদ পদ খারিজের বিরুদ্ধে কেজরীওয়াল সরব হন। রাজনৈতিক নেতারা মনে করছেন, কংগ্রেস ও আম আদমি পার্টি এখন নিজেদের স্বার্থেই কৌশলে এগোতে চাইছে। তাই দিল্লিতে দুই দল আসন সমঝোতা করে ভোটে নামছে। আবার পঞ্জাবে আসন সমঝোতা না হলেও চণ্ডীগড়ে মেয়র নির্বাচনে দুই দল হাত মিলিয়েছে।