—প্রতীকী ছবি।
অরুণাচল নিয়ে ফের উত্তপ্ত ভারত-চিন সম্পর্ক। তার আঁচ পড়ছে ভোটের বাজারেও। অরুণাচলের বিভিন্ন এলাকার নাম চিন বদলে দেওয়ার প্রতিবাদে ভারত যা বলেছে, তাকে ‘দুর্বল প্রতিক্রিয়া’ বলে আসরে নামল কংগ্রেস। প্রধান বিরোধী দলের দাবি, শ্রীলঙ্কার কচ্ছথিবু নিয়ে সুর চড়াতে আটকায়নি বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের। কিন্তু চিনকে কিছু বলতে কম্পিত হৃদয় তাঁর।
সম্প্রতি অরুণাচল প্রদেশের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর ৩০টি এলাকার নতুন নামকরণ করে চতুর্থ তালিকা প্রকাশ করেছে চিন। অরুণাচল প্রদেশকে ‘জাঙ্গান’ নাম দিয়েছে তারা। এই ‘জাঙ্গান’কে দক্ষিণ তিব্বতের অংশ হিসেবে দাবি করে বেজিং। চিনা সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমস-এ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ওখানে আরও ৩০টি এলাকার নাম দিয়েছে চিনা সরকার। এর জবাবে গুজরাত চেম্বার অব কমার্স-এর একটি অনুষ্ঠানে বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর বলেন, “আজ যদি আমি আপনার বাড়ির নাম বদলে দিই, তা হলে কি সেই বাড়িটা আমার হয়ে যাবে? ঠিক সে রকম ভাবেই অরুণাচল প্রদেশ আগেও ভারতের রাজ্য ছিল, এখনও রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও সেটাই থাকবে। নাম পরিবর্তন করে কিছু হবে না।”
এর পর আরও যে ভারতীয় অঞ্চলগুলির নতুন নামকরণ করেছে চিন, এই সংক্রান্ত প্রশ্ন করা হয়েছিল জয়শঙ্করকে। তার জবাবে তিনি বলেন যে, “আমাদের সেনাবাহিনী সেখানে (প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা) মোতায়েন রয়েছে।” এর আগেও বিদেশমন্ত্রীকে এই বিষয়ে বলতে শোনা গিয়েছে যে, “চিন বরাবরই এই দাবি করে আসছে। এই দাবি শুরু থেকেই হাস্যকর ছিল, আজও সেটাই রয়েছে। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন যে, গোটা বিষয়টা সীমান্ত সংক্রান্ত আলোচনার অংশ।”
মঙ্গলবার বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়ালও বিবৃতি দিয়ে বলেন, ‘‘চিন তাদের ভিত্তিহীন চেষ্টার মাধ্যমে ভারতীয় রাজ্য অরুণাচল প্রদেশের এলাকার নাম পাল্টে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। আমরা এমন প্রচেষ্টার তীব্র নিন্দা জানাই। অরুণাচল প্রদেশ সব সময়ই ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল।’’ এর আগে ২৮ মার্চ ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, চিন ভিত্তিহীন দাবি করলেও কিছু পরিবর্তন হবে না।
এর পরে আজ সাংবাদিক সম্মেলন করে কংগ্রেস সাংসদ মণীশ তিওয়ারি অভিযোগ করেন, “বিদেশমন্ত্রী চিন নিয়ে যা বলেছেন তা খুবই অদ্ভুত। তিনি বলছেন, কারও ঘরের নাম বদলে দিলেই সেই ঘর নাকি বদলে যায় না! আমার বাড়ির সামনের নেমপ্লেট যদি বদলে দেওয়া হয়, তা হলে তো বিষয়টি ফৌজদারি মামলায় পরিণত হওয়ার কথা। আমরা বুঝতে পারছি না কেন এত দুর্বল প্রতিক্রিয়া জয়শঙ্কর দিলেন।” এর পর তিনি বলেন, “চিন অরুণাচল প্রদেশের বিভিন্ন জায়গার নাম বদলে দিচ্ছে! তার এত ম্রিয়মাণ জবাব দেওয়া ভারতের পক্ষে লজ্জাজনক। অথচ শ্রীলঙ্কার কচ্ছথিবু নিয়ে তারা জোর গলায় কথা বলছে। দুঃখের বিষয়, চিনের নাম বিজেপি সরকারের মুখে দিয়ে বেরোতেই চায় না। ভারত সরকার আসলে ভয় পায়। চিনা সেনা আমাদের জমিতে ঢুকে এসেছে, আমাদের সেনারা তাদের টহলদারির অধিকার হারিয়েছেন। অথচ চার বছর হতে চলল নয়াদিল্লির কোনও সাড়াশব্দ নেই।”
ভোটের আগে এই চাপানউতোরকে নির্বাচনের কৌশল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। নয়তো শ্রীলঙ্কা হোক বা চিন, মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া সরকারের বা বিরোধী দলের তরফে বিদেশনীতির চুলচেরা বিশ্লেষণের সময় এটা নয়। কিন্তু সেই সঙ্গে এটাও মনে করা হচ্ছে, লোকসভা ভোটের আগে চিনের প্রশ্নে অস্বস্তি কমছে না মোদী সরকারের। বারবার অরুণাচল নিয়ে বেজিংয়ের বিভিন্ন আগ্রাসী পদক্ষেপের প্রত্যুত্তর দিতে হচ্ছে। শুধু উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এই রাজ্যটিই নয়। পূর্ব লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর চিনা সেনার অনুপ্রবেশ এবং ভারতের মাটিতে থাবা গেড়ে বসে থাকার বিষয়টিও বিরোধীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছে।
রাজনৈতিক মহলের মতে, এখনও পর্যন্ত বিজেপি লোকসভা ভোট লড়ছে মোদীর উন্নয়নের গ্যারান্টি এবং হিন্দুত্বের জোড়া অস্ত্রে। পুলওয়ামার মতো ঘটনা নেই যেখানে ছাপান্ন ইঞ্চির শৌর্য এবং জাতীয়তাবাদকে সামনে আনা যায়। বরং মহাশক্তিধর চিনের সামনে বারবার একই কথার পুনরাবৃত্তি করতে হচ্ছে নয়াদিল্লিকে। যাকে কোনও ভাবেই এমন গর্জন বলা চলে না, যাতে দৃশ্যত সন্ত্রস্ত হয়ে রণে ভঙ্গ দেবে বেজিং।