প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল ছবি।
ভুল হয়েছিল তাঁর, মানলেন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী। কিন্তু নিট-কাণ্ডে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এখনও মুখ খুললেন না। ফলে বিরোধী নিশানায় তিনিই। ‘নীরব’ মোদীকে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীরআক্রমণ, ‘‘নরেন্দ্র মোদী চুপচাপ তামাশা দেখছেন।’’
কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান মাত্র আট দিন আগে জোরের সঙ্গে দাবি করেছিলেন, নিট পরীক্ষায় কোনও প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি। এখন জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত পরীক্ষার্থীরাই প্রশ্নপত্র পেয়ে গিয়েছিলেন বলে স্বীকার করায় আজ তিনি মেনে নিলেন, তাঁর গাফিলতি হয়েছিল। ধর্মেন্দ্র নিজেই বলেছেন, ‘‘আমার ভুল হয়ে গিয়েছিল। যা হয়েছে, তার দায় আমি নিচ্ছি।’’ এর পরেই আরও শানিত হয়েছে বিরোধী আক্রমণ। তাদের প্রশ্ন, নৈতিক দায় নিয়ে ধর্মেন্দ্র ইস্তফা দিচ্ছেন না কেন? নিট ও নেট-এর প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কেন চুপ করে রয়েছেন!
রাহুল আজ কটাক্ষ করেছেন মোদী মুখে কুলুপ এঁটে তামাশা দেখছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘নিট-এর হাজার হাজার পরীক্ষার্থী তাঁদের পরিবারের সঙ্গে এই ভয়ংকর গরমের মধ্যে রাস্তায় নেমেছেন। আর নরেন্দ্র মোদী চুপচাপ তামাশা দেখছেন।’’ সরব তৃণমূল কংগ্রেসও। রাজ্যসভায় দলের সাংসদ জহর সরকারের প্রশ্ন, ‘‘নিট পরীক্ষার এক মাস আগে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে গিয়েছিল। গ্রেফতার হওয়া পরীক্ষার্থী অনুরাগ যাদব নিজেই সে কথা জানিয়েছে। তা হলে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী কাকে বাঁচাতে চাইছিলেন?’’ সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির প্রশ্ন, ‘‘যদি কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী নৈতিক দায় নিয়ে থাকেন, তা হলে তাঁর পদত্যাগ করা উচিত। কিন্তু তিনি তাকরছেন না।’’
নিট বা নেট-এর প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে আজ কংগ্রেস গোটা দেশে বিজেপির দফতরের সামনে বা রাজ্যে রাজ্যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন থেকে সমাজবাদী পার্টির মতো অন্যান্য বিরোধী দলও রাস্তায় নেমেছে। বিক্ষোভ হয়েছেদিল্লি থেকে মোদীর লোকসভাকেন্দ্র বারাণসীতেও।
আগামী সপ্তাহ থেকে নতুন লোকসভার প্রথম অধিবেশ শুরু হচ্ছে। সেখানে বিরোধীরা যে সরকারের কাছে নিট ও নেট নিয়ে জবাবদিহি চাইবে তা আজ স্পষ্ট করে দিয়েছেন রাহুল। ২৪ লক্ষ নিট-পরীক্ষার্থী পড়ুয়াকে বার্তা দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘ভরসা রাখুন, সড়ক থেকে সংসদ পর্যন্ত ‘ইন্ডিয়া’ আপনাদের সঙ্গে রয়েছে।’’ গত কাল রাহুল ১০ জনপথে ১৫ জন নিট-পরীক্ষার্থীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন। সেই আলাপচারিতায় রাহুল বলেছেন, গত ৭ বছরে ৭০টি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। দু’কোটি পড়ুয়ার ক্ষতি হয়েছে। এখন রাজনৈতিক চাপের মুখে নিট পরীক্ষা নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট সক্রিয় হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রক নেট পরীক্ষা বাতিল করেছে।
এসএফআইয়ের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাসের মতে, নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি মেনে সমস্ত পরীক্ষার কেন্দ্রীয়করণের ফলেই সমস্যা তৈরি হচ্ছে। রাজ্যসভায় সিপিএম সাংসদ জন ব্রিট্টাস শিক্ষামন্ত্রীকে চিঠি লিখে দাবি করেছেন, রাজ্যগুলির হাতে পরীক্ষা নেওয়ার ভার ছেড়ে দেওয়া হোক। কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরমেরওমত, রাজ্যগুলি চাইলে এনটিএ (ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি)-র পরীক্ষা বেছে নিতে পারে। কিন্তু রাজ্যগুলির অধীন কলেজে ভর্তির জন্য তার নিজের মতো পরীক্ষা নেওয়ার ক্ষমতা থাকা উচিত।