মালেগাঁও নিয়ে কংগ্রেস-বিজেপি তরজা থামছে না। বরং যত দিন যাচ্ছে, বাদানুবাদ আরও জোরদার হচ্ছে। দু’দিন আগেই মালেগাঁও বিস্ফোরণ কাণ্ডে সাধ্বী প্রজ্ঞা সিংহ ঠাকুরকে ক্লিনচিট দিয়েছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। প্রজ্ঞাকে ছাড় দেওয়ার পরপরই বিজেপিকে আক্রমণ শুরু করেছিল কংগ্রেস। তারা চায় বাকি তদন্ত হোক সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে— সাংবাদিকদের এ কথা জানান কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মা। বিষয়টিতে অবিলম্বে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হস্তক্ষেপও চেয়েছে তারা।
গত শুক্রবার এনআইএ আদালতে একটি রিপোর্ট জমা দিয়ে জানায়, সাধ্বী প্রজ্ঞা ও আরও পাঁচ জনের বিরুদ্ধে মালেগাঁও বিস্ফোরণে জড়িত থাকার কোনও প্রমাণ তাদের কাছে নেই। বাকি দশ অভিযুক্তের বিরুদ্ধেও মকোকা আইন প্রয়োগ করে তদন্ত হবে না বলে জানিয়েছিল এনআইএ। এর পরই মাঠে নামে কংগ্রেস। তারা সরাসরি অভিযোগ তোলে বিজেপির প্রশ্রয়েই মালেগাঁও কাণ্ডে অভিযুক্তদের অপেক্ষাকৃত লঘু ধারা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে এনআইএ। আজ আনন্দ শর্মা তো প্রধানমন্ত্রীকেও বিঁধতে ছাড়েননি। শর্মা বলেছেন, ‘‘ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেটিং এজেন্সি (এনআইএ) এখন নমো ইনভেস্টিগেটিং এজেন্সিতে পরিণত হয়েছে।’’
আনন্দ শর্মার বক্তব্য, এনআইএ-র এই রিপোর্ট গোটা দেশের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার মানসিকতার উপর একটা বড় ধাক্কা। সেই সঙ্গেই তাঁর সংযোজন, ‘‘আমাদের এখন বোঝানো হচ্ছে, কংগ্রেসের আমলে যা যা তদন্ত হয়েছে তার কোনও ভিত্তি নেই। অথচ আমরা কিন্তু যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে তদন্তটা করেছিলাম। আমরা এখনও বিশ্বাস করি সন্ত্রাসের কোনও ধর্ম হয় না।’’ কংগ্রেসের সুরে সুর মিলিয়ে বিজেপিকে আজ একই ভাবে আক্রমণ করেছে আপ। তাদেরও বক্তব্য, বিজেপি-ঘনিষ্ঠ সঙ্ঘ নেতা-নেত্রীদের রেহাই দেওয়ার জন্য এখন কার্যত এনআইএকে চালাচ্ছে কেন্দ্র। এনআইএ-র ডিজি শরদ কুমারের বর্ধিত মেয়াদ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস-আপ। তাদের বক্তব্য, এর পরে সমঝোতা বিস্ফোরণ তদন্তের পরিণতিও একই হতে চলেছে।
দিল্লির সাংবাদিক বৈঠকে কংগ্রেস আজ ফের নিহত এটিএস প্রধান হেমন্ত কারকারের প্রসঙ্গ তুলেছে। তারা বলেছে, ‘‘হেডলির মতো এক জঙ্গির বয়ান শুনে কংগ্রেসকে আক্রমণ করতে পিছপা হয়নি বিজেপি। অথচ হেমন্ত কারকারের মতো এক জন সত্যিকারের দেশভক্ত অফিসারের তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলতে বিজেপির কোথাও আটকাচ্ছে না।’’ এআইসিসি-র মুখপাত্র আরপিএন সিংহ আবার নিশানা করেছেন এই মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত কর্নেল পিএস পুরোহিতকে। কর্নেল পুরোহিতকে ফাঁসানো হয়েছে বলে দু’দিন আগেই দাবি করেছে এনআইএ। কিন্তু আরপিএন সিংহ আজ কর্নেলের লেখা একটি চিঠি নিয়ে আক্রমণ শানিয়েছেন। সম্প্রতি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালকে চিঠি লিখে এই মামলায় তাঁর হস্তক্ষেপের দাবি করেছিলেন পুরোহিত। সেই চিঠি ডোভাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককেও পাঠিয়েছিলেন। কংগ্রেসের প্রশ্ন, ‘‘কোনও জঙ্গি কি কখনও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে চিঠি লেখে? এর আগে কখনও এমন হয়েছে?’’
কংগ্রেসের বক্তব্য, সরকারের সঙ্গে এনআইএ-র যোগসাজশের ফলেই এই অভিযোগ থেকে মুক্তি পেয়ে গেলেন প্রজ্ঞা-সহ ছ’জন। বিজেপির মুখপাত্র নলিন কোহলি অবশ্য সব অভিযোগ উড়িয়ে জানিয়েছেন, এনআইএ একটি স্বাধীন সংস্থা। তাদের কাজে কেন্দ্র কোনও ভাবেই হস্তক্ষেপ করছে না।