Puducherry

পুদুচেরিও হাতছাড়া হল কংগ্রেসের, আস্থাভোটে হেরে ‘অপারেশন পদ্ম’কে দুষলেন নারায়ণস্বামী

কংগ্রেসের জন্য পুদুচেরিতে বিপদের ঘণ্টা আগেই বেজে গিয়েছিল। প্রাক্তন উপরাজ্যপাল কিরণ বেদীর সঙ্গে সঙ্ঘাত চলছিল নারায়ণস্বামী সরকারের।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

পুদুচেরি শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৩:৩১
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

বিধানসভা নির্বাচনের মাস তিনেক বাকি। তার আগেই কংগ্রেসের হাতছাড়া হল পুদুচেরি। সোমবার বিধানসভায় আস্থাভোটে হেরে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী ভি নারায়ণস্বামী। বিধানসভায় আস্থাভোটের ফল সামনে আসার পরই কয়েক জন মন্ত্রীকে নিয়ে উপরাজ্যপাল তামিলিসাই সৌন্দরাজনের কাছে গিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। তার আগে ‘সুবিধাবাদী নেতাদের মানুষ ক্ষমা করবেন না’ বলে জানিয়ে যান বিধানসভায়।

Advertisement

কেন্দ্রশাসিত পুদুচেরি বিধানসভার মোট আসন সংখ্যা ৩৩। কিন্তু ২০২০ সালের জুলাই থেকে রবিবার রাত পর্যন্ত একের পর এক বিধায়কের পদত্যাগের পর মোট আসনসংখ্যা কমে ২৬ হয়। সে ক্ষেত্রে সরকার টিকিয়ে রাখার জন্য ১৪টি আসনই যথেষ্ট ছিল। কিন্তু রবিবার কংগ্রেসের কে লক্ষ্মীনারায়ণন এবং ডিএমকে-র কে বেঙ্কটেশনও বিধায়ক পদ থেকে পদত্যাগ করেন। তার পর কংগ্রেস এবং ডিএমকে-র মিলিত আসনসংখ্যা এসে ঠেকে ১২-তে। সেই তুলনায় বিরোধী শিবির এনআর কংগ্রেস, এআইএডিএমকে এবং বিজেপি জোটের আসনসংখ্যা এখন ১৪। তাতেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় নারায়ণস্বামীর সরকার।

যদিও কংগ্রেসের জন্য পুদুচেরিতে বিপদের ঘণ্টা আগেই বেজে গিয়েছিল। বেশ কিছু দিন ধরেই প্রাক্তন উপরাজ্যপাল কিরণ বেদীর সঙ্গে সঙ্ঘাত চলছিল নারায়ণস্বামী সরকারের। কংগ্রেসের অভিযোগ ছিল, নির্বাচিত সরকারকে উপেক্ষা করে সমান্তরাল সরকার চালাচ্ছেন কিরণ। সাংবিধানিক পদে থেকে তিনি আসলে বিজেপি-র জমি মজবুত করার কাজ করছেন। যে কারণে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পেও বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন। পুদুচেরির দখল নিতে কংগ্রেস বিধায়কদের টাকার টোপ দেওয়ার পিছনেও কিরণের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিরোধীরা।

Advertisement

এর পর গত ১৬ ফেব্রুয়ারি উপরাজ্যপাল পদ থেকে কিরণকে অপসারণ করেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। মে মাসে সম্ভাব্য বিধানসভা নির্বাচনের আগে কিরণের অপসারণের পিছনে বড় ধরনের রাজনৈতিক চাল রয়েছে বলে সেই সময় দাবি করেছিলেন অনেকেই। কিন্তু কিরণের অপসারণকে সাধারণ মানুষের জয় বলে উল্লেখ করেছিলেন নারায়ণস্বামী। কিন্তু তার পর থেকেই একের পর এক বিধায়ক ইস্তফা দিতে শুরু করেন।

তবে এ দিন শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সরকার টিকিয়ে রাখা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন নারায়ণস্বামী। বিজেপি শিবির থেকে মনোনীত ৩ বিধায়ককে আস্থাভোটে অংশ নিতে দেওয়া চলবে না বলে স্পিকারের কাছে আর্জি জানান তিনি। কিন্তু এর আগে একটি রায়ে মনোনীত বিধায়কদের ভোটদানের অধিকার প্রদান করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। তাই বিজেপি থেকে বিধায়ক পদে মনোনীত নেতারাও এ দিন ভোট দেন। তাতেই নারায়ণস্বামীর সরকার মুখ থুবড়ে পড়ে।

পদত্যাগের পর ইতিমধ্যেই বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন কংগ্রেসের ২ নেতা। বাকিরাও খুব শীঘ্র পদ্ম শিবিরে নাম লেখাতে চলেছেন বলে জানা গিয়েছে। তাই বিজেপি পুদুচেরিতেও ‘অপারেশন পদ্ম’ চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন নারায়াণস্বামী। তাতে ইন্ধন জুগিয়েছে বিজেপি-র আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্যর একটি টুইট। এ দিন নায়ারণস্বামীর সরকার পড়ে যাওয়ার পর কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গাঁধীকে টুইটারে কটাক্ষ করেন তিনি। লেখেন, ‘রাহুল গাঁধী পুদুচেরি গিয়েছিলেন সম্প্রতি। ওঁর ছোঁয়া লেগেই রাজ্যে কংগ্রেসের সরকার পড়ে গেল’!

শুধু তাই নয়, পঞ্জাব, রাজস্থান এবং ছত্তীসগঢ়েও কংগ্রেসের অস্তিত্ব মুছে যাওয়া এখন সময়ের অপেক্ষা বলেও কটাক্ষ করেন তিনি। মালব্য লেখেন, ‘পুদুচেরিতে সরকার পড়ে যাওয়ার পর পঞ্জাব, রাজস্থান এবং ছত্তীসগঢ়ে কংগ্রেসের অস্তিত্বও প্রায় মুছে এসেছে। ঝাড়খণ্ড এবং মহারাষ্ট্রেও খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে তারা। রাহুল গাঁধীর মুকুটে আরও পালক যোগ হওয়া এখন সময়ের অপেক্ষা। এমন কৃতিত্ব আর কোনও গাঁধীর নেই’।

তবে নারায়ণস্বামীর সরকার পড়ে গেলেও এখনই বিরোধী জোটকে সরকার গড়ার জন্য উপরাজ্যপাল আহ্বান জানাবেন নাকি বিধানসভা নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত পুদুচেরিতে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি থাকবে, তা এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট নয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement