তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
রাহুল গান্ধী এত দিন ধরে বলেছিলেন, কংগ্রেস বাকি বিরোধী দলের থেকে আলাদা। কারণ কংগ্রেসের কাছেই একমাত্র বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মতাদর্শ রয়েছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ‘কংগ্রেসের মতাদর্শ’ নিয়ে প্রশ্ন তুলে আসলে রাহুল গান্ধীর সেই তত্ত্বকেই নিশানা করেছেন বলে কংগ্রেস নেতৃত্ব মনে করছেন।
কংগ্রেস নেতৃত্বের মতে, তৃণমূল কংগ্রেস অনেক দিন ধরেই একইসঙ্গে দুই নৌকোয় পা দেওয়ার নীতি নিয়ে চলছে। মাঝে মাঝে তৃণমূল বিরোধী শিবিরের সঙ্গে এক ছাতার তলায় আসছে। আবার পরক্ষণেই বিরোধী শিবিরে কংগ্রেসের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে, আম আদমি পার্টির মতো কিছু বিরোধী দলকে নিজেদের দিকে টেনে বিরোধী শিবিরে ফাটল তৈরি করছে। তাতে আখেরে বিজেপিরই সুবিধা হয়ে যাচ্ছে। তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সিবিআই-ইডির তদন্তের ভয়েই তৃণমূলকে এই কৌশল নিয়ে চলতে হচ্ছে বলে কংগ্রেস নেতৃত্বের মত। যদিও এখন কংগ্রেসের তরফে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে মুখ খোলা হবে কি না, তা নিয়ে কংগ্রেসের মধ্যেই দ্বিধা রয়েছে। কারণ কংগ্রেসের একাংশ মনে করছে, মেঘালয়ের মতো রাজ্যে নির্বাচনের পরে কংগ্রেস, তৃণমূলের হাত মেলানোর দরকার হতে পারে। অভিষেক নিজেই সেই রাস্তা খোলার রাখা কথা বলেছেন।
উদয়পুরের চিন্তন শিবির থেকে ভারত জোড়ো যাত্রায় রাহুল গান্ধী বারবার বলেছেন, কংগ্রেসই একমাত্র বিজেপিকে হারাতে পারে। কারণ কংগ্রেসের কাছে সেই মতাদর্শ ও জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। রাহুল অবশ্য বিরোধী জোটের পক্ষেও সওয়াল করেছিলেন। কিন্তু সেই জোটের নেতৃত্ব যে কংগ্রেসের হাতেই থাকা উচিত সেটাই বুঝিয়েছেন। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় শুক্রবার ‘কংগ্রেসের আদর্শটা ঠিক কী, সেটাই লাখ টাকার প্রশ্ন’ বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘‘কেরলে কংগ্রেস সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়ছে। ত্রিপুরায় সেই সিপিএমের সঙ্গেই জোট করেছে।’’
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী তৃণমূল-বিজেপির পুরনো জোটের কথা মনে করিয়ে দিলেও জাতীয় স্তরের নেতারা এ নিয়ে মুখ খুলতে চাননি। এআইসিসি-র এক নেতা বলেন, ‘‘তৃণমূলের আদর্শ বা রণকৌশল কী, সেটাও লাখ টাকার প্রশ্ন। কারণ তৃণমূল মুখে বিজেপির বিরোধিতা করে। কিন্তু উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জগদীপ ধনখড়ের বিরুদ্ধে ভোট দিতে চায় না। আদানি-কাণ্ডে সবাই যখন শুধুমাত্র জেপিসি-র দাবি করে, তখন তৃণমূল সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে তদন্তের বিকল্পও খোলা রাখে। যা হলে সরকারের সুবিধা।’’
উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির ভারপ্রাপ্ত এক কংগ্রেস নেতার মতে, অভিষেক মেঘালয়ে বসে এক দিকে কংগ্রেসের মতাদর্শ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আবার মেঘালয়ে ভোটের পরে কংগ্রেস প্রস্তাব দিলে তৃণমূলের হাত মেলাতেও আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মেঘালয়ে ত্রিশঙ্কু বিধানসভা হলে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করতে তৃণমূলের আপত্তি নেই। বোঝাই যাচ্ছে, অভিষেককেও তাঁর রণকৌশল ও রাজনৈতিক বাস্তবতার মধ্যে ভারসাম্য রেখে চলতে হচ্ছে।