অর্ডিনান্স বিতর্কে কেজরীর পাশে থাকবে কি কংগ্রেস? এই প্রশ্নেই তোলপাড় রাজধানী দিল্লি। — ফাইল ছবি।
অর্ডিন্যান্স বিতর্কে কেজরীওয়াল কি কংগ্রেসকে পাশে পাবেন? এই প্রশ্নের উত্তর এখনও অধরা। কিন্তু ঘটনা পরম্পরা বলছে, কংগ্রেসকে পাশে পেতে যথেষ্টই ঘাম ঝরাতে হচ্ছে আম আদমি পার্টিকে। সূত্রের খবর, দিল্লি কংগ্রেসের নেতারা কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে এবং নেতা রাহুল গান্ধীর সঙ্গে দেখা করে জানিয়ে এসেছেন, আপকে সমর্থন দেওয়ার কথা যেন বিবেচনায় না আনা হয়। তবে তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার হল, পরে সেই নেতারাই জানিয়ে দিয়েছেন, হাই কম্যান্ড যা সিদ্ধান্ত নেবে, তা-ই মেনে চলবেন। অর্থাৎ, বল এ বার কংগ্রেস হাই কম্যান্ডের কোর্টে।
রাজধানী দিল্লিতে কর্মরত আমলাদের নিয়ন্ত্রণের ভার থাকবে কার হাতে? এই প্রশ্নেই এখন তোলপাড় দিল্লি-সহ দেশ। সুপ্রিম কোর্ট আমলাদের নিয়ন্ত্রণের ভার দিল্লি সরকারের হাতে দিয়েছিল। কিন্তু রাতারাতি অর্ডিন্যান্স এনে সেই রায় খারিজ করে কেন্দ্রের মোদী সরকার। আমলা নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে তৈরি করার প্রস্তাব দেওয়া হয় একটি পৃথক প্যানেল। একে গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ বলে তুলে ধরে সমস্ত বিজেপি বিরোধী দলের কাছে যাচ্ছেন কেজরীওয়াল। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার, মহারাষ্ট্রের নেতা শরদ পওয়ার, উদ্ধব ঠাকর ইতিমধ্যেই কেজরীওয়ালের পাশে থাকার কথা জানিয়ে দিয়েছেন। এ বার কেজরীওয়ালের লক্ষ্য দেশের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের সমর্থন আদায়। কিন্তু তা করতে গিয়েই সমস্যা বাড়ছে কেজরীর সামনে।
দেশ জুড়ে বিজেপি বিরোধী জোট তৈরির ক্ষেত্রে কংগ্রেসের উৎসাহ যথেষ্ট। কিন্তু দিল্লির পরিস্থিতি ভিন্ন। সেখানে ক্ষমতাসীন আপের বিরুদ্ধেই জনমত তৈরিতে ব্যস্ত কংগ্রেস। দিল্লি কংগ্রেসের নেতাদের একাংশের আশঙ্কা, এই অবস্থায় অর্ডিন্যান্স বিতর্কে কংগ্রেস আপকে সমর্থন করলে তার প্রভাব পড়বে দিল্লিতে কংগ্রেসের ভাঙাচোরা সংগঠনেও। ফলে স্বতন্ত্র অস্তিত্ব ধরে রাখাই সমস্যা হয়ে যাবে কংগ্রেসের। শনিবারই দিল্লি প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অনিল চৌধারি জানিয়েছেন, আপ যে হেতু বিভিন্ন সময় বিজেপির প্রশংসা করেছে তাই কংগ্রেসের তাকে সমর্থন দেওয়া নীতিগত ভাবে ঠিক নয়। একই কথা শোনা গিয়েছে, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা দিল্লি বিজেপির নেতা অজয় মাকেনের মুখেও। তাঁর বক্তব্য ছিল, জম্মু-কাশ্মীরের উপর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার নিয়ে আপ বিজেপিকে সমর্থন করেছিল। তাই এ ক্ষেত্রেও আপকে সমর্থন করা কংগ্রেসের ঠিক হবে না।
এই প্রেক্ষিতেই দিল্লি কংগ্রেসের নেতারা দলবেঁধে গিয়েছিলেন সভাপতি খড়্গের বাড়িতে। সেখানে খড়্গেকে দিল্লির নেতারা নিজেদের আপত্তির কথা জানিয়েছেন। সূত্রের খবর, সবটাই শুনেছেন খড়্গে। একই কথা প্রযোজ্য রাহুলের ক্ষেত্রেও। সভাপতির সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে আসার পর দিল্লি কংগ্রেসের নেতারা জানিয়েছেন, তাঁরা নিজেদের মত সভাপতি এবং রাহুলকে জানিয়েছেন। এর পর কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, তা কংগ্রেস হাই কম্যান্ড স্থির করবে।
এই প্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠছে, কংগ্রেস যদি শেষ পর্যন্ত আপের পাশে থেকে সংসদে অর্ডিন্যান্সের বিরুদ্ধে ভোট দেয় তা হলে তার কী প্রভাব পড়বে দিল্লি কংগ্রেসে? রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের দাবি, খড়্গে, রাহুল যদি কেজরীর পাশে থাকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন, তাহলে তা নেওয়া হবে সর্বভারতীয় প্রেক্ষাপটে বিরোধী ঐক্যের প্রশ্নেই। সে ক্ষেত্রে দিল্লি কংগ্রেসের নেতাদের যুক্তি ধোপে টিকবে না বলাই বাহুল্য। সম্ভবত তা আঁচ করতে পেরেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার হাই কম্যান্ডের উপর ছেড়েছেন দিল্লি কংগ্রেসের নেতারা।