Rahul Gandhi

সভাপতি পদ ছাড়ায় রাহুল-বন্দনা কংগ্রেসে

একই সঙ্গে গান্ধী পরিবারের বাইরের কাউকে সভাপতি পদে বসিয়ে বিক্ষুব্ধ নেতাদের জি-২৩ গোষ্ঠীর বিদ্রোহেও পাকাপাকি ভাবে ইতি টেনে দিতে চাইছেন কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৮:৩৯
Share:

রাহুল গান্ধী। ফাইল চিত্র।

আঠারো বছর আগে ইউপিএ সরকার গঠনের সময় সনিয়া গান্ধীর সামনে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ এলেও তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণ করেননি। সেই সিদ্ধান্তে দলের মধ্যে সনিয়ার মর্যাদা বহুগুণ বেড়েছিল।

Advertisement

এ বার রাহুল গান্ধী নিজে ফের কংগ্রেস সভাপতি হওয়ার বদলে গান্ধী পরিবারের বাইরের কারও জন্য দলের শীর্ষপদ ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় রাহুলকেও একই ভাবে ‘মহান’ হিসেবে তুলে ধরার প্রক্রিয়া শুরু হল। গান্ধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ নেতারা দলের মধ্যে বলতে শুরু করেছেন, সাধারণ ব্যক্তির পক্ষে এই কাজ সম্ভব ছিল না। মা ও নেহরু-গান্ধী পরিবার থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া আদর্শের জন্যই রাহুল এই কাজ করতে পেরেছেন। একই সঙ্গে গান্ধী পরিবারের বাইরের কাউকে সভাপতি পদে বসিয়ে বিক্ষুব্ধ নেতাদের জি-২৩ গোষ্ঠীর বিদ্রোহেও পাকাপাকি ভাবে ইতি টেনে দিতে চাইছেন কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব।

রাহুলকে ফের সভাপতি পদে চেয়ে একের পর এক রাজ্যের প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির বৈঠকে প্রস্তাব পাশ হয়েছে। রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত আজ কোচিতে রাহুলের সঙ্গে বৈঠকের পর বলেন, ‘‘আমি রাহুলকে আবার অনুরোধ করেছিলাম যে, যখন প্রদেশ কংগ্রেস কমিটিগুলি প্রস্তাব পাশ করেছে, তখন আপনার সভাপতি হওয়া উচিত। কিন্তু ওঁর বক্তব্য, উনি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন যে এ বার গান্ধী পরিবারের কেউ প্রার্থী হবেন না।’’

Advertisement

এর পর থেকেই কংগ্রেসের মধ্যে রাহুলকে মহান হিসেবে তুলে ধরার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। মধ্যপ্রদেশ কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি জিতু পাটোয়ারির যুক্তি, রাহুল দেখিয়ে দিলেন, গান্ধী পরিবারের কাছে পদের কোনও গুরুত্ব নেই। অনেক বড় মন হলেই এই কাজ করা সম্ভব। যেখানে পদের জন্য রাজনীতিকেরা মারামারি করেন, সেখানে গান্ধী পরিবারের সদস্যেরা ত্যাগের উদাহরণ তুলে ধরছেন। পাটোয়ারির বক্তব্য, ‘‘এই কারণেই গান্ধী পরিবারের প্রতি মানুষের মনে শ্রদ্ধা রয়েছে।’’

জি-২৩ গোষ্ঠীর অন্যতম বিক্ষুব্ধ নেতা পৃথ্বীরাজ চহ্বাণও আজ রাহুলের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, ‘‘রাহুল যদি আজকেও সভাপতি নির্বাচনে লড়তে চান, আমরা ওঁকে স্বাগত জানাব। কিন্তু উনি লড়বেন না বলে আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে‌ ফেলেছেন। আমি জানি না কেন, অনেকে একে ভাঁওতা ভাবছিলেন।’’

চহ্বাণ একই সঙ্গে জানিয়েছেন, তাঁদের প্রধান দাবি ছিল, পূর্ণ সময়ের সভাপতি এবং সাংগঠনিক নির্বাচন। সনিয়া গান্ধী দুই দাবিই মেনে নিয়েছেন। এর পরে আর ক্ষোভের কোনও কারণ থাকছে না। কংগ্রেস নেতৃত্বের তরফ থেকেও জি-২৩ নেতাদের দলের মূলস্রোতে টানার চেষ্টা শুরু হয়েছে। শনিবার কংগ্রেসের মঞ্চে বিক্ষুব্ধ নেতা শীলা দীক্ষিতের পুত্র সন্দীপ দীক্ষিতকে সাংবাদিক সম্মেলন করতে ডাকা হয়েছে।

ইউপিএ জমানায় সনিয়া প্রধানমন্ত্রী না হলেও মনমোহন সরকারের চাবিকাঠি তাঁর হাতেই থাকত বলে অভিযোগ উঠেছিল। একই ভাবে রাহুল সভাপতি না হলেও তাঁর হাতেই দলের ‘রিমোট কন্ট্রোল’ থাকবে কি না, তা নিয়েও অনেকে সংশয় প্রকাশ করেছেন।মুম্বইয়ের কংগ্রেস নেতা সঞ্জয় নিরুপম বলেন, ‘‘সমালোচকদের অজুহাত দরকার। রাহুল সভাপতি হলে পরিবারতন্ত্র বলা হত। অশোক গহলৌত সভাপতি হলে প্রশ্ন করা হবে, রিমোট কন্ট্রোল কার হাতে? এই কারণেই সমালোচকদের তোয়াক্কা করা উচিত নয়।’’

পৃথ্বীরাজ চহ্বাণের মতে, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচনের দায়িত্বও কংগ্রেস সভাপতির উপরে ছেড়ে না দিয়ে সেখানে নির্বাচন হওয়া দরকার ছিল। যিনি কংগ্রেস সভাপতি হবেন, তাঁকে পুরো সময় দিতে হবে। সকলের সঙ্গে দেখা করতে হবে। অশোক গহলৌত কংগ্রেস সভাপতি পদে থেকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ ধরে রাখলেও তাঁরা আপত্তি করতেন।

গহলৌত অবশ্য জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি ছাড়ছেন। সেই কুর্সি কার কাছে যাবে, সেটাই এখন প্রশ্ন। রাজস্থানের বিধায়কদের ২৭ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে ডাকা হতে পারে। আজ সচিন পাইলট জয়পুরে গিয়ে বিধায়কদের সঙ্গে দেখা করেছেন। উল্টো দিকে গোবিন্দ সিংহ ডোতাসরার মতো নিজের অনুগামীদের মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসাতে চাইছেন গহলৌত। গহলৌত-পাইলট বিবাদ মেটাতে এক সময় এআইসিসি-তে পশ্চিমবঙ্গের ভারপ্রাপ্ত নেতা সি পি জোশীর নাম রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে জল্পনায় উঠে এসেছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement